Header Ads

আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল

গতকাল ছিল বক্সনগরবাসীদের জন্য আনন্দঘন এবং বহুল প্রতীক্ষিত একটি দিন। গতকাল বক্সনগর সেন্ট অ্যান্থনীস ক্লাবঘরের শুভ উদ্বোধন হল।


সেন্ট অ্যান্থনীস ক্লাবঘর নিয়ে আমার লেখা 


ক্লাবঘর 


অনেকদিনের একটা স্বপ্ন পূরণ হল। বক্সনগর গ্রামে সেন্ট অ্যান্থনীস ক্লাবঘর পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হল। বক্সনগর গ্রামের একজন সন্তান হিসেবে, গ্রামের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ক্লাবঘর ঘিরে আমার অনুভূতি এবং প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। মাঝে অনেকগুলো বছর নির্দিষ্ট একটা ঠিকানা ছাড়াই ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। সেইসব অর্জন কারো চোখে পড়ুক বা না পড়ুক এখন থেকে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে তা হতে হবে চোখে পড়ার মত। কেননা ক্লাবঘর দৃশ্যমান হওয়ায় ক্লাবের প্রত্যেকটি সদস্যদের দায়িত্ব আরও কয়েকগুন বেড়ে গেছে।  

আমাদের একটা ক্লাবঘর আছে অর্থাৎ আমরা এখন আগের চেয়েও সংঘবদ্ধ ও সুসংগঠিত। শুধুমাত্র এই একটা ক্লাবঘর আমাদের দিতে পারে অনেক কিছু। বদলে দিতে পারে পরিবার, সমাজ, গ্রাম এবং গোটা দেশ। যখন কোন যুবক-যুবতি বা ব্যক্তি যে কোন আদর্শ সংগঠনের সাথে যুক্ত হয় তখন তারা হয় অন্য সবার চেয়ে আলাদা। কেননা একটা আদর্শ সংগঠনের ছায়ার ব্যক্তি নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ পায়।  

আমাদের ক্লাবের নাম সেন্ট আন্থনীস ক্লাব। নামটা শুনলেই বলার আর অবকাশ থাকে না এই ক্লাবের এবং সদস্যদের আদর্শ কি বা কেমন হওয়া উচিত। তাই আমরা একটা ক্লাবঘর পেয়েছি এবং সেখানে আমরা অনেক রাত পর্যন্ত সময় কাটাব, খেলবো, আড্ডা দিব শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্য যেন আমাদের না হয়।    

ক্লাবঘর এমন একটা স্থান হবে যেখানে সত্য, সুন্দর এবং সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা হবে। যেখানে গেলে প্রত্যেকটি সদস্যের মধ্যে পারস্পারিক আস্থা, বিশ্বাস ও সম্পর্ক দৃঢ়-মজবুদ হবে। একটা আদর্শ সংগঠন তার সদস্যকে সহনশীলতা শিখায়, সৃজনশীল ও দূরদর্শী করে তোলে, একত্রে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ ও ইতিবাচক গুনাবলি বিকাশে সহযোগিতা করে। সংগঠনের ছায়ায় সদস্যরা সুযোগ্য নেতৃত্ব দিতে শিখে যায়। তারা সবার মতকে শ্রদ্ধা করে, নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দ একসাথে উপভোগ করে। তাদের  মধ্যে দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতাবোধ তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে তাদের পরিবার, সমাজ ও পেশা জীবনে কাজে আসে।  তবে লেখাপড়া ও সংগঠনের কাজের মধ্যে অবশ্যই ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

বর্তমান ক্লাবের কেবিনেট ক্লাবঘর নির্মাণ করে তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার প্রমান দিয়েছে। ক্লাবের প্রত্যেকটি সদস্যকে সাধুবাদ জানাই। ক্লাবঘর নির্মাণে যারা শ্রম, অর্থ, পরামর্শ, সাহস ও উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকেও অশেষ ধন্যবাদ। এখন সদস্যদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। তাদের কাজের পরিধিও আরো বাড়াতে হবে।    

আমাদের সমাজ আজ অবক্ষয়ের চরম পর্যায়ে। সন্তানরা যেমন লেখাপড়ায় অনীহা, বিভিন্ন মাদকের নেশায় আসক্ত তেমনি অভিভাবকরাও মেগা সিরিয়াল, মোবাইল গেমস, চ্যাটটিংসহ বিভিন্ন অ্যাপস এ আসক্ত। অভিভাবক ও সন্তানদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যাওযার কারণে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের সমাজ আজ মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রশ্নের সম্মুখীন। মানুষ যখন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তখন সমাজ ও মানুষের মধ্যকার বন্ধন দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তখন সমাজে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরী হয়। সেই ক্ষেত্রে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক মধুর করার পেছনে একটি আদর্শ সংগঠনের ভূমিকা অগ্রগণ্য। মানুষে মানুষে সম্পর্ক যত গভীর মধুর হবে সমাজ তত সুসংগঠিত হবে, একে অন্যকে সহযোগীতা করার মানসিকতা তৈরি হবে।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, আমাদের গ্রামে এখন মানুষ মানুষে যে বিদ্বেষ, হিংসা, স্বার্থপরতা, অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা এসব সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে হলে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ একান্ত প্রয়োজন। ক্লাবের মতো সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক এসব অবক্ষয় ও অসুস্থতা দূর করে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর সেই কাজটি আমাদের সেন্ট আন্থনীস ক্লাবের মাধ্যমেই সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস ও আশা রাখি। আগেই বলেছি স্বপ্নের এই ক্লাবঘর ঘিরে আমার প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। প্রত্যাশা থাকবে, এই ক্লাবের সদস্যরা একসাথে পড়বে, খেলবে, শিখবে। ক্লাবঘর হবে সুস্থ-সংস্কৃতি বিকাশের মাধ্যম। জনহিতকর ও কল্যাণকর কাজের মাধ্যমে সবার সেবায় তারা এগিয়ে আসবে। তারা হবে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ। সেন্ট আন্থনীস ক্লাবের প্রত্যেকটি সদস্য সাধু আন্তনির গুণাবলী ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বক্সনগর সমাজে এক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে, বক্সনগর সমাজে বয়ে নিয়ে আসবে শান্তির বার্তা।  


No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.