Header Ads

নকশী কাঁথার মাঠ-২

   

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন 


                                                      আবৃত্তিটি শুনতে ক্লিক করুন 


ই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,

কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!

কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,

তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া |

জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু,

গা-খানি তার শাঙন মাসের যেমন তমাল তরু।

বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,

বিজলী মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল ।

কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষী,

মুখে তাহার ছড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি


কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,

কালো দতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি ।

জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;

চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়।


সোনায় যে জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার

রঙ পেলে ভাই গড়তে পারি রামধণুকের হার।

কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,

তারি পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন।

সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,

কালো-বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক ।

যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও!

সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও।


আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী,

খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি ।

জারীর গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,

শাল-সুন্দী-বেতযেন , সকল কাজেই লাগে।

বুড়োরা কয়, ছেলে নয় , পাগাল লোহা যেন,

রূপাই যেমন বাপের বেটা, কেউ দেখেছ হেন?

যদিও রূপা নয়কো রূপাই, রূপার চেয়ে দামী,

এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামী।

আরও কবিতা শুনতে ও পড়তে ক্লিক করুন 

নকশী কাঁথার মাঠ-১ 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.