আজ থেকে আমি মা
শুভ জন্মদিন |
৬ই এপ্রিল আমার জীবনের অন্যতম একটি দিন। এই দিনটিতে আমি প্রথম
মা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। এইদিনে আমার কোল আলো করে আমাদের একমাত্র মেয়ে জেমিমা
মৈত্রী পৃথিবীতে আসে।
আমার মেয়েআ আমার এবং তার নিজের
ছোটবেলার গল্প শুনতে অনেক ভালবাসে। মাঝে মাঝেই তার জন্মদিনের গল্প তাকে শুনাতে হয়।
আর আমার প্রিয় গল্পগুলোর মধ্যে মৈত্রীর জন্মদিনের গল্পটি সেরা।
ডাক্তার মৈত্রীর জন্মের সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছিলেন ১৯শে এপ্রিল। আমার যখন আট মাস চলছে আমি শ্রীলঙ্কার ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে যাই ২১শে ফেব্রুয়ারী। বাড়িতে আগে আমি কখনও এমন আদর-সোহাগ পাইনি যতটা পেলাম গর্ভবতী অবস্থায়। সেবার ফেব্রুয়ারিতেও বাংলাদেশে প্রচুর ঠাণ্ডা ছিল। শীতের কারনে রাতে ভাত খেতে ইচ্ছে করত না। মা ভাত মেখে বিছানায় নিয়ে এসে বলতো, আমি ভাত নিয়ে এসেছি, আয় হা কর আমি খাইয়ে দেই। আমার কখন কি খেতে ইচ্ছে করে একটু পরপরই মা জিজ্ঞেস করত।
সেদিন ছিল ৬ই এপ্রিল। দিনটি
দুইটি কারণে বিশেষ ছিল। প্রথমত ঐদিন ছিল পুণ্যশুক্রবার (Good Friday) এবং দ্বিতীয়ত
পূর্ণিমার দিন। পুণ্যশুক্রবার বিকেলে মা গির্জায় গিয়েছিলেন। ছোটদাদা আর আমি বাড়িতে।
বিকেল থেকেই একটু বমিবমি লাগছিল। মা ফিরে এলেন গির্জা থেকে। তখন আমি উঠানে হাঁটছিলাম।
পাশের বাড়ির এক মাসি এসে বললেন, তোমার বাচ্চা হওয়ার তারিখ কবে? বললাম ১৯ তারিখে। উনি
বললেন, ছেলে না মেয়ে? বললাম, মেয়ে। এরপর উনি
বললেন, আজ তো পূর্ণিমা। পূর্ণিমার জোয়ারে মেয়ে আগে আগে হয়ে যায় আর ছেলে হয় অমাবস্যার
জোয়ারে।
উনার কথায় আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া
হল। প্রথমত, আমি তো স্বাভাবিক আছি আর আমার তারিখ এখনও ১৪ দিন পর। এত তারাতারি হবে না!
দ্বিতীয়ত- হলে ভালই হয় কারণ আমি তো আসন্ন দিন নিয়ে একটু ভীত। যদি আজ হয়েই যায় তো ঝামেলা শেষ
।
এরপর সন্ধায় সবার সাথে বসে টিভি দেখছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তলপেট একটু একটু করে
শুভ জন্মদিন |
ব্যাথা করতে লাগল। আটটার দিকে বেশ ভালই ব্যাথা করল। মাকে বললাম। পরিচিত একজন নার্স ছিলেন। মা বলল, নার্সকে জানাতে। ফোনে জানালাম। নার্স বললেন, হাসপাতালে যেতে। শুক্রবার রাত। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ দিনের বেলা এসে চলে গেছেন। নার্স বললেন, নবাবগঞ্জ আশা ক্লিনিকে একজন ভাল ডাক্তার আছেন আমি যেন সেখানে যাই।
সব কিছু যোগাড় করে গাড়ি ঠিক
করে রাত ৯ টায় গেলাম আশা ক্লিনিকে। দাদার বন্ধুর গাড়ি। আগেই বলা ছিল ডেলিভারির সময় চাইলেই যেন গাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। দাদার বন্ধুকে ফোন করার সাথে সাথে গাড়ি চলে এল। ডাক্তার আমার আলট্রা করে জানালেন বাচ্চা হওয়ার সময়
আসন্ন। বাচ্চা সুস্থ আছে, নরমাল ডেলিভারি হবে।
রাত সারে ৯ টায় ব্যাথা বৃদ্ধির
জন্য একটা ইঞ্জেকশন আর স্যালাইন দেয়া হল। তখনও আমার ব্যাথা সহনীয় ছিল। ১০ টায় ডেলিভারি
রুমে নিয়ে যাওয়া হল। ১০ টা ২৫মিনিটে ডাক্তার বাচ্চা দেখিয়ে বললেন, আপনার সুন্দর ফুটফুটে
একটা মেয়ে হয়েছে।
কথাটা শোনার সাথে সাথে আমার
সব কষ্ট এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। মনে হল ‘আমি মা হয়ে গেলাম। আজ থেকে আমি কারো মা।'
আমার বেবিকে নিয়ে আমার মায়ের
কোলে দেয়া হল। আমি কেবিনে আসলাম রাত সাড়ে ১১ টার দিকে।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় আমার স্বামীকে
কিছুই জানান হয় নি। কারণ ক্লিনিকে যখন এলাম তখন নিশ্চিত ছিলাম না আসলে কেন ক্লিনিকে
যাচ্ছি। আর স্বামী টেনশন করবে ভেবে ওকে শুধু জানালাম আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে, প্রার্থনা করো। আর আমার কথা শুনে আমার স্বামী যে প্রার্থনা শুরু করেছে তার আর কি বলি।
সেদিন যেহেতু পুণ্যশুক্রবার ছিল তাই শ্রীলঙ্কায় বিভিন্নস্থানে নিশিজাগরণী প্রার্থনা
চলছিল। আমার স্বামী সেসব জায়গায় ফোন করে আমার জন্য প্রার্থনা চেয়েছিল। আর তাই তো সবার
প্রার্থনায় কোনরকম ঝামেলা ছাড়া আমি মা হতে পেরেছিলাম।
কেবিনে এসে রাত ১২ টায় আমি আমার স্বামীকে ফোন দেই। স্বামী ফোন রিসিভ করলে মেয়ের মুখের সামনে ফোন ধরি। মেয়ে ইয়া ইয়া শব্দ করতে থাকে। মেয়ের বাবা বলে, কে এমন শব্দ করছে?
আমি বললাম, তোমার মেয়ে! ও অবাক
হয়ে জিজ্ঞেস করে, কখন হল? তুমি এখন কোথায়? আমি বললাম, বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টা ২৫ মিনিটে তোমার হয়েছে। আমি এখন হাসপাতালে। ও বলল, Thanks be to God.
No comments