Header Ads

হায় রে কাণ্ড

 

বন্যা 




আমার দেবরের ছেলে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে স্বনামধন্য এক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। প্রতিদিন ভোর ছ’টায় স্কুলবাসে করে বাড়ি থেকে বের হয়। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় যাই হোক না কেন প্রতিদিন স্কুলে উপস্থিত থাকতেই হবে। একদিন অনুপস্থিতির জন্য অবিভাবক ডাকা, বড় অংকের জরিমানা দেয়া সে এক বিরাট ঝামেলার ব্যাপার। তাই অতি জরুরি না হলে কেউ স্কুল কামাই করে না।  

গত সপ্তায় পুরো পাঁচদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। দেবরের বাড়ির উঠনে অল্প একটু পানি জমেছে। এদিকে হঠাৎ স্কুলবাস খারাপ। দেবর গাড়ি নিয়ে গেছেন অফিসে। বৃষ্টির মধ্যে ছেলেকে নিয়ে আমার জা আর স্কুলে গেলেন না। স্কুল বাস ছাড়া বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে হলে কয়েকটি যানবাহন বদলাতে হবে। ভাবলেন সারাদেশে বৃষ্টির প্রভাব। তাই নিশ্চয়ই স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টা বুঝবেন।

পরেরদিন স্কুলে গেলে যারা যারা আগেরদিন স্কুলে আসেনি ক্লাসে তাদের দাড় করানো হল। ষাট জন ছাত্রের মধ্যে তিনজন দাঁড়াল।

শিক্ষক একজন একজন করে স্কুলে না আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।

প্রথম ছাত্রঃ স্যার, বৃষ্টির কারণে ড্রাইভার কাল আসেনি। তাই বাবাও অফিসে জাননি আর আমারও স্কুলে আসা হয় নি।

স্যারঃ ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তোমার বাবা তো ড্রাইভ করতে পারতেন। এটা কোন যৌতিক কারণ হতে পারে না। কাল দুইশত টাকা নিয়ে আসবে। আর বাবা অথবা মাকে বলবে প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করতে।

দ্বিতীয় ছাত্রঃ স্যার বাসায় পানি ঢুকেছিল। ঘরের ভিতরে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছিল স্যার।

স্যারঃ আহারে কি অবস্থা! টিভিতে খবর দেখালাম কাল রাতে। কতশত ঘরে যে পানি ঢুকেছে! মানুষের ঘরের সোফা ভেসে যাচ্ছে। রান্নাঘরের সামগ্রি সব জলেডুবে শেষ। ঠিক আছে তুই বস।  

আমার দেবরের ছেলে ভাবল সে যে কারণে স্কুলে আসেনি সেটা বললে যুক্তিতে টিকবে না। তাই সে দ্বিতীয় ছাত্রের মতই বলল।

দেবরের ছেলেঃ স্যার আমাদের ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকেছিল। নিচের তলায় হাঁটু পর্যন্ত পানি ছিল।

স্যারঃ বস বাবা। কি আর করার, প্রকৃতির উপর আমাদের তো কোন হাত নেই। সংগ্রাম করেই আমাদের বাঁচতে হবে।

আমার দেবরের ছেলে মহা এক বিপদ থেকে বেঁচে গেল।            

সেদিন রাতে স্কুল থেকে দেবরের বাসায় ফোন এল। সহকারী প্রিন্সিপাল আমার দেবরকে দেখা করতে বলেছেন। আমার দেবরের ছেলের তো আত্মায় পানি নেই। সে যে স্যারকে মিথ্যা কথা বলেছে সেটা কি ধরা পরে গেছে কি-না সেই চিন্তায় সে অস্থির। মায়ের কাছ থেকে প্যাদানি খেতে হবে ভেবে সে বাড়ি ফিরে আর বলে নি যে স্যারকে মিথ্যা কথা বলেছে।

আমার দেবর ভাবলেন ছেলে স্কুল কামাই করেছিল বলেই ডাক পড়েছে। পরের দিন আমার দেবর টাইকোট-জুতা পরে স্মার্ট হয়ে স্কুলে গেলেন।

প্রিন্সিপ্যালঃ আমি খুবই দুঃখিত আপনাদের এই করুন অবস্থার জন্য।

আমার দেবর অনেকটা আকাশ থেকে পড়লেন। দেবর ভেবেছিল প্রিন্সিপ্যাল ছেলের অনুপস্থিতির জন্য আচ্ছা করে ধোলাই দিয়ে বলবেন, আপনাদের কোন দায়িত্ববোধ নেই। আপনারা একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই ছেলেদের স্কুল কামাই করতে উৎসাহিত করেন। লেখাপড়ার ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। ক্লাসের সাতান্নজন ছাত্র যদি স্কুলে আসতে পারে তো আপনার ছেলে কেন আসতে পারবে না? এই স্কুলে ভর্তির আগেই কিন্তু আপনাদের সতর্ক করা হয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি......

প্রিন্সিপ্যালঃ কি ভাবছেন? আপনার ছেলের কাছ থেকে আমরা আপনাদের বর্তমান পরিস্থিতির কথা জেনেছি। আমরা তো আপনার পরিবারের পাশে আছি। ঈশ্বর কখন যে কাকে কি পরিস্থিতিতে ফেলেন!  

আমার দেবর কি উত্তর দিবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ তার দুষ্টু ছেলেটি কাকে কি বলেছে তা না জেনে কি উত্তর দেবেন তিনি! দেবর চুপ করে প্রিন্সিপ্যালের কথা শুনছিলেন।

প্রিন্সিপ্যালঃ আমাদের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররা মিলে এই বন্যা দুর্গতদের জন্য একটা ফান্ড খুলেছে। আপনাদের এই চরম সংকটের সময় আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে অল্প কিছু সহযোগিতা করতে চাই। লজ্জা করবেন না প্লিজ।

আমার দেবর প্রিন্সিপ্যালের মুখের দিকে তাকিয়ে কি বললেন ভাবছেন।

প্রিন্সিপ্যালঃ তা ঘরের পানি কি শুকিয়েছে?

দেবরঃ জি শুকিয়েছে।

খাবার দাবার নিশ্চয়ই রক্ষা করতে পারেন নি?

না মানে!

আর লজ্জা করবেন না মিস্টার গমেজ। আপনার ছেলে আমাদের জানিয়েছে গত পাঁচদিনের বৃষ্টিতে আপনাদের ঘরের ভেতরে হাঁটু পরিমান পানি ঢুকেছে।

এত্তক্ষনে আমার দেবর হুশ ফিরে পেলেন। বললেন, স্যার পানি যখন বাড়তে শুরু করেছিল আমরা নিচের তলার সব জিনিষপত্র দোতলায় সরিয়ে নিয়েছিলাম। আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের ত্রাণ সহযোগিতা লাগবে না স্যার। আপনি বরং ক্ষতিগ্রস্থ অন্য কোন পরিবারকে সহায়তা করুন যাদের সত্যি প্রয়োজন।

প্রিন্সিপ্যাল স্যার কোন বাঁধাই শুনলেন না। পিয়নকে ডেকে দেবরের গাড়িতে ত্রানের বস্তাটা উঠিয়ে দিতে বললেন। তিনটা বাড়ি আর একটা গার্মেন্টসের মালিক আমার দেবর কোর্টটাই পরে গাড়িতে করে বাড়িতে ত্রাণ নিয়ে এলেন।


আরও গল্প পড়তে ক্লিক করুন 

দুধের প্যাকেট 

ছাতা 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.