Header Ads

ছাতা

 

 

ছাতা 

বিকাশ একটা স্বনামধন্য প্রাইভেট কোম্পানিতে উচ্চপদে কর্মরত। প্রায়ই তাকে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অফিসে থাকতে হয়। সেদিনও অফিস ছুটির প্রায় দুই ঘণ্টা পর সে অফিস ছাড়ল। এরই মধ্যে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। বিকাশ গাড়ি বের করে রাস্তায় মোড় নিতেই আকশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হল সাথে ঝড়হাওয়া। চারদিক অন্ধকার। বিজলী চমকাতেই চারপাশ দিনের আলোর মত ঝলমল করে আবার অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি প্রায় নেই বললেই চলে।  

প্রতি বৃহস্পতিবার বিকাশ অফিস থেকে সোজা গ্রামের বাড়ি যায় এবং শনিবার সকালে ফিরে। আজও যাচ্ছিল। বজ্রসহ এমন বৃষ্টি সাথে রাস্তার পাশের গাছগুলো বাতাসে যেন একবার এপাশ হেলে পড়ছে আরেকবার ওপাশ হেলে পড়ছে। বিকাশ একটু ভয়ই পাচ্ছিল কারণ প্রায়ই ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে দুর্ঘটনার খবর পত্রিকায় দেখা যায়।

হঠাৎ বিকাশ খেয়াল করল রাস্তায় একটা যাত্রী ছাওনির নিচে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে গাড়ি থামাতে ইশারা করছে। মেয়েটিকে দেখে বিকাশের ভয় কিছুটা কমল। বিকাশ মেয়েটির কাছে গাড়ি থামাতেই মেয়েটি বলল, আমাকে একটু লিফট দিবেন? 

এই ঝড় বাদলের রাতে অসহায় একটি মেয়ে রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে দেখে বিকাশের মায়া হল। বলল, উঠে আসুন। আমি তো এই রাস্তায়ই যাচ্ছি।

মেয়েটির হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর একটি আইস্ক্রিমের বাক্স। মেয়েটি গাড়িতে উঠে কোন কথা বলল না। একদম চুপচাপ বসে রইল।

বিকাশ জিজ্ঞেস করল, কোথায় নামবেন আপনি?

আর একটু সামনে।

বেশ কিছুদুর গিয়ে মেয়েটি বলল, এখানে আমাকে নামিয়ে দিন।

আপনার বাসা কি রাস্তায় পাশে নাকি ভেতরে?

সামনের গেইট দেখিয়ে মেয়েটি বলল, এটাই ।

বিকাশ গাড়িতে থাকা তার ছাতাটা মেয়েটিকে দিয়ে বলল, ছাতাটা নিয়ে জান। আমি পরশু ফেরার পথে নিয়ে যাব।

মেয়েটি কোন কথা না বলে ছাতাটা নিয়ে চলে গেল।

বিকাশ ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছাল এবং যথারীতি শনিবার সকালে অফিসের উদ্দেশে রওনা হল। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় যেখানে মেয়েটিকে নামিয়ে দিয়েছিল সেখানে এসে তার মেয়েটির কথা মনে হল। সে তার ছাতাটা ফিরিয়ে আনতে গাড়ি থামিয়ে গেইট খুলে বাড়ির ভেতর ঢুকল। বাড়ির উঠোনটা ঘাস আর বিছালিতে ছেয়ে আছে। বিকাশ উঠোন পেরিয়ে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চারপাশ পাকা আর উপরে টিনের চাল, মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘর যেমন হয়। ঘর ভেতর থেকে বন্ধ। বিকাশ ডাকতে লাগল, বাড়িতে কেউ আছেন?

কোন সাড়াশব্দ নেই। বিকাশ কয়েকবার ডাকার পর ঘরের দরজা খুলে একজন বয়স্ক  মহিলা বের হয়ে এলেন।

বিকাশ বলল, পরশু রাতে একটি মেয়েকে আমি লিফট দিয়েছিলাম। বৃষ্টি থাকায় ওনাকে আমি আমার ছাতাটা দিয়েছিলাম।

মহিলাটি সে কথার কোন উত্তর না দিয়ে ভারী কণ্ঠে বললেন, বাবা তোমার সাথেও দেখা হল! আরও কত মানুষের সাথে ওর দেখা হয় আমার সাথে কেন হয় না?

একটু চুপ থেকে মহিলাটি বললেন, একটু অপেক্ষা কর বাবা খুঁজে দেখি, আছে কোথাও।  

বিকাশ মহিলার কথার কোন আগামাথা বুঝতে না পেরে কৌতূহলী হয়ে মহিলার পেছনে পেছনে ভেতরে গেল। মহিলা এ-ঘর সে-ঘর খুঁজল কথাও পেলেন না। মহিলাটি শেষে যে ঘরে গেল সেটি সম্ভবত মেয়েটির ঘর। ঘরে মেয়েটির বাঁধাই করা ছবি, পড়ার টেবিল। বিকাশ ছবিগুলো দেখছিল। এমন সময় মহিলাটি বলল, এঘরেও তো রাখেনি। চল তো বাইরে দেখি।   

বলেই মহিলাটি পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে গেলেন। পেছনে পেছনে বিকাশও গেল। ঘরের পেছনেও অনেকটা জায়গা। আগাছায় ঢাকা। আগাছা পেরিয়ে আর একটু  সামনে এগিয়েই মহিলাটি বলল, পাওয়া গেছে, ঐ তো তোমার ছাতা।

বিকাশ সামনে তাকিয়ে দেখে একটা বাঁধানো কবর। কবরে হেলান দিয়ে রাখা ছাতাটা। কবরের মাথার কাছে বাঁধানো পাথরের উপর গতপরশু লিফট দেয়া সেই মেয়েটির ছবি।

বিকাশের মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা। বিকাশ মহিলাটির দিকে কৌতূহলী হয়ে চেয়ে রইল।  

মহিলাটি ছাতাটা বিকাশের হাতে দিয়ে বললেন, আমার মেয়ে। পরশুদিন ছিল ওর জন্মদিন। পাঁচ বছর আগে জম্মদিনে ও অফিস থেকে ফেরার পথে আইস্ক্রিম কিনতে গিয়েছিল। সেদিনও ছিল ঝড়বৃষ্টির রাত। আইস্ক্রিম কিনে বাড়ি ফেরার জন্য ও যাত্রীছাওনিতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। কোন যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ একটা গাড়ি দেখে আমার মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দেয়। গাড়িটি আমার মেয়ের উপর দিয়ে উঠিয়ে দিলে সেখানেই আমার মেয়েটি মারা যায়।  

প্রত্যেক বছর ওর জন্মদিনে ঠিক সেই সময়েই ও সেই যাত্রীছাওনি থেকে বাড়ি পর্যন্ত আসে। অনেকেই দেখেছে তবে আমার সাথে কখনো দেখা হয় না।   

 

এটি একটি সত্যি ঘটনা। আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে শোনা, যা শ্রীলঙ্কায় ঘটেছিল।


আরও গল্প পড়তে ক্লিক করুন 


ফেরা 

নুপুর -১ 

নুপুর -২ 

মামীর বান্ধবীর বাড়িতে একদিন 

বিদেশি নোট 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.