পোশাকেই পরিচয়
শেখ সাদি হাসি মুখে বিনিতভাবে বাদশাকে জানালেন যে, তিনি প্রথমে একটি পুরানো জামা পরে দাওয়াত খেতে এসেছিলেন কিন্তু প্রহরীরা তাকে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেয়নি। পরে তিনি যখন দামী ঝলমলে পোশাক পরে এসেছেন তখন তাকে প্রাসাদে স্বাগত জানানো হয়েছে। তাই শেখ সাদির ধারনা বাদশা তাকে নয় বরং তার পোশাককেই
নিমন্ত্রন করেছেন। আর তাই তিনি না খেয়ে তার পোশাককে খাওয়াচ্ছেন।
৪র্থ কিংবা ৫ম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে শেখ সাদির এই গল্পটি আমি পড়েছিলাম।
এই গল্পটি এখন মনে হওয়ার কারন হচ্ছে সম্প্রতি
পত্রপত্রিকা, ফেসবুকসহ
প্রতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই
আলোচনার বিষয় পোশাকের
স্বাধীনতা। আমি পোশাক বিশেষজ্ঞ
নই। তবে যেটুকু বুঝি তা হচ্ছে একজন মানুষের ব্যাক্তিত্ব প্রকাশে পোশাকের ভুমিকা অনস্বীকার্য। পোশাক মানুষের রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
কোন ভিক্ষুক টাইকোট পরে ভিক্ষা চাইলে আমরা নিশ্চয়ই তাকে ভিক্ষা দিব না। ভিক্ষা করার জন্য নির্দিষ্ট
পোশাক রয়েছে। যেমন ভিক্ষুকের
পোশাক হবে ছেঁড়া, ময়লা, গন্ধ। আবার সেই ভিক্ষুকই
যদি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে টাইকোড পরে, তবে সে জাতে উঠে যায়। ইউনিফর্ম
পরা ছেলেমেয়ে
দেখলে বোঝা যায় তারা ছাত্রছাত্রী। কথায় আছে, প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারি। অর্থাৎ একজন মানুষকে বাইরের সাজসজ্জা পোশাক-আশাক দেখেই মানুষটি সম্পর্কে
আমাদের ধারনা হয়ে যায় মানুষটির সাথে আমাদের ব্যাবহার
কেমন হবে।
বেশ কিছুদিন যাবৎ একটি বিষয় আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সম্প্রতি পোশাকের স্বাধীনতা বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় আমার মনে হলো আমার মনে ঘুরপাক খাওয়া বিষয়টি সহভাগিতা করার এখনই উপযুক্ত সময়।
উপাসনালয়ে আমাদের পোশাক কেমন হবে?
মুসলিম ভাইয়েরা মসজিদে কিংবা ইদ্গাহে নামাজ পড়তে যান সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও সাদা টুপি পরে। যতবার মসজিদে যান অর্থাৎ দিনে পাঁচবার তারা পোশাক পরিবর্তন
করে সাদা পোশাক পরে নামাজ পড়তে যান। নামাজের আগে অজু করেন। বাড়িতে যেসব মা-বোনেরা নামাজ পড়েন তারা প্রতিবার ধোয়া-কাঁচা জামা-কাপড় পরেন। হিন্দু মা-বোনেরা প্রতিদিন
সকালে বাড়িতে পূজা দেন স্নানের পর ধোয়া শাড়ি পরে। মন্দিরে পুজা দেন লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরে।
আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি পোশাক বিক্রি হয় মুসলমানদের
ইদ উপলক্ষে, তারপর পুজায় এবং বড়দিন উপলক্ষে কিছু বিক্রি হয়।
