Header Ads

যেভাবে আমি প্রবাসি হলাম-৩

ফিলিপাইনে আমি 


ভেরিতাসের বাংলা বিভাগের অফিস সময় শুরু হত ভোর পৌনে পাঁচটা থেকে। ভোরে অফিসে এসে নিউজ রুম থেকে নিউজ বাছাই করে সেগুলো অনুবাদ করে কেটেছেটে ছোট্ট খবর আকারে লিখতে হত। প্রকৃতপক্ষে কাজটি সহজ মনে হলেও করতে ভীষণ বেগ পেতে হতো। কারণ যখন ইংরেজি প্রিন্ট নিউজ নিয়ে আসতাম সেটি থাকত দুই থেকে তিন পৃষ্ঠা। সেই দুই/তিন পৃষ্ঠার খবরকে মাত্র ছয় থেকে সাত লাইনের মধ্যে নিয়ে আসতে প্রথম প্রথম ঘাম ঝরে যেত।   

খবর লিখে সেটি প্রিন্ট করে রেকর্ডিং রুমে গিয়ে পড়তে হতো। এরপর ঘরে ফিরে সকালের নাস্তা করে সাড়ে আটটায় আবার অফিস। রাতের এবং পরেরদিনের সকালের অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং করে রাখতে হত। আমাদের রেকর্ডিং সময় ছিল সকাল সাড়ে আটটা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত। এরপর অফিসে ফিরে স্ক্রিপ্ট লিখতে হত, অনুষ্ঠান সাজাতে হত, শ্রোতাদের চিঠিপত্র নিয়ে কাজ করতে হত। দুপুর ১২ টায় আবার ঘরে ফিরতাম। আগেরদিনের রান্না করা খাবার গরম করে খেয়ে একটু রেস্ট করে আবার আড়াইটায় অফিস। মাঝে মাঝে বিকেলেও রেকর্ডিং থাকত। এরপর বিকেলে আবার রাতের খবর লিখতে বসে যেতাম। সাড়ে পাঁচটায় অফিস ছুটি। 

অফিস ছুটির পর ঘরে ফিরে চা বা কফি খেয়ে ঘুরতে বের হতাম। না বাইরে কোথাও নয়, রেডিও ভেরিতাসের কার্যালয়ের আঙ্গিনায়। আগেই বলেছি বিশাল বড় এলাকা জুড়ে ভেরিতাসের কার্যালয়। একটা পার্কে যে পরিবেশ থাকা প্রয়োজন ঠিক সেই মনোরম স্নিগ্ধ পরিবেশ ছিল পুরো এলাকা জুড়ে। এসময় ভেরিতাসের অনেক সহকর্মী ব্যাডমিন্টন খেলতেন, অনেকে জগিং করতেন, অনেকে আমার মত ঘুরতেন একা কিংবা অন্যান্য বিভাগের প্রযোজকদের সাথে। প্রথম প্রথম আমি একা একা ঘুরে বেড়ালেও কিছুদিনের মধ্যে তিন চার জন বান্ধুবি জুটে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে পরের দিনের জন্য রান্না করতাম। এরপর রাতের খাবার খেয়ে আবার যেতাম অফিস প্রাঙ্গনে একটু হাঁটাহাঁটি করতে। রাত ১০টার মধ্যে ঘরে ফিরে বিছানায় কারণ পরেরদিন সেই ভোরে উঠে আবার নিউজ। 

শনি-রবিবার ছিল ছুটির দিন। শনিবার কাঁচা বাজার করা, রান্না করা, কাপর ধোয়া, ঘরদোর পরিস্কার নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হত। রবিবার সথন ১০ টায় গির্জার প্রার্থনা অনুষ্ঠান ছিল। আমাদের ভেরিতাসের অফিসের দোতলায় ছিল চ্যাপেল। তাই রবিবার দেরিতে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে খ্রিষ্টযাগে যোগ দিতাম। এরপর সব বান্ধুবিরা মিলে চলে যেতাম ফেয়ারভিউ এস এম শপিংমলে। সেখানে দুপুরের লাঞ্চ করে মুভি দেখে টুকটাক শপিং করে সন্ধ্যায় ভেরিতাসে ফিরতাম। পরেরদিন সোমবার আবার সেই অফিস, রুটিনমাফিক জীবনযাত্রা। 

আমরা অফিসে তিনজন ছিলাম। সপ্তাহে একদিন করে আমরা একেকজনের ঘরে রাতের খাবার খেতাম। বছরে একবার ভেরিতাসের সব কর্মীরা ম্যানিলার বাইরে ট্যুরে যেতাম। ম্যানিলার ও কেজন সিটির বাইরে লাগুনা, কাভিতে, তাগায়তায়, পাম্পাংগা, বাতাংগাছ, বাগিও, গুমাক্কা, Hundred Island যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। 

অপরুপ সৌন্দর্যের দেশ ফিলিপাইন। ফিলিপাইনে সাত বছর কাজ করার ও লেখাপড়া করার সময়কার অভিজ্ঞতাগুলো এভাবেই লিখব পর্যায়ক্রমে। 

 চলবে........................

আরও পড়তে ক্লিক করুন

যেভাবে আমি প্রবাসি হলাম -১ 

যেভাবে আমি প্রবাসি হলাম-২ 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.