যেখানে সহজেই মিলে মানিক-রতন
জেমস্টোন |
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার মানিক-রতন’
কথাটা কি শুধুই কথার কথা, নাকি
সত্যি এর সত্যতা আছে? বাংলাদেশে ছাই উড়ালে মানিক-রতন পাওয়া যায় কিনা জানি না, তবে শ্রীলঙ্কায়
সত্যিসত্যি পাওয়া যায়।
শ্রীলঙ্কাকে বলা হয় ‘পার্ল অফ ইন্ডিয়ান ওসান’ যার অর্থ ইন্ডিয়ান সাগরের এক দামি মুক্তা। শ্রীলঙ্কা সমৃদ্ধ মনি-মুক্তার জন্য। এবার বলবো শ্রীলঙ্কার একটি প্রসিদ্ধ জেলা রাত্নাপুরার কথা। রাত্না মানে রতন আর পুরা হচ্ছে পুর। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এটি এমন একটি জেলা যেখানে রত্ন পাওয়া যায়। পাওয়া যায় বললে মনে হতে পারে যে রত্ন হয়ত কিনতে পাওয়া যায় কিন্তু আসল কথা হচ্ছে পুরো রাত্নাপুরা জুড়ে রয়েছে রত্নের ছড়াছড়ি।
রাজধানী কলম্বো থেকে ১০১ কিলোমিটার দূরে এই জেলার অবস্থান। এখানে প্রচুর পরিমানে ধান, রাবার এবং চা জন্মে। তবে রাত্নাপুরা সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও প্রসিদ্ধ কারণ শ্রীলঙ্কায় রত্নের যেসব খনি রয়েছে তার সবই এই রাত্নাপুরা জেলায় অবস্থিত।
এই জেলার মহাসড়ক, উপসড়ক কিংবা
যে কোন মেঠোপথের অলিগলি ধরে গেলেই দেখা যাবে খনি থেকে রত্ন উত্তোলন চলছে। বড় একটা নির্দিষ্ট
জায়গায় নয়, বরং কিছু দূরে দূরে ছোট বড় গর্ত করে চলছে এসব দামী মানিক-রতন উত্তোলনের কাজ।
গর্ত থেকে মাটি উঠিয়ে বড়বড় ছাকনির সাহায্যে পানিতে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে ধুয়ে এসব রত্ন বের
করা হয়। পরে সেগুলো সব ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট ছাঁচে কেটে পলিশ করে বিক্রি
করা হয়। সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা রত্ন উত্তোলন করে থাকে।
তার মানে যারা সরকার থেকে লিজ নিয়ে মাটি খুঁড়ে রত্ন উত্তোলন করবে তারাই কি শুধু রত্নের মালিক হবেন? মোটেও না। যে কেউ যখন তখন বনে যেতে পারেন কোটি টাকা দামের মানিকের মালিক।
কারণ সারা রাত্নাপুরার মাটিতেই যেহেতু খনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাই যে কোন বাড়িতে, রাস্তাঘাটে, নদী-নালায় এই রত্ন পাওয়া যেতে পারে। হয়তো কেউ গাছ রোপনের জন্য মাটি খুঁড়ছেন, মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে কোটি টাকার রত্ন। আবার প্রচুর বৃষ্টি হলে কোন স্থানের মাটি ধুয়েও বেরিয়ে আসতে পারে মানিকের বিশাল এক খণ্ড।
শ্রীলঙ্কানরা বিশ্বাস করে এই
রত্ন পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে যে কেউ যেখানে সেখানেই পেয়ে যেতে পারে
দামি একটা মানিকের অংশবিশেষ।
এবার একটা সত্যি ঘটনা শেয়ার
করছি। বেশ কয়েক বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ঘটনাটি সারা ফেলেছিল। এলাকার
মানুষ প্রতিদিন নদীতে স্নান করতে যায়। নদীর ঘাটে বড় একটা পাথরের খণ্ড অনেকদিন যাবত
পরে আছে। অনেকের পায়ে পাথরটি দিয়ে আঘাতও লাগে। কেউ কেউ পাথরটিকে পা দিয়ে মাড়িয়ে আরেক
পাশে রাখে, সেখানে আরেকজন আঘাত পেলে সেও আরেকটু দূরে ছুঁড়ে ফেলে। এভাবেই চলছিল। শেষে
এক গরীব জেলে পাথরটি বাড়ি নিয়ে আসেন এবং ঘরের প্রধান দরজা যাতে বারে বারে বাতাসে বন্ধ
হয়ে না যায় তাই দরজার সাথে ঠেকনা দিয়ে রাখেন।
দিন পনের পরে এক মাছের আড়তের
মালিক জেলের সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে আসেন। পাথরটি দেখে মালিকের সন্দেহ হয় এবং তিনি
কিছু না বলে পাথরটি দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিতে চান। সাধারন একটা পাথরের জন্য দশ হাজার টাকা দিতে চাইলে জেলের মনেও সন্দেহ
হয়। জেলে পাথরটি বিক্রি না করে পরের দিন নিয়ে যান শ্রীলঙ্কার মানিক গবেষণা কেন্দ্রে।
জানা যায় পাথরটির মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
জেলের ভাগ্য খুলে গেল নদীর ধারে অবহেলায় পরে থাকা একটা পাথরের কল্যাণে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ছাই উড়ালে সত্যি এখানে মানিক মেলে।
No comments