Header Ads

Shroud of Turine

 এইটি কি সত্যি যীশুর কাফনের কাপড়?

  




ইতালির তুরিন নগরের সেইন্ট জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট গির্জায় সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে শারীরিকভাবে অবর্ণনীয় আঘাতপ্রাপ্ত ক্রুশবিদ্ধ একজন মৃত ব্যক্তির কফিনের কাপড়। কাপড়টি লম্বায় ১৪ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং পাশে ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের ধারনা অনুযায়ী, এই কাপড়টিতে ফুটে উঠা ছবিটি যিশুখ্রিষ্টের পবিত্র দেহের ছাপ।    

কাপড়টিতে জড়ানো ব্যক্তির উচ্চতা ৬ ফুট। তবে ক্রুশের উপরে ঝুলে থাকার কারনে ব্যক্তির মেরুদণ্ড কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে কাপড়ে ব্যক্তির উচ্চতার ছাপ পড়েছে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি । ব্যক্তির ওজন ১৭৫ পাউণ্ড এবং বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বলে অনুমান করা হয়। চুল ও দাড়ি কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকায় ধারনা করা হয় ব্যক্তিটি ইহুদী সম্প্রদায়ের।         

১৩৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কাপড়টি প্রকাশ্যে আনা হয়।  ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকা ও ইতালির ৪৪ জন বিশেষজ্ঞ কাপড়টি নিয়ে একটানা ১২০ ঘণ্টা পরীক্ষা  নিরীক্ষা করেন। বিশ্লেষণে প্রমানিত হয় যে, এইটি কারো অঙ্কন করা ছবি নয় বরং এটি একটি জীবন্ত মানুষের ছবির নেগেটিভ। কারণ কাপড়ে কোন ধরনের রঙের উপস্থিতি নেই, রয়েছে মানুষের রক্তের ছাপ যা শরীরের ক্ষত থেকে বের হয়ে আসা। ছবিতে নেগেটিভ ইমেজ স্পষ্ট থাকায় প্রমাণিত হয় যে, যে দেহটি কাপড়টিতে মোড়ানো ছিল সেই দেহটি কাপড় খুলে বের করা হয় নি বরঞ্চ কোন উচ্চ আলোর ঝলকানিতে দেহটি অদৃশ্য হয়েছিল। আর সেই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলোর কারণে কাপড়ে নেগেটিভ ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে।     

কাপড়ে যে রক্তের চিনহ পাওয়া গেছে সেটি এ বি পজেটিভ। কাপড়ে জড়ানো ব্যক্তির মাথায় কাঁটার মূকূট ছিল। সারা মাথায় ২০টি কাঁটার ক্ষত রয়েছে আর কপালে রয়েছে ১৩টি ক্ষত। গলা থেকে পা পর্যন্ত ১৭৫ থেকে ২০০ আঘাতের চিনহ রয়েছে। আঘাতের চিনহ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, দুইজন ব্যক্তি দুই ধরনের চাবুক দিয়ে প্রহার করেন যাদের একজন লম্বা ও একজন খাট ছিল। সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন করে আঘাত করা হয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। দুই চোখে, ঠোঁটে ও নাকে প্রচণ্ড আঘাতের দাগ রয়েছে। কব্জিতে পেরেক গেঁথে ক্রুশে দেয়া হয়েছিল।

কাপড়ে থাকা চিনহ অনুয়ায়ি, সম্পূর্ণ ক্রুশ নয় বরং আড়াআড়ি ভাবে থাকা  কাঠের টুকরো ব্যক্তিটি বহন করেছিলেন। যার ওজন ছিল প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোগ্রাম। গবেষণায় আরও দেখা যায়, যে গাছের কাঁটার মুকুট মাথায় পরানো হয়েছিল এবং মৃতদেহের সাথে যেসব ফুল দেয়া হয়েছিল সেসব গাছ প্যালেস্টাইনে পাওয়া যায়।      

 

যিনি কাপড়টিতে জড়ানো ছিলেন তার বুকের বাম পাশে একটা আড়াই সেন্টিমিটার দীর্ঘ আর হাফ সেন্টিমিটার প্রস্থের একটা আঘাতের চিনহ রয়েছে। কাপড়ে জড়ানো ব্যক্তির দুই চোখে দুটি কয়েন রাখা ছিল যেসব কয়েনগুলো যীশুখ্রিষ্টের জন্মের ২৯ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে পোন্তিয় পিলাতের সময় কালের।  

কফিনের কাপড়ে থাকা চিনহ এবং প্রমাণাদি খ্রিষ্টভক্তদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে যে, সমাধির সময়ে তুরিন নগরে সংরক্ষিত কাপড়টি দ্বারাই আমাদের প্রভু যীশুখ্রিষ্টের পবিত্র দেহখানি জড়ানো ছিল। তবে এই কাপড়টি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে বিভিন্ন মহলে। ক্যাথলিক মণ্ডলী কাপড়টি সত্যি যীশুখ্রিষ্টের কি-না এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা দেয় নি। যদিও ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে চার্চের পক্ষ থেকে কাপড়টি থেকে প্রাপ্ত ছাপ সংগ্রহ করে যীশুর  মুখমণ্ডলের একটি ছবি প্রকাশ করেছে।   

এই কফিনের কাপড়টি ভক্তি, সম্মান আর সযত্নের সাথে তুরিন শহরে চার স্তরের বুলেটপ্রুফ কাঁচের ভেতর সংরক্ষণ করে রাখা আছে। বিগত করোনা মহামারির সময়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র সেই কাপড়টি জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। কাপড়ের একটি ফিল্ম কপি রাখা আছে শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডির মন্টেফানো সেমিনারিতে। 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.