এই যে ইদে এবং পুজায় এত্ত পোশাক বিক্রি হয় এসব ঝলমলে রঙ্গিন নতুন পোশাক কিন্তু মসজিদের ভেতরে কিংবা মন্দিরে পুজা দেয়ার সময় পরা হয় না। হিন্দু-মুসলিম ভাই বোনেরা নামাজ অথবা পুজা শেষে এসব পোশাক পরে ঘুরতে বের হন। মুসলিমরা
আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে
যান। হিন্দু ভাই-বোনেরা যান বিভিন্ন পুজা মণ্টপে ঘুরতে, পুজা দিতে নয়।
আমরা খ্রিষ্টানরা
নতুন ঝলমলে দামি পোশাক কোথায় পরি? গির্জায়, এক কথায় গির্জায়।
আমি নিজেও এর ব্যাতিক্রম
নই। কারন এই সংস্কৃতিতেই
আমার বেড়ে উঠা।
শুধুমাত্র রঙ্গিন কিংবা দামিই নয়, কিছু কিছু মা-বোনের পোশাক এতটাই উদ্ভট যে বুঝার উপায় নেই এরা উপাসনালয়ে
প্রার্থনা
করতে এসেছেন নাকি ফ্যাশন-শোর প্রতিযোগিতায়
এসেছেন। এসব পোশাক উপাসনালয়ের
পবিত্রতা, গাম্ভীর্যতা,
প্রার্থনার
পরিবেশ এবং ভক্তদের মনোযোগ নষ্ট করে।
কিছুদিন আগে আমার এক শ্রদ্ধাভাজন বোন বলছিলেন, কোন এক গির্জায় তিনি একজন যুবতিকে দেখলেন যে কিনা পুরো পিঠ খোলা আর পেটের নাভি বের করা এক ব্লাউসের
সাথে লেহেংগা পরে এসেছে। নিজের অজান্তে তার চোখ নাকি বার বার ওই যুবতির খোলা পিঠে গিয়েই আটকে গেছে। যদি একজন মহিলারই এই অবস্থা হয় তবে গির্জায় উপস্থিত ভাইদের অবস্থা কি হবে? (যদিও শুনতে বিষয়টি খারাপ লাগছে।)
আমরা কেন গির্জায় যাই? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, যিনি বিশ্ব পরাক্রম তার সামনে আমাদের কিভাবে যাওয়া উচিত? পবিত্র, নম্র ও বিনীতভাবে। আমাদের এই সাজ-পোশাক কি আমাদের পবিত্রতা
অথবা নম্রতাকে
উপস্থাপন করে? আমরা নিজেরা তো প্রলোভনে
পরে আছি, গির্জায় গিয়ে আরও অনেককে প্রলোভিত করছি। বিভিন্ন পর্ব কিংবা উৎসবে আমরা যখন দামী শাড়িটি পরে যাই তখন আমাদের মনে চিন্তা থাকে আমার চেয়ে দামী সুন্দর শাড়ি আর কেউ পরলো কিনা! তাই গির্জায় প্রার্থনায় মনোযোগ না দিয়ে আমরা নিজের এবং অন্যের বেশ-ভুষার দিকেই মনোযোগী হই।
বড়দিন-ইস্টার উপলক্ষে এখন প্রত্যেক ধর্মপল্লীতে,
গ্রামে পুনর্মিলন
অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান হয়। এসব অনুষ্ঠানে
ফ্যাশনেবল পোশাক পরা কিংবা প্রয়োজন হলে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে আমরা আমাদের সর্বচ্চ দামি এবং বাহারি
পোশাকের প্রদর্শন করতে পারব। তবে গির্জার ভেতরে পিঠখোলা আর পেট-নাভি বের করা পোশাক কখনই শোভনীয় নয়। গির্জার পোশাক হওয়া উচিত শালিন, শোভন এবং মার্জিত।
খুবই ভালো লেখা। এই চিন্তাধারণা এই প্রজন্মের মধ্যে বৃদ্ধিপাক, এই প্রত্যাশা করি।
ReplyDeleteঅনেক অনেক ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন।
ReplyDelete