Header Ads

The Power of the Tongue

কথার শক্তি


বছরের একটা শিশু সবে মাত্র প্রি-স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। প্রি-স্কুলের বড় সিস্টার লক্ষ্য করলেন শিশুটির ভাষা অন্যসব শিশুদের চেয়ে একটু আলাদা। শিশুটি কথা বলার সময় এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করে যেসব শব্দ কিছুটা সাহিত্যিক, যা সাধারনত কথা বলার সময় আমরা ব্যবহার করি না। যেমন, সিস্টার যখন প্রশ্ন করেন, আজ সকালে কে কয়টার সময় ঘর থেকে রওনা হয়েছ?

শিশুটি উত্তরে বলে, আমি সকাল ৭টার সময় যাত্রা শুরু করেছি। যদি বলা হয় তুমি দুটার মধ্যে কোনটা নেবে? শিশুটি বলে, আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ়! সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ক্লাসের সবাই যখন বলে মারামারি-চিল্লাচাল্লি, শিশুটি বলে বিবাদ, চিৎকার বা চেঁচামেচি। সবাই বলে খাবার পর, শিশুটি বলে আহারের পর। শিশুটি পড়াকে বলে পাঠ, দেরিকে বলে বিলম্ব, বইকে বলে পুস্তক, গাছকে বলে বৃক্ষ। ছোট্ট একটা শিশুর মুখে এ ধরনের কিছু শব্দ শুনার পর শিশুটির প্রতি সিস্টারের আলাদা একটা আগ্রহ জন্মায়। একদিন সিস্টার শিশুটির অভিভাবকদের ডাকলেন এবং কথা বলে জানতে পারলেন, শিশুটির বাবা একজন গণমাধ্যম কর্মী। বাড়িতে সময় পেলেই তিনি বিভিন্ন লেখক-কবি-সাহিত্যিক ভাষা বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার এবং আলোচনামুলক অনুষ্ঠান শুনেন ও দেখেন। শিশুটি অনেকটা সময় সেসব কথোপকথন শুনতে শুনতে বেড়ে উঠায় তার ভাষাটাও কিছুটা সাহিত্যিক হয়ে গেছে।

ছোট্ট একটা শিশুর ভাষায় কি এমন জাদু ছিল যে সিস্টার শিশুটির অভিভাবকদের ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন! এই জাদুই হচ্ছে শক্তি। মানুষের কথার মধ্যে ইতিবাচক নেতিবাচক দুটো শক্তিই বিদ্যমান থাকে। এই কথার শক্তি দিয়ে মানুষ মানুষকে কাছে টানে, আকর্ষণ করে। আবার কথা দিয়েই একজন মানুষ আরেকজনকে আঘাত করে, ঘৃণা করে, একজন আরেকজনের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে।   

ধরুন, আপনি যখন কাউকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান বা কোন ভাল কাজের প্রশংসা করেন তখন আপনার মধ্য থেকে অপর প্রান্তের ব্যক্তিটির মধ্যে ইতিবাচক শক্তি প্রবেশ করে। ব্যক্তিটি আনন্দ অনুভব করে, খুশি হয় এবং ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজ করার অনুপ্রেরণা পায়। আবার আপনি যখন কাউকে বকাঝকা করেন, গালি দেন, অভিশাপ দেন তখন আপনার ভেতর থেকে অপর প্রান্তের মানুষটির মধ্যে নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করে। তখন ব্যক্তিটি দুঃখ পায়, তার মন খারাপ হয় কিংবা রাগ করেন।   

আরও স্পষ্ট করে বললে, ধরুন আপনার কোন গাছে অনেক ফল ধরেছে। গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ একজন বলল, হায় হায় রে! কত্ত ফল ধরেছে রে! কিছুদিন পর গাছের ফলগুলো কোন কারণ ছাড়াই ঝড়ে পড়তে শুরু করল। আর তখন আপনি বলবেন, অমুকে সেদিন ফলগুলো দেখে অমুক কথা বলেছিল তাই এমন হয়েছে। আবার কোন কোন সময় ছোট শিশুদের বেলায়ও এমন হয়। কেউ একজন বলল, শিশুটি কি সুন্দর! ব্যাস, সন্ধ্যা থেকে শিশুটির জ্বর।  

গাছের ফল এবং ছোট শিশুদের ঘটনাগুলো কিন্তু আমরা কমবেশি সবাই বিশ্বাস করি। আমরা যদি নেতিবাচক কথার শক্তিকে বিশ্বাস করি তবে কথার ইতিবাচক শক্তিকেও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে এবং দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে হবে।

কথার শক্তি সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে, “বেপরোয়া কথা তলোয়ারের মত আঘাত করে, কিন্তু জ্ঞানীর কথা সুস্থ করে।“ (হিতোপদেশ ১২ অধ্যায় ১৮ পদ)

 

