আমি এখন বাংলাদেশে
বাংলাদেশ ভ্রমণ |
সাড়ে তিন বছর পর গতকাল বাংলাদেশে
ফিরলাম। স্বাভাবতই আনন্দিত এবং আবেগাপ্লুত। প্রতিবারই আমার লাকেজ নিয়ে ইমিগ্রেশনে একটু
টেনশন থাকে। এবার কোন ঝামেলা ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার। তবে সমস্যা হল তিনজনে এক সাথে সিট
পাইনি। আমি আর মৈত্রী বসলাম একসাথে আর শান্তার সিট পড়েছে আমাদের দুই সিট পেছনে। ইমিগ্রেশনে
বলে দিল যে কার সাথে কথা বলে দেখুন একসাথে সিট ম্যানেজ করতে পারেন কি না।
আমি আর মৈত্রী যে সিটে বসেছি
সেই সিটের পাশের সিটে বসেছেন এক মহিলা। দেখতে ছোটোখাটো ফর্সা। বয়স ত্রিশের বেশি মনে
হল। মহিলাকে রিকুয়েস্ট করলাম আমরা তিনজন একসাথে এসেছি কিন্তু একসাথে সিট পাইনি। আপনি
যদি দয়া করে আমার স্বামীর সিটে বসেন এবং আমাদের তিনজনকে একসাথে বসার সুযোগ করে দেন
খুব উপকার হত। মহিলাটি জিজ্ঞেস করলেন আমার স্বামি কোথার বসেছেন। দেখাতেই উনি বললেন
পাশে আর দুইজন পুরুষ তাই তিনি সেখানে বসতে পারবেন না। আমি আর কিছু বললাম না।
মহিলা এসেছেন কোন একটা দলের
সাথে। নিজেরা নিজেরা কথা বলছিলেন, বুঝতে পারলাম দলে প্রায় বার/পনের জন। এদের একজন গিয়ে
বসেছেন আমাদের সামনে অন্য আরেকজনের সিটে জানালার পাশে। সিটের আসল মালিক এসে ইংরেজিতে বললেন, ম্যাডাম সিটটা আমাদের। মহিলা মিনমিন করে
বলতে লাগলেন, হায়রে, এই সিটেই বসতে হইব? কতো সিট খালি। ভদ্রলোক তার মেয়েকে তখন বাংলায়
বললেন, তুমি জানালার পাশে গিয়ে বস। ভদ্রলোককে বাংলা বলতে শুনে মহিলাটি আবার ব্যাঙ্গ
করে বললেন, বাঙ্গালী যে তাই এই অবস্থা। ভদ্রলোক সত্যি ভদ্র তাই তিনি মহিলার কথাটা শুনেও
কোন উত্তর দেন নি।
যাই হোক ঐ মহিলা গিয়ে তার নিজের
সিটে বসলেন। মহিলার সিট আমাদের সিটের অপর প্রান্তের তিন সিটের একটিতে। উনার সাথে আরও
দুইজন বসেছে। যেখানে মহিলার সিট পড়েছে সেখানেও উনার ভাল লাগল না। উনি আবার উঠে গিয়ে একটা খালি সিটে
বসলেন, এরপর উনার পাশের আরও একজন নাই হয়ে গেলেন। তিন সিটে শুধু একজন মহিলাই বসে রইলেন
একটু পর মহিলাটি পা মেলে সিটের উপর শুয়ে পড়লেন।
এদিকে আমাদের পাশের সিটে বসা
মহিলা শুয়ে থাকা মহিলার সাথে কথা বলছেন। তবুও মহিলা তার সহযাত্রীর পাশে গিয়ে বসলেন
না। আমার স্বামীর সিটে বসতে তার সমস্যা কারন পাশে পুরুষ। কিন্তু উনার একই দলের মহিলার
সাথে বসতে তো তার কোন সমস্যা ছিল না। তবুও তিনি বসলেন না।
আরামের ঘুম |
আমার আর মৈত্রীর পাসপোর্ট,
ইমিগ্রেশন কার্ড সব শান্তার কাছে। আর আমরা এত্তবড় একটা জার্নি করলাম আলাদা বসে। অথচ
আমাদের পাশের সিটের মহিলা তিনটি সিট একা পেয়ে পুরো সময় সিটের মধ্যে শুয়ে শুয়ে এলেন।
আমাদের পাশের মহিলাটা ইচ্ছে করলেই তার সহযাত্রীর সাথে বসে আমাদের তিনজনকে একসাথে বসার
সুযোগ করে দিতে পারতেন কিন্তু তিনি করলেন না। ভাবলাম এই পৃথিবীতে কতপদের-ই না মানুষ
রয়েছে।
আমরা ইচ্ছে করলেই পারি অন্যকে
একটু ভাল রাখতে, একটু আনন্দ দিতে। এতে কিন্তু আমাদের কোন ক্ষতি হয় না।
যাই হোক, শেষে আমাদের পাশের
মহিলাটি যা করলেন তাতে করে মনে হল আসলে উনার কাছে এ ধরনের অনুরোধ করা ভুল হয়েছে। কারন খাওয়া শেষে মহিলাটি চামচগুলো ব্যাগের
ভেতরে করে ভরে ফেললেন। মানে মহিলাটি প্লেনের চামচ চুরি করলেন। তাই একজন চোর কিভাবে
অন্যকে সহযোগিতা করবে? সে তো থাকবে ধান্দায়।
আমরা তিনজন আলাদা বসেই বাংলাদেশে
আসলাম। এখন আমি বাংলাদেশে। শেয়ার করব কেমন কাটাচ্ছি দিনগুলো।
No comments