Header Ads

১৬ই ডিসেম্বর

 

বিজয় দিবস 


কাল ছিল ১৬ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। বিদেশে বসে দেশের বিভিন্ন জাতীয়দিবস, উৎসব ও আনন্দ অনুষ্ঠানগুলো অনেক মিস করি। দেশে থাকলে এভাবে এতটা হয়তো অনুভব করতাম না। কাল সারাদিন ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়েছে। কারণ ছোটবেলায় ১৬ই ডিসেম্বর ছিল আমাদের জন্য এক বিশেষ আনন্দের দিন।  

আমি তখন হোস্টেলে থাকতাম। ১লা ডিসেম্বর এলেই চারিদিকে বিজয় দিবস আর বড়দিনের আমেজ অনুভব করতাম। ১৫ তারিখের মধ্যে বার্ষিক পরিক্ষা শেষ হয়ে যেত। ১৫ তারিখেই বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাজানো হত। সেইদিন থেকেই শুরু হয়ে যেত আমাদের উৎসব। কেননা ১৬ তারিখে মহান বিজয় দিবসের রাতে হত আমাদের প্রাক বড়দিনের অনুষ্ঠান। ১৬ তারিখ সকালে থেকে আমরা হোস্টেলের পড়ার ঘর আর খাবার ঘর সাজাতাম। একই সাথে বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত কুচকাওয়াজ দেখতাম। এমনিতে আমাদের টিভি দেখার সুযোগ হতো খুব কম। তবে এই দিনটি এলেই সকাল থেকে আমরা যতক্ষণ হোস্টেল সাজানোর কাজ করতাম টিভি ছাড়া থাকতো। ঘর সাজানো শেষ হলে রাতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্র্যাকটিস করতাম।  

গ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাইকে শুনা যেত কালজয়ী সব দেশাত্মবোধক গান। সেদিন আমাদের কোন নয়ন-কানুন মানতে হতো না। আমরা জোরে জোরে গলা ছেড়ে দেশের গান গাইতাম। দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা রাতের অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিতাম। সন্ধ্যায় শুরু হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হোস্টেলের মেয়েরা সবাই মিলে নাচ, গান, অভিনয় করতাম, শেষে ছিল বড়দিনের কীর্তন। রাতে থাকতো বিশেষ খাবার। সাথে একটা করে কমলালেবু।  

১৬ তারিখটা খুব হইচই করে কাটাতাম। থাকতনা রোজকার নিয়ম-কানুন, ছকে বাঁধা রুটিন। খাবার শেষে সব মেয়েরা একে অপরকে বড়দিনের ও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ঘুমাতে যেতাম। সারাদিনের হইচই আর ক্লান্তির পর রাতে আমাদের ঘুম আসত না কারণ পরের দিন ১৭ তারিখ বাড়ি ফেরার দিন। বাড়ি ফিরে সবার সাথে বড়দিন উৎসব পালনের আনন্দের কথা ভেবে আমরা রাত জেগে থাকতাম। এমনি দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট লাগলেও ১৬ ও ১৭ তারিখে একটু কষ্ট হত না। পরেরদিন সকাল থেকেই মেয়েরা বড়দিনের ছুটিতে বাড়ি যেতে শুরু করতো।

তাই ছাত্রজীবনে এই ১৬ই ডিসেম্বর ছিল খুব আনন্দের আর কাঙ্ক্ষিত একটি দিন।

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.