Header Ads

অপেক্ষা, উপন্যাস



অপেক্ষা


1


Ôপ্রথমে দশ©নধারী পরে গুণ বিচারীÕ কথাটার মাহাত্ম্য হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে রুপা। তার এই রুপের কারণে জীবনে কম হেয় হতে হয় নি। ঘরে-বাইরে সবখানেই কাটা ঘাuয়ে নুনের ছিটার মতো জ্বলতে হয়েছে তাকে। দাদীর মুখে Ôকাকের ছানাÕ নামটি শুনেই বড় হয়েছে সে। তবে দাদী ঠিক Ôকাকের ছানাÕ বলতেন না, বলতেন Ôকাউয়ার ছাউÕ কাকের বণ© নিয়ে যার জন্ম, তার এরকম একটি নাম পাওয়া অন্যায় নয় বলেই মনে করে রুপা। তার মা এমন কালো নন! তার বাবা একটু কালো তবে রুপার মতো নন। তবে বিধাতার কি আশ্চয© লীলা! রুপার পরে দুটো বোন, দুজনই দেখতে রাজকন্যা। গায়ের রং একেবারে দুধে-আলতা যাকে বলে। দাদী কথায় কথায় বলেন,

Òএই কাউয়ার ছাউরে বিয়া করবো কেডা

রুপার গায়ের রং নিয়ে তার মায়ের মনেও বেজায় দুtখ। তিনি বেশ শঙ্কায় থাকেন, তাই তো এই কালো মেয়েকে বিয়ে করবে কে? টাকা পয়সা দিয়েও তো একে পাড় করা মুশকিল হয়ে পড়বে! 

শুধু মা আর দাদীই নন, রুপার গায়ের কালো চামড়া নিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের অনেকেই বিনা কারণে চিন্তিত। আর তাই মাঝে মাঝে তারা রুপাকে তার বিয়ে ভবিৎষতের কথা মনে করিয়ে দিতে ভুলেন না। এদিকে রুপা ধরেই নিয়েছে তার কোন দিন বিয়ে হবে না। তাই সে মনপ্রাণ দিয়ে লেখা পড়া করে। রুপার জেদ, সে লেখাপড়া করে বড় ডাক্তার হবে। একদিন স্কুলে পড়া দিতে পারে নি বলে এক শিক্ষিকা বলেছিলেন,

Òতোর বান্ধবীদের গায়ের চামড়া সাদা, ওদের লেখাপড়া না করলেও চলবে, ওদের বর এমনেই জুটবে। তোর যে রুপ, লেখাপড়া না করলে তুই আর কি করবি? তোকে বিয়ে করবে কে

সাদা চামড়ার আশীর্বাদে সত্যি রুপার বান্ধবীদের কেউ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আবার কেউ এসএসসি পরীক্ষা না দিয়েই বিয়েসাদী করে ঘর সংসার শুরু করল। কারো কারো ঘরে দু/একটি করে সন্তানও আছে। রুপার বান্ধবীরা যখন স্বামী-সন্তান,সংসার নিয়ে ব্যস্ত, রুপা তখন এসএসসি, এইস এস সি পরীক্ষায় খুব ভাল রেজাল্ট নিয়ে পাশ করলো। রুপার পরে যে বোন মিতা আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে আর মনিও এবছর এস এস সি পরীক্ষাথী© সবার ছোট ভাই নয়ন পড়ে ক্লাস এইটে।

এদিকে রুপার বোনেদের জন্য বাড়ীতে বিয়ের সম্বন্ধ আসতে থাকে। বোনদের সম্বন্ধ আসলে রুপা পাশের বাড়ীতে গিয়ে বসে থাকে। এটি রুপার দাদীর হুকুম। রুপাদের বাড়ীতে দাদীর হুকুম বিনা একটি গাছের পাতাও নড়ে না। পাশের বাড়ীতে বসে থাকাতেও প্রতিবেশীদের নানান উপদেশ, পরামর্শ এবং প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় রুপাকে। আর এসব প্রশ্নের সবটাই রুপার ভবিৎষত সংক্রান্ত যা রুপাকে আরো হীনমন্য করে তুলে। মাঝে মাঝে রুপার অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। যেখানে মানুষ মানুষের গায়ের চামড়ার কদর না করে মনুষত্ব্যের কদর করে। কিন্তু কোথায় পালাবে রুপা? এমন কোন জায়গার ঠিকানা যে রুপার জানা নেই।

