মন্ত্রী মহাশয়ের আগমন
মন্ত্রী মহাশয়ের আগমন |
মন্ত্রী মহাশয় উপস্থিত আছেন
এমন কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ জীবনে বেশ কয়েকবার হয়েছে। তবে গতকালের অনুষ্ঠানটি
ছিল আমার জন্য এক বিস্ময়ের। অনুষ্ঠান শেষে আমার মনে হল অভিজ্ঞতাটি আপনাদের সাথে সহভাগিতা
করি।
গতকাল শ্রীলঙ্কার
transport মন্ত্রী লাসান্থা আলাগিয়েওয়ান্না Western
Province-এ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছেন। আমাদের মেয়ে অনুষ্ঠানে যোগদানের
জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছে। নিমন্ত্রনপত্রে লেখা ছিল অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১০ টায়। আমরা
মেয়েকে নিয়ে সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি স্কুল মহামায়া বিদ্যালয়ে উপস্থিত
হলাম। ফর্ম পূরণ করে মেয়েকে সংবর্ধনা হলে নিয়ে গেলাম। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকতেই দেখা
গেল প্রত্যেক শিক্ষার্থীরকে একটা করে তরল দুধের প্যাকেট দেয়া হচ্ছে।
তখনই মন্ত্রী মহাশয় এসে উপস্থিত
হলেন। চারপাশ একদম নীরব। মন্ত্রী যে এসেছেন বোঝার উপায় নেই। ঘড়ির কাঁটা ধরে ঠিক ১০
টায় অনুষ্ঠান শুরু হল। একটি উদ্বোধনী নৃত্য হল, প্রদীপ জ্বালান হল, মহামায়া বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষিকা এবং মন্ত্রী মহাশয় বক্তৃতা রাখলেন এবং প্রায় ৩’শ শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট
ও উপহার দিলেন। প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর সাথে এককভাবে এবং গ্রুপে ছবি তুললেন। ঠিক সাড়ে
১১ টায় মাত্র দেড় ঘণ্টায় অনুষ্ঠান শেষ হল। সব কিছু সুন্দর গোছান ও সাজানো অনুষ্ঠান।
স্কুলের যে হলে অনুষ্ঠান হল সেই হলটিও ছিল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। চমৎকার একটা অনুষ্ঠান
ছিল।
এবার আরেকটি অভিজ্ঞতা সহভাগিতা
করি। আমি তখন অষ্টম কিংবা নবম শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের নবাবগঞ্জে কোন এক মন্ত্রী আসবেন।
মন্ত্রীর আসার কথা সকাল ১০ টায়। আমাদের স্কুল থেকে সকাল ৯ টার সময় নিয়ে আসা হল। শুধু
আমরাই না নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব কটি স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীরা এসেছে। তখন সড়কপথে
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল না। মন্ত্রী আসবেন নদীপথে স্পীডবোটে। আমরা সব শিক্ষার্থীরা
নদীর পাড় থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে। ১০ টা বাজলো মন্ত্রীর আসার
নাম নেই। ১১ বাজলো মন্ত্রী আসছেন না। ১২ টা বাজল মন্ত্রীর নামগন্ধও নেই। এদিকে রোদ
মাথার উপর উঠে গেল। স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকা কোথায় আছেন কে জানে? তারা হয়তো প্রচণ্ড
রোদের তাপে গরমে অন্য কোথাও ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে কিছু সেচ্ছাসেবক একটু পর পর এসে বলছে সবাই লাইনে সোজা
হয়ে দাড়াও, কেউ লাইন ভাঙ্গবে না, একটুও নড়াচড়া করবে না। প্রচণ্ড গরমে সবাই অস্থির। খিধেয় পেট চোঁচোঁ করছে।
১২ টার পর ১জন/ ২ জন করে আস্তে আস্তে মাথা ঘুরে পরে যেতে শুরু করল। দুপুর ১ টার সময়
মন্ত্রী মহাশয় আগমন করলেন। তখন ক্ষুধার্ত ক্লান্ত শরীরে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমাদের শ্লোগান
দিতে হল ‘মন্ত্রী মহাশয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম।‘
এরপর মন্ত্রী মহাশয় বক্তৃতা
শুরু করলেন ষ্টেজের উপর। সুন্দর করে সাজানো ষ্টেজ, উপরে সামিয়ানা টাঙ্গানো, চারপাশে
কয়েকটি ফ্যান চলছে। আর আমরা দুপুরের তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত শরীরে মন্ত্রী মহাশয়ের
কর্কশ কণ্ঠের অপ্রয়োজনীয় চিৎকার শুনছি। চিৎকার করে ক্লান্ত হলে মন্ত্রী মহাশয় লাঞ্চ
করতে গেলেন।
আর আমরা! ক্ষুধার্ত ক্লান্ত
হয়ে একটি করে অপুষ্টির শিকার গাছের চারা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
আরও পড়তে ক্লিক করুন
No comments