আসুন প্রবীণদের প্রতি সদয় হই
প্রবীণদের প্রতি যত্নশীল হই |
আজ সারা বিশ্বে পালিত ৩৪তম ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য: বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’।
১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্তের আলোকে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ১৯৯১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগেও সমাজে প্রবীণদের অবস্থান ছিল সম্মান ও শ্রদ্ধা্র। উন্নত
প্রযুক্তির ভর যখন আমাদের উপর প্রবল্ভাবে প্রভাব বিস্তার করেনি তখন সারাদিনের ক্লান্তির
পর সন্ধ্যার আড্ডায় প্রবীণদের দাপট ছিল চোখে পরার মতো। মানুষ তখন প্রবীণদের আনুগত্য
ছিল। যে কোন প্রয়োজনে বিচক্ষন ও চৌকস প্রবীণদের কাছ থেকে বুদ্ধি, পরামর্শ ও তাদের জীবন
অভিজ্ঞতা নিয়ে পথ চলতো। সমাজে প্রবীণদের স্থান ছিল উপদেষ্টার মতো। অথচ কালের পরিবর্তনের
সাথে সাথে আমরা আধুনিকতায় গা ভাসিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত প্রবীণদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে
গেছি। আমরা হারিয়ে ফেলছি তাদের আশীর্বাদ। তাদের করে ফেলেছি পরিবার ও সমাজ থেকে বিছিন্ন।
বর্তমানে প্রবীণরাই পরিবার ও সমাজে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। ন্যূনতম মৌলিক সুবিধা
থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন প্রবীণেরা। আমাদের নবীন প্রজন্ম পারিপার্শ্বিকতার সাথে এতটাই ব্যস্ত যে প্রবীণদের জন্য আমাদের সময় খুবই কম। ফলে নিঃসঙ্গ ও একাকীত্বে ভুগছে আমাদের প্রবীণ প্রজন্ম। আমরা অনেক সময়
প্রবীণদেরকে পরিবারের বোঝা মনে করি। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দিনদিন
বেড়ে চলছে। বেশিভাগ বৃদ্ধাশ্রমে উচ্চবিত্ত পরিবারের বাবা-মায়েরা থাকেন। যাদের কোন আর্থিক
অভাব নেই তবে অভাব রয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সম্মান ও ভালবাসার।
প্রত্যেকটি বাবামা অক্লান্ত পরিশ্রম করে জীবনের শেষ সম্বল খরচ করে সন্তানদের বড় করে তুলেন। ভাল খাবার, সুন্দর পোশাক, সুচিকিৎসা, উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করানো এসবের পেছনেই তাদের সর্বস্ব ব্যয় করেন। অথচ বাবামায়ের কাছ থেকে সর্বসুবিধা ভোগ করে সন্তানেরাই এক সময় বাবামাকে অমর্যাদা ও অবহেলা করে। কেউ কেউ উন্নত জীবন যাপনের জন্য বাবামাকে একা ফেলে চলে যান উন্নত দেশে। আবার কেউ কেউ রেখা আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। অনেকে এক সাথে বসবাস করলেও পুষ্টিকর খাদ্য, চিকিৎসা সুবিধা, পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদাসহ বিভিন্ন বঞ্চনার শিকার হন।
মনে রাখতে হবে, প্রবীণ সদস্যগণ প্রত্যেকটি পরিবার ও সমাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
প্রবীণদের ত্যাগ আর ভালবাসার কল্যানেই নবীনদের যাত্রা সগম হয়। প্রত্যেক বাবামা চান বৃদ্ধ বয়সে
নাতিনাতনিদের সাথে হেসে খেলে সময়টা পার করতে। তাই প্রবীণদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা,
ভক্তি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রবীণদের
প্রতি আমাদের সদয় ও যত্নশীল হতে হবে। কারণ আজকের নবীনরাই আগামীকালের প্রবীণ।
No comments