আজ দুর্নীতি বিরোধী দিবস
দুর্নীতি |
আজ আন্তর্জাতিক
দুর্নীতি বিরোধী দিবস। ২০০৩ সাল থেকে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য
হচ্ছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব’।
সাধারণত ঘুষ লেনদেন, প্রতারনা, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এই সবই দুর্নীতি। দুর্নীতি দেশের শাসন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে, সম্পদের অসম বণ্টন ঘটায় এবং ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য বাড়ায়।
আজকের এই দিবসটি নিয়ে ভাবতে গিয়ে প্রথমে যে বাক্যটি আমার মনে এলো তা হচ্ছে, ‘সর্বাঙ্গে ব্যাথা ঔষধ দিব কোথা।‘ দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রেরন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে। তাই কোথায় থেকে শুরু করবো আর শেষ করবো কোথায়? আমাদের শিশুদের জন্মই হচ্ছে দুর্নীতির মধ্য দিয়ে।
ধরুন একজন গর্ভবতী মা তার সন্তান প্রসব করবেন। তিনি গেলেন সদ্য গজিয়ে উঠা চটকদার একটি ভুয়া চিকিৎসা কেন্দ্রে। সেখানকার ডাক্তার ভুয়া, নার্স ভুয়া, ঔষধ নকল। অবশ্য শহরের বড়বড় নামী হাসপাতালেও ভুয়া ডাক্তারের অভাব নেই। এইসব ভুয়ার মেলায় মা ও শিশুর বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ধরুন দুজনই বেঁচে ফিরেছেন।
ছয়
মাস বয়স থেকে শিশুটি খেতে শুরু করবে ভেজাল শিশু খাদ্য। ছয় বছর বয়স থেকে শিশুটি যাবে দুর্নীতিগ্রস্ত
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যেখানে লেখাপড়া না করেই ঘুষ দিয়ে বের হবে একটি ভুয়া
সার্টিফিকেট নিয়ে। সে যখন জীবিকার তাগিদে বিদেশ যেতে চাইবে পরবে দালালের খপ্পরে। পাসপোর্ট
করতে যাবে সেখানেও দালালদের ঘুষ দিয়ে পাসপোর্ট বানাতে হবে। ধরুন সে বিদেশ গেল এবং দুই
বছর পর ফিরে এলো। তখন এয়ারপোর্ট-এর কর্মীরাই তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলা টাকায় কেনা জিনিস
চুরি করবে।
যারা
উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে তারাও হবে অদক্ষ ডাক্তার, অদক্ষ প্রকৌশলী।
এরা যখন রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণ করবে একমাসের মাথায় তা ভেঙ্গে পড়বে সাধারন মানুষের মাথায়। যেসব বিল্ডিং-স্থাপনা করবে সেসব ধ্বসে
পড়বে আর নিরীহ মানুষ মরবে। অদক্ষ ডাক্তার ভুল চিকিৎসায় মানুষ মারবে।
দেশে
যারা চাকরি করবেন তাদেরও চাকরি পেতে হয় ঘুষ দিয়ে। যারা শিক্ষকতা করবেন তারা অনিয়মিত
এবং দেরি করে ক্লাসে আসবেন। গল্পগুজব করে সময় পার করবেন। প্রাইভেট/টিউশনির উপর জোর
দিবেন। আবার বছর শেষে ঘুষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশ করিয়ে দিবেন।
যারা
অন্যান্য ব্যবসায় যাবেন তারা মাছে-সবজিতে-ফলে ফরমালিন দিবেন, খাদ্যদ্রবে অস্বাস্থ্যকর
উপাদান মিশাবেন, দুধে পানি মিশাবে্ন, ওজনে কম দিবেন। যারা রাজনীতি করবেন তারা অদক্ষভাবে
দেশ পরিচালনা করবেন। মানুষের সেবা না করে নিজের সম্পদ কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেই প্রচেষ্টাই
করবেন। বিচারের জন্য যার কাছে যাবেন সেই পুলিশ হবে দুর্নীতি গ্রস্ত।
সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ঘড়ির কাটার মতো চক্রাকারে ঘুরছে। জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
আছে সর্বত্র। আজকে যার জন্ম সে কিভাবে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠবে? এর সমাধান
করবে কে?
আমরা
প্রতিবছর দুর্নীতি বিরোধী দিবসটি কেবল পালন করি। কিন্তু এর কোন প্রতিফলন নেই। বছর বছর
রাঙ্কিঙ্গে আমরা দুর্নীতিতে এগিয়েই চলছি।
আমাদের
দেশে দুর্নীতি ঠেকাতে দুর্নীতি দমন কমিশন রয়েছে। তবে শুধুমাত্র দুর্নীতি দমন কমিশনের
অভিযানই যথেষ্ট নয়। স্বচ্চ প্রশাসন ও জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত
করা গেলে দুর্নীতি দমন সম্ভব।
আমাদের
নিজেদের যার যার জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। আমাদের নৈতিক জীবনযাপন করতে হবে। দুর্নীতির
বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে দুর্নীতি
কমবে।
No comments