আপনি যখন কোন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যান, সেখানে গিয়ে কি আপনি আপনার নিজের অসুস্থতার কথা, আপনার চারপাশে আরও কত অসুস্থ মানুষ কিভাবে, কতদিন যাবত কষ্ট পাচ্ছে, মারা যাচ্ছে সেসবের কেচ্ছাকাহিনি শুরু করেন? অথবা প্রতিবেশির সমালোচনা, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির গল্প শোনান? যদি এসব করেন তাহলে রোগীটি আরও অসুস্থ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার কথায় কোন ইতিবাচক শক্তি নেই, সবই নেতিবাচক। আবার আপনি যদি রোগীকে সান্তনা দেন, সাহস দেন, অনুপ্রেরণা যোগান তাহলে রোগী অনেকটাই সুস্থবোধ করবে কেবলমাত্র আপনার ইতিবাচক কথার গুণে।  

এক্টু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন, আমাদের চারপাশে নেতিবাচক কথা দিয়ে অন্যের ক্ষতি করার মানুষ কিন্তু প্রচুর। মিথ্যা বলা হচ্ছে কথার সবচেয়ে বড় নেতিবাচক শক্তি। মিথ্যা সাক্ষ্য সম্পর্কে হিতোপদেশ ১৯ অধ্যায় ৯ পদে লেখা আছে,  

“মিথ্যা সাক্ষী শাস্তি পাবেই পাবে;

যে সাক্ষী মিথ্যা কথা বলে সে ধ্বংস হবে।“

আমাদের সমাজে অনেক নারী-পুরুষ রয়েছেন, যারা কোন ধরনের ডর-ভয় ছাড়াই অনর্গল মিথ্যা কথা বলেন এবং যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বুক ফুলিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। মিথ্যা কথা বলা এদের কাছে অনেকটা ডাল-ভাতের মতো।

“মুখের কথার উপর নির্ভর করে জীবন ও মৃত্যু; যারা উপযুক্ত কথা বলতে ভালবাসে তারা তার ফল লাভ করবে।“ (হিতোপদেশ ১৮ অধ্যায় ২১ পদ)

একটা মিথ্যা সাক্ষ্য একজন নির্দোষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আমরা হয়তো মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে সরাসরি অন্যের মৃত্যুর কারণ হই না তবে মানুষের জীবন ধ্বংস করে দেই। মানুষের বাঁচার ইচ্ছেটাকেই মেরে ফেলি। সমাজে আবার এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা সরাসরি স্পষ্ট করে মিথ্যা কথা বলেন না। তারা মিথ্যা কথাটাকেই একটু ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে বলেন। তাদের এই পেঁচিয়ে কথা বলার করণে অনেকের দাম্পত্য জীবনে সন্দেহের বীজ ঢুকেছে, সংসারে ফাটল ধরেছে, দুই পরিবারের সুসম্পর্ক নষ্ট হয়েছে, ভাইয়ে-ভাইয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ তৈরি হয়েছে।

আমরা বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক কথার জাদুতে মোহিত হয়ে সত্যকে অবিশ্বাস করি, অস্বীকার করি। আর তখন নেতিবাচক শক্তির জয় হয়। যখন নেতিবাচক শক্তির জয় হয় তখন সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, সমাজের শান্তি নষ্ট হয়। 

আমরা এখন ভাষার মাসে রয়েছি, একই সাথে চলছে প্রায়শ্চিত্তকাল। এখনই আমাদের চিন্তা করার সঠিক সময়, আমরা কিভাবে আমাদের এই কথাকে, ভাষাকে ব্যবহার করছি? এই জীবনে আমি আমার কথার নেতিবাচক শক্তি দিয়ে কতজনের ক্ষতি করেছি, কতজনের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছি, কতজনের সুসম্পর্ক নষ্ট করেছি? কতগুলো সাজানো গোছানো পরিবার ভেঙ্গে ফেলতে সহযোগিতা করেছি? যদি করে থাকি তবে সংশোধন হওয়ার এখনই সময়।

ঈশ্বর আপনাকে কথা বলার অসীম ক্ষমতা দিয়েছেন। সেই ঐশ্বরিক শক্তিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করুন। কথার শক্তি দিয়ে মানুষের উপকার করুন। আর যদি একান্তই উপকার করতে না পারেন তবে চুপ থাকুন তবুও কথার শক্তিকে অপব্যবহার করে মানুষের ক্ষতি করবেন না।  

মথি ১২ অধ্যায় ৩৬-৩৭ পদে লেখা আছে,

“মানুষ যত বেহিসেবী কথা বলেছে, তার জন্য তাকে সেই মহা বিচারের দিনে জবাবদিহি করতেই হবে। আসলে সেদিন আপনার মুখের কথাই আপনাকে ধার্মিক বলে প্রতিপন্ন করবে, আপনার মুখের কথাই আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করবে।"

আরও লেখা পড়তে ক্লিক করুন

এক অন্ধ শিশুর বড়দিন 

মানবতা এখনো বেঁচে আছে 

আপনি কি খ্রিষ্টান? 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.