নববর্ষ ও আমার অভিজ্ঞতা
সিনহালা নববর্ষের খাবার |
বাংলা নববর্ষ বাঙ্গালীর চিরন্তন উৎসব। প্রতিবছর
আমরা মহা আড়ম্বরের সাথে বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকি। দেশে থাকলে এসব উৎসব আমরা যতটা
না মিস করি দেশের বাইরে থাকলে উৎসবের দিনগুলো আরও বেশি মনে করি।
আমার আগে ধারণা ছিল শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের
বাঙ্গালীরাই শুধু ১৪ই এপ্রিল নববর্ষ পালন করে থাকে। আমার এই ধারণাটি পরিবর্তন হল
ফিলিপাইনের সোশ্যাল ইন্সটিটিউশনে এম এ পড়ার সময়। সেখানে মিয়েনমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া,
লাওস ও শ্রীলঙ্কা থেকে আগত আমার সহপাঠীরাও বিশাল আয়োজনে ১৪ই এপ্রিল নববর্ষ পালন
করত।
আবার শ্রীলঙ্কায় আসার পর দেখলাম এখানকার
সিনহালা ও তামিলরা ১৪ই এপ্রিল নববর্ষ বিশেষ কিছু রীতি ও প্রথা পালনের মাধ্যমে পালন
করে। শ্রীলঙ্কার ভাষায় তাদের নতুন বছরকে বলা হয় সিনহালা আওরুদ্দু।
তবে মজার বিষয় হল সিনহালা ও তামিলরা যে সব
রীতি ও প্রথা পালন করে সেগুলো নির্ধারিত
লগ্ন অনুযায়ী করা হয়। যেমন একই সময় খাবার খাওয়া, স্নান করা, মাথায় তেল লেপন করা,
অফিসে যাওয়া এবং প্রার্থনা করা। আবার এসব প্রথা পালনের সময় নির্ধারিত রঙের পোশাক
পরতে হয়।
এবার আমি ২০২৩ সালের নববর্ষ পালনের কিছু
সময়, লগ্ন, রীতি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। এতে করে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যাবে।
যেমন এবছর নববর্ষের ক্ষণ থাকবে ১৪ই এপ্রিল
শুক্রবার সকাল ৮টা ৩৫ থেকে রাত ৯ টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত। তবে সকাল ৮ টা ৩৫ থেকে দুপুর
২ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত কোন শুভ লগ্ন নেই। তাই সকাল ৮ টা ৩৫ বাজার আগেই সবাইকে
সাধারণ খাবার খেয়ে দুপুর ২ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বাড়িতে অথবা মন্দিরে গিয়ে ধ্যান-প্রার্থনা
করে কাটাতে হবে। তবে এ সময় কোন ধরনের কাজ করা যাবে না।
দুপুর ঠিক ৩ টা ২৯ মিনিটে রান্নার করার
লগ্ন। এবার যে কোন রঙ্গিন পোশাক পরে দক্ষিণ দিকে মুখ করে চুলা ধরাতে হবে। পুরাতন চুলায়
রান্না করলে হবে না। নববর্ষের রান্নার জন্য তিনটি ইট দিয়ে নতুন চুলা বানাতে হবে
এবং প্রথমেই নারিকেলের দুধ ছোট নতুন মাটির হাড়িতে বসিয়ে জ্বাল দিতে হবে। দুধ বলক
এসে উৎরিয়ে পড়লে তাকে শুভ মনে করা হয়। দুধ জাল দেয়া হয়ে গেলে এবছর বিশেষ যে খাবার
প্রথমে রান্না করতে হবে তা হচ্ছে দই মিশ্রিত ভাত, তিল আর ভুট্টা।
বিকেল ৫ টা ৫ মিনিটে দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে কাজ করা শুরু করতে হবে। এসময় খাবার খেতে হবে। খাবার শেষে বাড়ির যে কোন কাজ করা যাবে, লেখাপড়া করা যাবে।
নতুন
বছরকে বরণ করতে পুরাতন বছরে স্নানের সময় হচ্ছে ১২ই এপ্রিল বুধবার। নিমপাতাসহ কিছু
ভেষজ মিশ্র করে মাথায় প্রলেপ দিয়ে প্রার্থনা করে স্নান করতে হবে।
১৬ই এপ্রিল রবিবার সকাল ৯ টা ৪১ মিনিটে লাল ও
হলুদ পোশাক পরে দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে বিশেষ ভেষজ পাতা বেঁটে রস বের করে তা তেলের
সাথে মিশিয়ে মাথায় লেপন করতে হবে। তবে তেল লেপনের আবার কিছু প্রথা আছে। যেমন মন্দিরে
গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুর হাত দিয়ে মাথায় তেল লেপন করার রীতি রয়েছে। যাদের পক্ষে মন্দিরে
যাওয়া সম্ভব হয় না তারা বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যর হাতে তেল মাখেন।
১৭ই এপ্রিল সোমবার সকাল ৬ টা ২৮ মিনিটে সাদা
পোশাক পরে দই মিশ্রিত ভাত খেয়ে দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে কাজের উদ্দেশে বের হতে হবে।
২৮ শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা ৩৮ মিনিটে সোনালি পোশাক পরে পূর্বদিকে তাকিয়ে বাড়িতে একটি গাছ লাগাতে হবে। আর এবছর রোপণ করতে হবে যে কোন একটি ফলের গাছ।
সিনহালা আওরুদ্দু উপলক্ষে শ্রীলঙ্কান এবং তামিলরা বিভিন্ন ধরনের পিঠা খেয়ে থাকে। সাথে থাকে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার কিরিবাত আর কলা।
আরও পড়তে ক্লিক করুন
No comments