Header Ads

এ আমাদের লজ্জা

 

মাংসকারি 

সম্প্রতি একটা খবর আমার চোখে পড়ল যার শিরনাম হচ্ছে, ‘মাংস কম দেয়ায় বিয়ে বাড়ীতে সংঘর্ষ, বরের বাবার মৃত্যু’।

খবরটা দেখে আমি ভীষণ লিজ্জা পেয়েছি। আমার মেয়ে পাশে থেকে আমায় বলছিল, মা কিসের খবর এটা? আমি ওকে ঘটনাটা বলতে পারিনি লজ্জায়।

কতটা নির্লজ্জ হলে মানুষ খাবার কম পড়ার কারণে বিয়ে বাড়িরমত একটা আনন্দঘন-উৎসবমুখর পরিবেশে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে? 

বাঙ্গালী রীতিতে আমরা যে জিনিসটা বেশি লক্ষ করি সেটা ছেলে-মেয়ে দুইজনেরই বিয়ে হয় কিন্তু সর্বদা দুশ্চিন্তায় ভুগেন মেয়ের বাবা এবং মেয়ের আত্মীয়স্বজন। বেশ কিছুদিন আগে একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছিলাম, সিনেমার নাম ‘লজ্জা’।  

যেখানে দেখান হয় মেয়ের বিয়ের সময় মেয়ের বাবা সব সময়ই একটা আতংকে থাকেন কখন কি কম পরবে আর কখন কি নিয়ে ঝামেলা বাঁধে। ছেলে পক্ষের মানুষকে দেখে তিনি সব সময় মাথা ঝুঁকেই থাকেন আর সবকিছু যেন ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা হয় সেই অনুরোধ করবেন। কিন্তু ছেলে পক্ষ ইচ্ছে করে পায়ে পায়ে মেয়ে পক্ষের ভুলত্রুটি খুজতে থাকে। আর কেউ যদি সেটা পেয়ে যায় তো সেই ভুল ধরিয়ে দেয়া মানুষটির গর্বের সীমা থাকে না। মেয়ে পক্ষের ভুল ধরিয়ে দেয়া তার কৃতিত্ব।   

একবার চিন্তা করে দেখুন তো! মেয়েকে ছোটবেলা থেকে খাইয়ে পরিয়ে, লালনপালন  করে, লেখাপড়া শিখিয়ে মা-বাবা স্বামীর ঘরে পাঠান। মেয়েটি তার বাকি জীবন স্বামীর বাড়িতে সম্পূর্ণ একটা নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে, সবার সেবা করে, সেই পরিবারের বংশ বৃদ্ধি করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করে। এখানে মেয়ের বাবা কি পায়? মেয়েকে মানুষ করে অন্যের হাতে তুলে দেন, সাথে দেন যৌতুক। আর স্বামী  যৌতুকসহ তৈরি একটা বউ ঘরে নিয়ে যায়। এখানে মেয়ের বাবার মনে কিরুপ কষ্ট, বেদনা থাকে। অথচ সেইদিনই ছেলে পক্ষের মানুষের নানান রঙ্গতামাশা তাকে সহ্য করতে হয়।    

একজন মেয়ের বাবা কখনই চান না তার মেয়ের বিয়েতে কোন কিছুর ঘাটতি হোক, ঝামেলা হোক বা ছেলে  পক্ষ মেয়ে পক্ষকে অপমান করার সুযোগ পাক। মেয়ের বাবা তার সাধ্যমত সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করেন বিয়েটা সুন্দরভাবে যেন সুসম্পূর্ণ হয়। কিন্তু তারপরও যখন কোন কিছুর ঘাটতি হয় মেয়ের বাবা ঝামেলায় না গিয়ে চান আপোষে মীমাংসা করতে।  

কিন্তু লজ্জার বিষয় আমাদের দেশের কিছু মানুষরুপী অমানুষ বিয়েরমত একটা অনুষ্ঠানে যোগদেন শুধুমাত্র ঝামেলা পাকাতে। নইলে ১০০ বরযাত্রীর জায়গায় ২০০ বা  তার চেয়ে বেশি নিয়ে গেলে তো মেয়ের বাবা অসহায় হয়ে পরবেন এটাই স্বাভাবিক। মেয়ের পক্ষকে বেকায়দায় ফেলতে ইচ্ছেকৃত ভাবেই তারা এই কাজটি করে থাকেন। আর যদি বরযাত্রী কিছু বেশি হয়ে যায়, সেখানে উচিৎ বরপক্ষকে মেয়ের বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার।    

প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি বরযাত্রী নিয়ে যাওয়ায় যদি খাবার কম পরে তবে সেটা বরপক্ষের অন্যায়, ভুল। এত বড় একটা অন্যায় করে আবার মেয়ের বাড়ির মানুষের সাথে তর্কে যাওয়া নিচু মানুষিকতার পরিচয়। এরপর মারামারি এবং মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের রূপটাই প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে তবে আমাদের অনেক মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ এখনও ঘটেনি। 


আরও পড়তে ক্লিক করুন 

মেয়েদের বড় হওয়া 

মাতৃভাষা রচনা- একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা 

আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল 

আমার মেয়ের কোন প্রেমিক নেই 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.