Header Ads

যে ফল ফল নয়




কাঁঠাল এবং নারিকেল আমাদের দেশের দুইটি জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশের জাতীয় ফল যেহেতু কাঁঠাল তাই ফলের কথায় সবার আগে কাঁঠালের নামটিই চলে আসে। আর নারিকেল ছাড়া বাঙ্গালীর পিঠা পায়েস কিংবা উৎসব চিন্তাই করা যায় না। নারিকেল কাঁচা থাকতে আমরা যখন এর পানি পান করি তখন তাকে বলে ডাব আর সেটিও আমরা ফল হিসেবেই জানি।  

কিন্তু জানেন কি? শ্রীলঙ্কায় কাঁঠাল কিংবা নারিকেল এই দুটির কোনটিই ফলের আওতায় পরে না? 

আপনি কোন ফলের দোকানে কাঁঠাল ও নারিকেল পাবেন না। এই দুটি কিনতে হলে আপনাকে যেতে হবে সবজির দোকানে। কারণ শ্রীলঙ্কায় কাঁঠাল ও নারিকেল ব্যবহার করা হয় সবজি হসেবে। 

কিছুদিন আগে আমি নারিকেল নিয়ে লিখেছিলাম। বলেছিলাম শ্রীলঙ্কায় প্রতিদিনকার রান্নায় কিভাবে নারিকেলের ব্যবহার হয়। পিঠা বানাতেও এখানে নারিকেলের কদর রয়েছে। 

আমাদের দেশে নারিকেল আর ডাব একই গাছে ধরে। পাকলে বলে নারিকেল আর কাঁচা অবস্থায় বলে ডাব। আর এক ধরনের নারিকেল আমাদের দেশে হয় তবে খুব কম। সেটি হচ্ছে হলুদ রঙের নারিকেল। হলুদ নারিকেলকে বলা হয় ঔষধি নারিকেল। সাধারনত জন্ডিসের মত কিছু রোগের পথ্য হিসেবে পান করা হয়। 

শ্রীলঙ্কায় তিন ধরনের নারিকেল রয়েছে। সবুজ রঙের যে নারিকেল সেটিকে বলে পল। পল শুধুমাত্র সবজি হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এই নারিকেল কাঁচা অবস্থায় অর্থাৎ ডাব থাকতে পরে গেলেও কেউ এর পানি পান করে না। কারন এদের বিশ্বাস এটি খেলে ঠাণ্ডা লাগবে। সর্দি-কাশি হবে। 

শুধুমাত্র পানি পানের জন্য যে ধরনের নারিকেল এখানে হয় সেটিকে বলা হয় ত্যামিলি। ত্যামিলি দেখতে হয় গাড় কমলা রঙের এবং সাইজে পল অপেক্ষা কিছুটা ছোট। ত্যামিলিকে আবার কখনও পাকিয়ে খাওয়া হয় না। ত্যামিলি পেকে গেলে সেটি রান্নায় ব্যবহার করা হবে না। সাধারনত ত্যামিলি বেশি পেকে গেলে সেগুলো নারিকেল তেল বানানোর কাজে লাগে।

আমাদের দেশের মত হলুদ রঙের নারিকেল এখানে হয়। এটিকে শ্রীলঙ্কায়ও ঔষধি নারিকেল বলে এবং রোগীর পথ্য হিসেবে এটির জুরি নেই।

শ্রীলঙ্কার নারিকেল গাছগুলো অনেক লম্বা হয়ে থাকে। আবার ত্যামিলি গাছ অপেক্ষাকৃত খাটগোছের। 




এবার বলি কাঁঠাল সমাচার। আমরা সাধারনত পাকা কাঁঠাল ফল হিসেবে খাই। কোন কোন এলাকায় কাঁচা অবস্থায় কাঁঠালের তরকারি খায়। পেঁপের বেলায়ও কিন্তু একই রকম। কাঁচা খেলে সবজি আর পাকিয়ে খেলে ফল। 

তবে শ্রীলঙ্কায় কাঁঠালের জন্ম থেকে যৌবন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন নামে খাওয়া হয়। তাই পাকার স্তর পর্যন্ত কাঁঠালের আর পৌঁছান হয় না। কাঁঠালকে বলা হয় কচ। বিচি হওয়ার আগে কচি অবস্থায় যখন রান্না করে খাওয়া হয় তখন তাকে বলে প্যাহি। আর একটু বড় হলে বিচি ছোট থাকতে খেলে তাকে বলে কচ ম্যাল্লুম। আবার কাঁঠাল একটু বাত্তি হলে সেটিকে বলে কচ সাম্বল। মজার কথা হচ্ছে কাঁঠাল যে অবস্থায় খাওয়া হোক না সাথে নারিকেল থাকতে হবে। নারিকেল ছাড়া কাঁঠাল যেন অসম্পূর্ণ। আর পাকা কাঁঠাল! শ্রীলঙ্কায় পাকা কাঁঠাল এক দুর্লভ বস্তু। 

আমি মাঝে মাঝেই মেয়ের সাথে নাম, দেশ, ফুল, ফল খেলাটি খেলি। প্রথম যখন খেলেছিলাম, আমি ফলের জায়গায় নারিকেল আর কাঁঠাল লিখেছিলাম বলে আমার নম্বর কাটা গিয়েছিল😢😢। কারণ এসব নাকি ফল নয়, সবজি😜😜। 


No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.