Header Ads

ছোট্ট একটি ঘটনা আর কিছু ভাবনা

দত্তক কুকুরছানা 

  

ঘটনাটি ২০২০ সালের

আমার ভাসুরের মেয়ের বান্ধবী সদ্য বিয়ে করেছে। বান্ধবীর স্বামী শ্রীলংকান এয়াইলাইন্সের ক্রাফ্ট ইঞ্জিনিয়ার আর বান্ধবী সেখানকারই এক বড় কর্মকর্তা। লক ডাউনের কারণে দুজনেরই ছুটি চলছে। লকডাউন চললেও শ্রীলংকায় আইডি কার্ডের নম্বর অনুযায়ী দরকারী কাজে বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে এই দম্পত্তি একদিন দামী এক গাড়ীতে করে আমার ভাসুরের বাড়ীর গেইটের কাছে এসে দাঁড়ালো। রাস্তার এপার ওপার বাড়ী হওয়ায় আমি আমার বাড়ী থেকে সব দেখতে পাচ্ছিলাম। একটু পর আমার ভাসুরের ছেলে যে কিনা তখনলেভেল অর্থাৎ এসএসসি পাশ করেছে এসে গাড়ীতে উঠল। এরপর গাড়ী ছেড়ে সামনে দিয়ে চলে গেল বহু দূরে, চোখের আড়ালে।

 

পরের দিন আমার ভাসুরের ছেলে আমাদের বাড়ীতে এসে তার কাকার সাথে অর্থাৎ আমার স্বামীর সাথে আগের দিনের গল্প বলতে লাগলো। আমার ভাসুরের ছেলে বরাবরই তার কাকার সাথে তার জীবনের লক্ষ-উদ্দেশ্য, দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, সহভাগিতা করে। কোথাও কোন ঘটনা ওর কাছে একটু ব্যতিক্রম মনে হলেই তার কাকার সাথে সহভাগিতা না করলে যেন স্বস্থি পায় না। কাকার সাথে আগের দিনের যে ঘটনা ছেলেটি সহভাগিতা করেছিল আমি আমার নিজের ভাষায় আপনাদের সাথে সহভাহগিতা করছি।

 

লকডাউনের কারণে নবদম্পত্তি ঘরে থেকে থেকে একদম বোর। তাই তারা একটি কুকুর পোষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনলাইন ঘেঁটে এক কুকুরের সন্ধানও পেয়েছে। অনলাইনে কুকুরের যে ঠিকানা দেয়া আছে সেটি আমাদের বাড়ীর কাছাকাছি কোন এক জায়গার ঠিকানায়। তাই রাজধানী কলোম্বো থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে এসে আমার ভাসুরের ছেলেকে সাথে করে নিয়ে গেছে যাতে কুকুরের ঠিকানা খুঁজে পেতে তেমন কোন সমস্যা না হয়। কেননা আমার ভাসূরের ছেলের এই এলাকা পুরোটাই চেনা। যাই হোক, এই কুকুরের গুনাবলী সম্পর্কে আপনাদের একটু ধারনা দেয়া যাক। 

এই কুকুরের জাতের নাম বুলমেষ্টিস। এর রয়েছে আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট অর্থাৎ এর মালিক যখন যে দেশে ভ্রমন করবে এই কুকুর মালিকের সাথে সেই দেশ ভ্রমন করতে পারবে। ভ্রমনের জন্য কুকুরের রয়েছে বিশেষ খাঁচা। অনলাইনে কুকুরের একটা জীবনবৃত্তান্ত দেয়া আছে। সেখানে শুধু কুকুর ছানার ঠিকানাই নয়, জন্ম তারিখমায়ের নাম, বাবার নাম, কুকুরের মায়ের বাবার রক্তের গ্রুপ এবং পর্যন্ত তাকে কোন কোন টিকা, ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত লেখা রয়েছে।  

সেখানে যাওয়ার পর দম্পত্তি কুকুরছানাটি দেখে খুব পছন্দ করল। এমন তুলতুলে কুকুরছানা পছন্দ না হয়ে যায় না। ইন্টারনেটে দেখা ছবির চেয়েও সুন্দর ছানাটি। মেয়েটি তো ছানাটিকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল। আমার ভাসুরের ছেলে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, দিদি এর দাম কত

কম দামের মধ্যেই পেয়ে গেছে মাত্র দুই লাখ শ্রীলংকান রুপি বলেই মেয়েটি কুকুরের বাচ্চাকে নিয়ে এমন আদিখ্যেতা করতে লাগলো -

ভাসুরের ছেলে বিক্রেতাকে জিগ্যেস করলো, আঙ্কেল এই কুকুরকে লালন-পালন করতে মাসে কি রকম খরচ হবে?

