শ্রীলঙ্কায় আকস্মিক ঠাণ্ডা ও বায়ুদূষণ
বায়ুদূষণ |
শ্রীলঙ্কা
এমন একটি দেশ যেখানে একই সময় চারটি ঋতুর আমেজ উপভোগ করা যায়। যেমন আপনি যে কোন ঋতুতেই
আসেন না কেন দেশের একপ্রান্তে গ্রীষ্মকাল, আরেকপ্রান্তে বর্ষার অবিরাম বৃষ্টি, পাহাড়ি
এলাকায় সারা বছরই ঠাণ্ডা আবার কোথাও পাবেন বসন্তের ঘ্রাণ।
আমি
শ্রীলঙ্কার কলোম্বোতে আছি গত ১২ বছর ধরে। এখানে গ্রীষ্ম, বর্ষা, হেমন্ত কিংবা বসন্ত
সব ঋতু প্রায় একই রকমের। বর্ষায় বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। এসময় অতিবৃষ্টির কারনে একটু
ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। ডিসেম্বরে ভোরের দিকে হালকা শীত লাগে। তবে গরম কাপড় পরার মতো এমন
কোন ঠাণ্ডা নয়।
তবে
গত ৮ই ডিসেম্বর হঠাৎ করেই শ্রীলঙ্কায় বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। সূর্যের দেখা নেই, কোন কোন
এলাকা প্রায় অন্ধকার হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডিসেম্বর মাসে এই পরিবেশ ও আবহাওয়া স্বাভাবিক।
কিন্তু শ্রীলঙ্কার জন্য অস্বাভাবিক তো বটেই আর এই অস্বাভাবিকতাই শ্রীলঙ্কার আবহাওয়াবিদদের
চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। কেন হঠাৎ করে এই ঠাণ্ডা পড়লো আর সারা দেশের আকাশ ধোঁয়ায়
আচ্ছন্ন হয়ে সূর্যকে একেবারে ঢেকে ফেলল?
শ্রীলঙ্কান
ন্যাশনাল বিল্ডিং রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা এস,এন,বি,ও গবেষণা করে জানিয়েছে, দেশের কিছু
কিছু এলাকার বায়ুতে দূষিত পদার্থের উপস্থিতি মিলেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ভারতের
উত্তরাঞ্চলে চাষাবাদ শেষে ক্ষেতের আবর্জনা পোড়ালে এই বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। ঠিক
একই সময়ে ভারত মহাসাগরে নিম্নচাপের উৎপত্তি হলে বাতাসের তোরে ঐ বিষাক্ত ধোঁয়া শ্রীলঙ্কার
বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়।
এই
বায়ুর দূষণ এতোটাই ক্ষতিকর বাত্তালামুল্লা, কলম্বো এবং মানার এলাকাকে অতি জরুরি, জাফনা, মুলাতিভ কেগল ও দাবুল্লা এলাকায় জরুরি এবং
পুত্তালাম, হাম্বানথোটা এলাকায় অল্প জরুরি সতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছে।
দেশের
সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে গতকাল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে
দূষিত এই বায়ুর প্রভাবে জাফনায় ৩১৬টি গরু এবং ১৭০টি ছাগল মারা গেছে। জাফনা উষ্ণ এলাকা।
সারা বছরই সেখানকার আবহাওয়া গরম। ভারত থেকে আসা এই দূষিত বায়ুর প্রভাবে সেখানকার তাপমাত্রা
হঠাৎ কমে দাড়ায় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের হাত থেকে গৃহপালিত প্রাণীদের রক্ষা করতে
জাফনার অধিবাসিরা আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করলে ঐ এলাকার বায়ুতে দূষণের পরিমান
আরও বেড়ে যায় এবং পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করে। ঠিকমত শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করতে না
পেরে পশুদের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
শ্রীলঙ্কার বায়ুদূষণ |
সাবেক
কোভিড বিশেষজ্ঞ ডঃ আনিল জায়া সিঙ্ঘা বলেছেন, চলতি এই আবহাওয়া শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী
মা, হার্ট ও ফুস্ফুসের রোগে আক্রান্তদের জন্য চরম হুমকির। বায়ু মণ্ডলের এই দূষণের কারণে
শ্বাসকষ্ট, হার্ট অ্যাটাক, ফুস্ফুসের সমস্যা এমনকি প্যারালাইসের মতো সমস্যা দেখা দিতে
পারে বলে সতর্ক করেছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রয়োজনে বাইরে বেরুলে অতি অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভারতের এই বায়ু
দূষণের কারনে কিছুদিন আগে নতুন দিল্লি ও পাকিস্তানেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং অনেকে
আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই
পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকার থেকে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন এসময়
ময়লা আবর্জনা পোড়াতে ও লাকড়ির চুলায় রান্না করতে নিষেধ করা হয়েছে যেন কোন প্রকারেই
বাড়তি ধোঁয়ার সৃষ্টি না হয়। প্রয়োজন ছাড়া গাড়ি চালাতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, ধুলো-ময়লার
কাজ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। এছাড়া যারা নির্মল বাতাস পেতে বাইরে শারীরিক ব্যায়াম করেন
তাদের এবং শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করতে নিষেধ করা হয়েছে। পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে পরিবেশ আরও ভয়ংকর
হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
কেউ যদি অসুস্থবোধ করে তবে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। এসব রোগীদের কি ধরনের চিকিৎসা দেয়া হবে তার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা হাসপাতালগুলোতে দেয়া আছে।
আরও পড়ুন শ্রমদাম মানুষের সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে
No comments