মা ভয়ে ভয়ে দাদীকে বলেন, Òবড়টারে রেখে ছোটটাকে কিভাবে বিয়ে দিবো

Òতোমার কাউয়ার ছাউরে কে বিয়া করবো? সময় থাকতে থাকতে ছোট দুইডার বিয়া দেও বৌ। তা না হইলে বড়ডার কারণে ছোট দুইডাও আইবুড়া হইবো।Ó

সব কথা রুপার কানে যায়। মা এসব কথা বাবাকেও বলেন। বাবা চুপ থাকেন। বাবার চুপ থাকার অথ© তোমাদের যা ভাল মনে হয় তাই কর।

মিতার বিয়ে অনেকটা পাকাপাকি। বাড়ীর বড় মেয়ে হিসেবে কেউ রুপার কোন মতামত বা রুপাকে বিষয়টি জানানোর প্রয়োজনবোধও করে নি। রান্নাঘরে, শোবার ঘরে, খাবার ঘরে সবাই মিতার বিয়ে নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। রুপা যেন কিছুই শুনতে পায় নি এমনি থাকে। রুপার জন্য এধরনের পরিবেশ নতুন কিছু নয়। অবহেলার মধ্যেই বড় হয়েছে সে। স্নেহ-ভালবাসা-আদর কি জিনিস রুপা জানেই না।

এদিকে কয়েকটি মেডিকেল কলেজে ভতি© পরীক্ষার জন্য রুপা প্রস্তুত হতে থাকে। মিতার বিয়ের দিন পনের আগে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে রুপার পরীক্ষা ছিল। রুপা খাবার টেবিলে বসে কথাটা মাকে জানাতেই দাদী বললেন, Òঢাকায় যখন যাবি তাইলে মিতার বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেই বাড়ীতে ফিরিস।Ó

রুপার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কি ধরনের কথা! তার ছোট বোনের বিয়ে আর সে সেই বিয়েতে থাকতে পারবে না? কেন? সে কালো বলে? তবে মুখে সে কিছুই বলে না। কিন্তু রুপার বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচরে যায়। না, তার আগে বোনের বিয়ে হচ্ছে এজন্য নয় বরং তাকে কেউ পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্যই করছে না এজন্য। নিজেকে অপাংতেয় মনে হয় রুপার। রুপা মায়ের দিকে তাকায়। মা রুপার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নেন। রুপার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।

মিতা আর মনি যেন দাদীর দুই চোখের দুই মনি। মিতা আর রুপা থাকে এক ঘরে। মনি থাকে দাদীর সাথে অন্য ঘরে। রাতের খাবার শেষ হলে মিতা দাদীর ঘরে গিয়ে দেখে দাদী ঘুমের আয়োজন করছেন আর মনি পড়ার টেবিলে। মিতা দাদীকে বললো, Òদাদী আমার বিয়েতে দিদিকে থাকতে না বললে যে! কেন

Òনিজের ভাল পাগলেও বুঝে আর তুই বুঝস না

Òমানে

Òবিয়ার সময় কাওয়ার ছাউ যখন সবার সামনে দিয়া ঘুরঘুর করবো তখন মানুষ কি কইবো জানস

Òমানুষ আবার কি বলবে? তাছাড়া সবাই তো আমাদের পরিবারে কথা জানে।Ó

Òকি জানে

Òতুমি দিদিকে কেন পছন্দ করো না দাদী? সব সময় তুমি দিদির সাথে খারাপ ব্যবহার করো। দিদির কাছ থেকে আমাদের দূরে দূরে রাখতে চাও কেন

Ôতগো ভালর জন্যই আমি সব কিছু করি। আর শুন তর শ্বশুর বাড়ীর মানুষজন জানে যে তর বড় এক বোইন আছে। সে লেখাপড়া কইরা অনেক বড় হইতে চায়। বিয়া সাদীর ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ নাই। আর তর বিয়ার সময় তারা যদি দেখে তর বইনে কাউয়ার ছাউয়ের মতো কালা এই জন্য তার বিয়া হয় না। তখন তারা হয় তো ভাববো তর পেটের পুলাপানও তর বইনের মতো কালা হইবো। আর তখন তারা তর বিয়াই ভাইঙ্গা দিব। এইবার বুঝছস

Òকি যে বল না তুমি দাদী। তোমার মুখে কোন রাখঢাক নেইÓ

Òসত্য কথা কইতে অসুবিধা কি? যা যা বিরক্ত করিস না। এখন ঘুমাইতে যা।Ó

মিতা চুপ করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বাইরে যেতেই দেখে দরজার সামনে রুপা দাঁড়িয়ে। মিতা তাকে না দেখার ভান করে নিজের ঘরে চলে যায়। রাতে পাশাপাশি শুয়ে মিতা রুপাকে প্রশ্ন করে, Òদিদি তুমি কি আমার আর দাদীর কথা শুনতে পেয়েছ

