Header Ads

কালো মেয়েটির কথা

 

কালো মেয়ে 

 

আঠারোগ্রামের মেয়ে আমি। অনেকে হয়তো আঠারোগ্রামের নাম শুনেননি। ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ থানার অন্তর্গত খ্রিষ্টান এলাকাকেই বলা হয় আঠারোগ্রাম।  এই এলাকাটি মূলত ১৮টি খ্রিষ্টান গ্রাম নিয়ে গঠিত।   

বহু আগে থেকেই এই এলাকার মানুষ বিদেশে কাজ করে বলে ধনী এলাকা হিসেবে এই এলাকাটির বেশ সুনাম রয়েছে। এখানকার খ্রিষ্টানদের জীবনযাত্রার মান অনেক উঁচু, বিলাসবহুল এবং প্রাচুর্যে ভরা।  তাদের কথা বলার ভাষায় রয়েছে আলাদা একটা মাধুর্য, নারীদের শাড়ি পরার আলাদা একটা ধরণ রয়েছে, খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্যতা আর আতিথিয়তার দারুণ আন্তরিক এখানকার মানুষ। যারা একবার আঠারোগ্রামের আতিথিয়তা পেয়েছেন তারা আজীবন তা স্মরণে রাখবেন।

আমি সেই আঠারোগ্রামেরই মেয়ে। আমি আঠারোগ্রামের এমন একটা বিষয় আজ তুলে ধরতে চাই যেটা আঠারোগ্রামবাসী হিসেবে আমি লজ্জাবোধ করি।

একবিংশ শতাব্দিতে এসে উন্নত জীবনযাপন করলেও আঠারোগ্রামের মেয়েরা অন্যান্য এলাকার মেয়েদের চাইতে অনেক পিছিয়ে আছে। সেটা লেখাপড়ায়, ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে, সমাজের বিভিন্ন অংশগ্রহণমূলক কাজে কিংবা বিভিন্ন পেশায়।

আঠারোগ্রামে এখনো যেসব মেয়েদের গায়ের রং একটু চাপা তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়। এখানকার বেশিরভাগ মায়েরা ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলে গায়ের চামড়া সাদা এমন মেয়ে খোঁজেন। মেয়ের গুণ, ব্যাবহার, সবার সাথে মানিয়ে চলার মন-মানসিকতা আছে কি না সেটা বিচার করেন না।

সাদা চামড়ার মেয়েরা মোটামুটি এইস এস সি পাশ করলেই বিয়ের জন্য একদম প্রস্তুত। বিয়ের পর তারা সম্পূর্ণ স্বামীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে। সন্তান জন্ম দেয়া, তাদের লালনপালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের পুরোটা জীবন।

আর উচ্চশিক্ষা কালো মেয়েদের জন্য। কালো মেয়েরা উচ্চশিক্ষা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ে আঠারোগ্রামের বাইরে সুশিক্ষিত, উচ্চ মন-মানসিকতা সম্পন্ন ছেলেদেরকে বিয়ে করে সংসার এবং ক্যারিয়ারকে সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যায়। তারা পরিবারের, সমাজের ও দেশের কল্যাণমূলক কাজে অংশ নেয়। এখানেই তাদের জীবনের সার্থকতা।

সাদা চামড়ার প্রেমে পরে আমাদের আঠারোগ্রাম হারাচ্ছে মেধাবী বউ, মেধাবী মা। আঠারোগ্রামের মানুষ সেসব গুণবতী মেয়েগুলোকে একটু মূল্যায়ন করলেই আমাদের আঠারোগ্রাম পেয়ে যেত অনেক সম্ভাবনাময় নারী যারা সত্যি আঠারোগ্রামকে অনেক কিছু দিতে পারতো।

আঠারোগ্রামের মায়েদের প্রতি অনুরোধ মেয়ে ফর্সা হোক বা কালো হোক তাদেরকে সুশিক্ষিত করুন, নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহযোগিতা করুন। ছেলেদের ও তাদের মায়েদের প্রতি অনুরোধ শুধুমাত্র রুপের বিচার না করে গুণেরও বিচার করুন। রুপ সারাজীবন থাকবে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে প্রগতিশীল করতে বিচক্ষণ ও সুশিক্ষিত মায়ের কোন বিকল্প নেই। 

 আরও পড়তে ক্লিক করুন

আমার মেয়ের কোন প্রেমিক নেই 

মেয়েদের বড় হওয়া 

পোশাকেই পরিচয় 

মানবতা এখনো বেঁচে আছে 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.