বিক্রেতা সবকটি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললেন, ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা লাগবে। বলেই কুকুরের খাবারের মেনুটা ওর হাতে ধরিয়ে দিল।

এদিকে মেয়েটি বললো, আচ্ছা ওর মাকে একটু ডাকেন তো?

বিক্রেতা ডাকতে লাগলো, এ্যাথেনা এ্যাথেনা -

এ্যাথেনা চলে এলো। এ্যাথেনা আসতেই বাচ্চাটি মায়ের শরীর ঘেষঁতে লাগল আর এ্যাথেনাও বাচ্চাটিকে আদর করতে লাগলো।

আর আসল সমস্যা সৃষ্টি হলো তখন। কারণ অনলাইনের সার্টিফিকিটে কুকুরের মায়ের নাম লেখা ছিল সেলবি। বিক্রেতাকে বলা হলে বিক্রেতা বললেন, আসলে ওর সার্টিফিকেটের নাম সেলবি। বাড়ীতে আমরা আদর করে এ্যাথেনা ডাকি। কিন্তু এই উত্তরে দম্পতি খুশি হলো না। বলল, আচ্ছা সেলবি বলে ডেকে দেখুন তো। বিক্রেতা অনিচ্ছাকৃতভাবে কয়েকবার সেলবি সেলবি বলে ডাকলেন কিন্তু কোন সাড়া এলো না। এ্যাথেনারও কোন ভাবাদোয় হলো না।

দম্পত্তি দমে গেল। চোখেমুখে যে উচ্ছাস, আনন্দ আর আকাঙ্খা নিয়ে এসেছিল সব যেন এক নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেলো। দম্পত্তি খুব মন খারাপ করে কুকুরের বাড়ী থেকে ফিরে এলো। আমার ভাসুরের ছেলেকে এবার গেটের কাছে নামিয়ে দিয়ে গেল। তারা আর বাড়ীর ভেতরে গেল না কারণ লকডাউন চলছে তাই কারো বাড়ীতে যাওয়া উচিৎ নয়। তবে বিক্রেতার বাড়ী থেকে আমার ভাসুরের বাড়ী পর্যন্ত মেয়েটি কোন কথা বলে নি। মুখ ভার করে বসে ছিল। আর স্বামীটি শুধু বার বার বলছিল, র্ডালিং মন খারাপ করো না। প্রমিস আমি তোমাকে এর চেয়ে ভাল আর সুন্দর একটা পাপি এনে দিব।

সত্যিকারের ঘটনাটি শেষ। আমি জানিনা এখানে কুকুরটিকে কুকুর বলা ঠিক হলো কি না! 

আমাদের বাংলাদেশে একটি শিশু জন্মের সময় সবাই জিজ্ঞেস করে, শিশুটির বাবা কে? স্কুলে ভর্তি হতে গেলে লিখতে হবে বাবার নাম কি? যে কোন ফর্ম পূরণ করতে গেলে সবার আগে লিখতে হবে বাবার নাম। বিয়ের সময় বর পক্ষ বাবার পরিচয় জানতে চাইবে। মায়ের কথাটা সেভাবে আসেই না।  

আর শ্রীলংকায় একটা কুকুরছানাকে দত্তক নেওয়া বাতিল হলো শুধুমাত্র ওর মায়ের সঠিক পরিচয়ের অভাবে। বাবার কথা এরা একবারও জিজ্ঞেস করে নি, কুকুরের বাবা কে?

যাই হোক, এই দম্পত্তি হয় তো আনলাইন ঘেঁটে নতুন কোন পাপির সন্ধান পাবে। যার জন্মদাত্রী মায়ের নামের সাথে সার্টিফিকেটের কোন গড়বড় থাকবে না। তাই দুই লাখ কিংবা তার বেশী টাকা খরচ করে একটি তুলতুলে নরম শখের পাপি কিনবে, মাসে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করবে। সারাদিন পাপির সাথে খেলা করে মুখে হাসি ফুটাবে এতে মনে প্রশান্তি আসবে।


এরকম আরও লেখা পড়তে ক্লিক করুন 


মেয়েদের বড় হওয়া 

মাতৃভাষা রচনা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা 

এ আমাদের লজ্জা 

নববর্ষ ও আমার অভিজ্ঞতা 




No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.