রুপা কাঁদছিল। রুপার চোখের জলের সাক্ষী শুধুমাত্র মাথার নীচের বালিশটি। অন্ধকারে চোখ মুছে সে বললো, Òনা রে কি কথা বলছিলি তোরা? নিশ্চয়ই বিয়ের কেনাকাটার কথা

মিতা কোন উত্তর না দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।

বাড়ীতে বিয়ের আয়োজন চলছে আর রুপা চলে গেল ঢাকায় তার মামার বাসায়। মামাও তার পরিবার নিয়ে বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের বাড়ীতে যান। আর সেই সময় রুপা থাকে মামার বাসার কাজের মেয়ের সাথে। মিতার বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে মামা পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলেও রুপা আর গ্রামে ফিরে যায় না। রুপা দুইটি মেডিকেল কলেজ থেকে চান্স পায়। একটি ঢাকায় আর একটি কুমিল্লায়। রুপা চায় না তার পরিবারের সদস্যদের সাথে তার দেখা হোক। তার ইচ্ছে একবারে ডাক্তারি পাশ করে সে বাড়ী ফিরবে। তাই রুপা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পড়বে বলেই সিদ্ধান্ত নেয়।

রুপা চলে যায় কুমিল্লার কুচাইতলীতে। হলেই তার থাকা-খাওয়া। তবে পরিবার আর চেনাজানা জগৎ থেকে দূরে গেলেও গায়ের কালো চামড়া তার সাথেই যায় আর তাই কালো চামড়ার অপবাদ রুপার পিছু ছাড়ে না। হলে এসেও প্রকাশ্যে ইশারা-ইঙ্গিতে অনেকের অনেক টিটকিরি শুনতে হয় তাকে। মাঝে মাঝে লজ্জায়, কষ্টে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে রুপার। মনে মনে রুপা ভাবে আর কোথায় সে পালাবে? কোথায় গেলে কেউ আর তার রুপ নিয়ে বিরুপ কোন কথা বলবে না?

ক্লাস না থাকলে বেশীরভাগ সময় রুপা তার রুমেই কাটায়। অন্যান্য ছাত্রীরা বাইরে বেড়াতে গেলেও রুপা কোথাও খুব একটা যায় না। তবে স্থানীয় এক সহপাঠীর সহযোগিতায় দুটি টিউশনি যুগিয়ে ফেলে রুপা। দুজন ছাত্রীকে সপ্তায় তিনদিন করে পড়ায়।

গত দুইমাস ধরে রুপা একটি নতুন টিউশনিটি পেয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী নিমালী পেরেরা শ্রীলংকার নাগরিক। ইংলিশ মিডিয়ামে লেখাপড়া করে। শখের বশে বাংলাভাষা শিখে। প্রত্যেক শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টা একঘন্টা রুপা তার ছাত্রীকে বাংলা শেখায়। নিমালীর বাবা সামান্তা পেরেরা একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। স্বপরিবারে কুমিল্লা শহরে থাকেন। যদিও মেডিকেল কলেজ থেকে টিউশনিটি বেশ দূর তবুও অন্য দুই ছাত্রীর চেয়ে নিমালীকে পড়াতে রুপা বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করে।

এর কারণ পড়ানো শুরুর পর ঠিক ঘড়ির কাটা ধরে একঘন্টা পর মিসেস সামান্তা একটি সাদা রংয়ের খাম নিয়ে আসেন। তার পেছনে চা-নাস্তা নিয়ে আসে তাদের গৃহপরিচালিকা। মিসেস সামান্তা খামটি রুপার হাতে দিয়ে পরিচালিকাকে চা-নাস্তা রেখে যেতে বলেন। চা-নাস্তায় আমাদের দেশীয় সিঙ্গারা-সমুচার সাথে আরো থাকে শ্রীলংকার বিভিন্ন খাবার। এরপর তিনি ছাত্রীর লেখাপড়ার খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি রুপার খোঁজ-খবরও নেন। সেদিন হলে ফিরে রাতে রুপা আর কিছু খায় না। রুমে গিয়ে খাম খুলে চকচকে একটি পাuচশো টাকার নোট হাতে নিয়ে রুপা অনেকটা সময় বসে থাকে। শুধু এই টিউশনির টাকাটাই রুপা পড়ানোর সাথে সাথেই পেয়ে যায়। বাকী দুটো টিউশনির টাকা পায় মাস শেষে। কখনো কখনো পরের মাসের মাঝামাঝিও হয়ে যায়।

