Header Ads

নকশী কাঁথার মাঠ-৩

                                                           পল্লীকবি জসীম উদ্দীন 


                                                     নকশী কাঁথার মাঠ-৩ 


                                                  ওই গাঁখানি কালো কালো, তারি হেলান দিয়ে,


ঘরখানি যে দাঁড়িয়ে হাসে ছোনের ছানি নিয়ে;


সেইখানে এক চাষীর মেয়ে নামটি তাহার সোনা,


সাজু বলেই ডাকে সবে, নাম নিতে যে গোনা |


লাল মোরগের পাখার মত ওড়ে তাহার শাড়ী,


ভোরের হাওয়া যায় যেন গো প্রভাতী মেঘ নাড়ি


মুখখানি তার ঢলঢল ঢলেই যেত পড়ে,


রাঙা ঠোঁটের লাল বাঁধনে না রাখলে তায় ধরে |


ফুল-ঝর-ঝর জন্তি গাছে জড়িয়ে কেবা শাড়ী,


আদর করে রেখেছে আজ চাষীদের ওই বাড়ি


যে ফুল ফোটে সোণের খেতে, ফোটে কদম গাছে,


সকল ফুলের ঝলমল গা-ভরি তার নাচে।

 

কচি হাত পা সাজুর, সোনায় সোনার খেলা,


তুলসী-তলায় প্রদীপ যেন জ্বলছে সাঁঝের বেলা


গাঁদাফুলের রঙ দেখেছি, আর যে চাঁপার কলি,


চাষী মেয়ের রূপ দেখে আজ তাই কেমনে বলি?


রামধনুকে না দেখিলে কি- বা ছিল ক্ষোভ,


পাটের বনের বউ টুবাণী, নাইক দেখার লোভ


দেখেছি এই চাষী মেয়ের সহজ গেঁয়ো রূপ,


তুলসী-ফুলের মঞ্জরী কি দেব-দেউলের ধূপ!


দু একখানা গয়না গায়ে, সোনার দেবালয়ে,


জ্বলছে সোনার পঞ্চ প্রদীপ কার বা পূজা বয়ে!


পড়শীরা কয়মেয়ে নয়, হলদে পাখির ছা,


ডানা পেলেই পালিয়ে যেত ছেড়ে তাদের গাঁ।

 

এমন মেয়েবাবা নেই, কেবল আছেন মা;


গাঁওবাসীরা তাই বলে তায় কম জানিত না |


তাহার মতন চেরন সেওই কে কাটিতে পারে,


নক্সী করা পাকান পিঠায় সবাই তারে হারে


হাঁড়ির উপর চিত্র করা শিকেয় তোলা ফুল,


এই গাঁয়েতে তাহার মত নাইক সমতুল |


বিয়ের গানে ওরই সুরে সবারই সুর কাঁদে,


সাজু গাঁয়ের লক্ষ্মী মেয়ে বলে কি লোক সাধে?


পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কালজয়ী কাব্য নকশী কাঁথার মাঠ কবিতা পড়তে ও শুনতে ক্লিক করুন 
       


No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.