Header Ads

এক অন্ধ শিশুর বড়দিন

বড়দিন 


কয়েকদিন আগে আমি এক দরিদ্র এলাকায় গিয়েছিলাম প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠানে। ছোট ছোট শিশুরা রং-বেরঙের সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পরে বেলুন হাতে আনন্দ করছে। সেখানে উপস্থাপক শিশুদের জিজ্ঞেস করছে তাদের কাছে বড়দিন মানে কি?

শিশুরা যার যার মতো করে উত্তর দিচ্ছে । যেসব উত্তরের বেশির ভাগই বড়দিন মানে যীশুর জন্মদিন, আনন্দ, ভাল খাবার, বাড়িঘর সাজানো, কীর্তন। সেখানে ১০ বছরের এক অন্ধ শিশুর ছিল। তাকে প্রশ্ন করতেই সে উত্তর দিল, বড়দিন সে কখনো চোখে দেখেনি। তার মাসি বলেছেন, বড়দিন হচ্ছে পাপ থেকে মন ফেরানোর দিন। বড়দিন তার কাছে তার মাসির কাছে শোনা গল্প মাত্র।

ছেলেটি জন্মান্ধ। ছেলেটির জন্মের আগেই বাবা মারা গেছেন আর ছেলেটির জন্মের সময় মা মারা গেছেন। ছেলেটি তার মাসির কাছে থাকে।

ছেলেটির উত্তর আমাকে ভাবিয়ে তুলল ।

শুধুমাত্র শিশুরাই নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হিসেবে আপনার আমার কাছেও হয়তো বড়দিন মানে শুধুই একটা আনন্দের দিন। আমরা কমবেশি সবাই জানি বড়দিন হল প্রভু যীশুখ্রিষ্টের জন্মদিন। এই দিনে স্বয়ং ঈশ্বর মানুষ রুপে পৃথিবীতে এসেছিলেন মানব জাতিকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে।

ঈশ্বর মানুষ হলেন, দরিদ্রের বেশে জন্ম নিলেন এক গোয়াল ঘরে এবং আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করতে ক্রুশের উপর জীবন উৎসর্গ করলেন। এই পুরো বিষয়টাই আধ্যাত্মিক আর বাহ্যিক বিষয় হচ্ছে বড়দিনে আমরা নতুন জামাকাপড় পরি, মজাদার সব খাবার খাই, ঘরবাড়ি সাজাই, বাদ্যবাজনা নিয়ে কীর্তন করি। কারণ মুক্তিদাতা যীশুর জন্মদিন। আনন্দের দিন তো অবশ্যই।

কিন্তু ঈশ্বর কেন মানুষ হলেন? ঈশ্বরের পুত্র হয়ে কেন গোয়াল ঘরে জন্ম নিলেন? আমাদের আধ্যাত্মিক উপলব্ধির জায়গাটা আসলে কোথায়?  

আমার হঠাৎ বাইবেলের একটি পদ মনে পড়ে গেল। যোহন রচিত মঙ্গল সমাচারের ২১ অধ্যায়ের ২৯ পদে লেখা আছে- যীশু বলেছেন, “আমাকে তুমি দেখেছ বলেই বিশ্বাস করেছ। যারা না দেখেও বিশ্বাস করে, ধন্য তারা।“

আমরা যীশুখ্রিষ্টকে স্বচক্ষে না দেখলেও যীশুর প্রতিমূর্তি-প্রতিকৃতি দেখে যীশুখ্রিষ্ট কেমন ছিলেন মুটামুটি একটা ধারনা করতে পারি। যীশুর শিশুকালের প্রতিকৃতি আমরা দেখেও আন্দাজ করতে পারি ছোট্ট যীশুকে। সেই প্রতিকৃতি সামনে রেখেই আমাদের যত উৎসব-আনন্দ। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখুন তো দশ বছরের একটি অন্ধ শিশুর কাছে বড়দিন শুধুই কানে শুনা একটা গল্প মাত্র।   

আমাদের চোখ থাকতেও আমরা বড়দিন বলতে শুধুমাত্র নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার, ঘরবাড়ি সাজানো আর বাহ্যিক বিষয়াদির মধ্যেই আমাদের বড়দিনকে আবদ্ধ করে রাখি। আমাদের বড়দিনে যীশুর জন্ম কি সত্যিই হয়? অথচ অন্ধ এই ছেলেটি কোনদিন বড়দিন কেমন দেখেনি, যীশুখ্রিষ্ট দেখতে কেমন সে জানে না। গির্জা ঘর দেখতে কেমন জানে না, বড়দিনে কিভাবে গির্জাঘর সাজায় তা সে জানে না, গোয়ালঘর কেমন তাও সে জানে না। সে বড়দিনে নতুন জামা পেলেও জামাটি দেখতে কেমন সে জানে না। সে বড়দিনের কেক খায় কিন্তু কেক দেখতে কেমন সে জানে না। সে তা মাসির কথাকে বিশ্বাস করে আধ্যাত্মিকভাবে যীশুর জন্মদিন পালন করে। তার কাছে বড়দিনের বাহ্যিক কোন তাৎপর্য নেই।  

আমরা যদি দেখতে না পেতাম তাহলে আমাদের বড়দিন কেমন হতো? ছেলেটি অন্ধ বলে সে বড়দিন উপলব্ধি করে অন্তর দিয়ে। চোখ থাকতে আমরা বড়দিনের যে তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারি না, একজন অন্ধ শিশুর কাছেই বড়দিনের আসল তাৎপর্য অর্থপূর্ণ হয়ে উঠে। সত্যিকারের যীশুর জন্ম বোধ হয় অন্ধ ছেলেটির বড়দিনেই হয়।  


এ ধরনের আরও লেখা পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন

আপনি কি খ্রিষ্টান? 

মানবতা এখনো বেঁচে আছে 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.