দুধের প্যাকেট
দুধের প্যাকেট |
খলিল্পুর প্রাইমারি স্কুল থেকে
প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় এ বছর পাঁচজন শিক্ষার্থী এ+ পেয়েছে। এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব
স্কুলের রেজাল্টে খুব খুশি হলেন। গ্রামাঞ্চলের স্কুল থেকে সুবিধাবঞ্চিত পাঁচজন ছেলের
এ+ পাওয়া সত্যি সৌভাগ্যের।
আনন্দে চেয়ারম্যান সাহেব এ+
পাওয়া ছেলে পাঁচজনকে উপহার দেবেন বলে ঠিক করলেন। উপহার দেয়ার আরও একটি কারণ সামনে ইলেকশন।
এসময় জনদরদী কাজ মানেই ভোটার নিজের কাছে টানা।
পাঁচজন ছেলের দুইজনের অর্থনৈতিক
অবস্থা এতটাই করুন যার প্রতিফলন পড়েছে ওদের স্বাস্থ্যে। তাই পাঁচজনকে নতুন ক্লাসের
জন্য বই-খাতা-কলম-ইউনিফর্মের কাপড়ের সাথে রোগা দুই ছাত্রের জন্য দুই প্যাকেট গুড়োদুধ
উপহার হিসেবে দিবেন বলে ঠিক করলেন।
পরের দিন চেয়ারম্যান সাহেব
স্কুলে এসে সকালের এসেম্বলির সময় ছাত্রদের হাতে উপহার তুলে দিলেন। স্কুলের সব ছাত্ররা
হাততালি দিয়ে এ+পাওয়া ছাত্রদের শুভেচ্ছা জানাল। চেয়ারম্যান সাহেব চলে গেলেন। এ+ পাওয়া
পাঁচছাত্র প্যাকেট খুলে দেখতে লাগল কি আছে তাদের প্যাকেটে। দেখা গেল দুই ছাত্রের প্যাকেটে
অতিরিক্ত দুধের প্যাকেট।
এই দেখে বাকি তিনজনের তো ভীষণ
মন খারাপ হল। এই তিনজনের মধ্যে একজন হচ্ছে বকুল। বকুল দেখতে যেমন মোটাসোটা ঠিক তেমনি
একরোখা। অন্য দুইজন দুধের প্যাকেট নিয়ে অভিযোগ না জানালেও বকুল সোজা প্রধান শিক্ষককে
তার উপহারের মধ্যে যে দুধের প্যাকেট নেই তা জানিয়ে আসল। প্রধান শিক্ষক চেয়ারম্যান সাহেবকে
বিষয়টি জানালেন। চেয়ারম্যান সাহেব শুধুমাত্র দুই ছাত্রের প্যাকেটে দুধ থাকার বিষয়টি
খুলে বললেন।
প্রধান শিক্ষক বকুলকে বললেন,
‘বকুল তোমার দুইজন সহপাঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল না। ওদের স্বাস্থ্য দেখেছ?
কেমন দুর্বল। এজন্য চেয়ারম্যান সাহেব শুধুমাত্র ওদের দুজনকে অতিরিক্ত দুধের প্যাকেট
দিয়েছেন।‘
বকুল প্রধান শিক্ষকের উত্তরে
সন্তুষ্ট হল না। সে বাড়ি গিয়ে তার বাবাকে বিষয়টি জানাল। বকুলের বাবা আরও এক কাঠি উপরে।
‘তাই তো পাস করেছে পাঁচজন।
দুইজনকে আলাদা করে কেন দুধের প্যাকেট দেয়া হবে। সবাই সমান পাস করেছে তাই উপহার সমান
সমান দেয়া উচিত।‘
পরেরদিন বকুলের বাবা গেলেন
চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে দেখা করতে।
‘চেয়াম্যান সাহেব, আপনি কাল
যে উপহার দিয়েছেন সেখানে আমার ছেলের প্যাকেটে দুধের প্যাকেট ছিল না।
‘আসলে আমি শুধু দুইজন ছাত্রকে
অতিরিক্ত দুধের প্যাকেট দিয়েছি। আপনার ছেলের তো মাশাল্লা স্বাস্থ্য ভাল। ওর দুধ দরকার
নেই।‘
‘আসলে এই বয়সের সব ছেলেদেরই
তো বাড়ন্ত সময়। দুইজনকে দিলেন বাকি তিনজনকে দিলেন না, কাজ টা ঠিক করলেন।‘
চেয়ারম্যান সাহেব গেলেন রেগে।
তিনি বকুলের বাবার দিকে ভাল করে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘আপনার স্বাস্থ্য তো দেখছি অনেক
দুর্বল। দুধ তো দরকার আপনার।‘
‘না মানে নিজে ভালমন্দ না খেয়ে
ছেলেকে খাইয়েছি। তাই তো ছেলে আমার ভাল রেজাল্ট করেছে।‘
চেয়ারম্যান সাহেব কাজের ছেলের
দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বকুলের বাবার যে স্বাস্থ্য, দে বকুলের বাবাকে এক প্যাকেট দুধ দিয়ে
দে।‘
আরও গল্প পড়তে ক্লিক করুন
No comments