একদিন টিউশনি থেকে ফেরার পথে রুপা নিমালীদের এক কুকুরের পাল্লায় পড়লো। নিমালীদের বসার ঘর পেরিয়ে যেই না বাইরে সবুজ ঘাসের লনে এসে দাঁড়িয়েছে হঠাৎ সাদা ধবধবে এক কুকুর দৌড়ে রুপার দিকে ছুটে এলো। রুপা ভয়ে দৌড়ে গেটের দিকে ছুটতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলে দুজনেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লো। তখন সন্ধ্যা। কেউ কাউকে ভালমতো দেখতেও পাচ্ছে না। এদিকে কুকুরটাও ছুটছে। লোকটি উঠেই কুকুরটিকে থামাতে চেষ্টা করছে। আর রুপা কোন দিকে না তাকিয়ে গেইট দিয়ে দৌড়ে সোজা বাইরে।

বাইরে চেঁচামেচি শুনে নিমালীর মা বাগানের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলেন। এদিকে কুকুরটাও শান্ত হয়ে লোকটির সাথে বসার ঘরে ফিরে এলো। নিমালীর মা বাইরে বেড়িয়ে দেখেন মিষ্টার সামান্তার সেক্রেটারী সালিন্দা জয়োকোডি।

নিমালীর মা বললেন, Òলামাই কোহেদা? (মেয়েটা কোথায়?) ওর কিছু হয় নি তো

(দুজনের কথোপকথন ছিল সিংহালা ভাষায়)

Òআক্কা (দিদি) মেয়েটাকে দেখার আগেই তো ভয়ে দৌuড়ে পালিয়েছে।Ó

এদিকে এক গৃহপরিচালকা নিমালীর মায়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল। তিনি তাকে ইঙ্গিত করে বললেন, Òকতবার বলেছি বাইরের কেউ এলে জ্যাককে আটকে রাখতে।Ó

Òম্যাডাম জ্যাককে আটকেই রেখেছিলাম। হঠা কিভাবে যে ছাড়া পেল বুঝতে পারছি না।Ó

Òআমি ভাবছি মেয়েটা কি আর আসবে নিমালীকে পড়াতে

সালিন্দা বলল, Òউনি কি নিমালীর টিচার ছিলেন

Òহ্যাuÓ

Òউনি অন্ধাকারে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। জানিনা ব্যথা পেয়েছেন কি না

Òবল কি মাটিতে পড়ে গিয়েছিল

Òহুম। তবে মনে হয় খুব বেশী ব্যথা পান নি। ব্যথা পেলে এভাবে হান্ডেড মাইল বেগে ছুটতে পারতেন না।Ó

Òতুমি ব্যথা পেয়েছো

Òএকটু।Ó

সালিন্দা নিজের ঘরে চলে যায়। সালিন্দা এই বাড়ীতেই থাকে। মিষ্টার সামান্তার সেক্রেটারী হলেও সে মিসেস সামান্তাকে দিদি বলে ডাকে। মিসেস সামান্তাও সালিন্দাকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন। পরের সপ্তাহে বৃহস্পতিবার সকালে হলে রুপার ফোন এলো নিমালীর বাড়ী থেকে।

(কথোপকথন ইংরেজিতে)

রুপা ফোন ধরে বলল, Òহ্যালোÓ

Òআমি নিমালীর মা বলছি।Ó

Òজি ম্যাডাম, Òআমি রুপাÓ

Òরুপা একটা খুশির সংবাদ দিতে ফোন করলামÓ

Òখুশির সংবাদ

Òহ্যাu, তোমার ছাত্রী বড় হয়ে গেছে।Ó

Òমানে? বুঝলাম না।Ó

Òশোন আগামীকাল ছাত্রীকে পড়াতে হবে না। তবে আজ সন্ধ্যায় তোমাকে আমাদের বাড়ী আসতে হবে। নিমালীর Ôমাল&বারাÕ অনুষ্ঠান আজ।Ó

Òকি অনুষ্ঠান

Òমাল&বারাÓ

Òমালবারা সেটা আবার কি

Òইয়েস নাও সি ইজ বিগ গার্ল। অবশ্যই তুমি আসবে। তোমার জন্য আমরা অপেক্ষা করবোÓ

রুপার কাছে বিষয়টা পরিস্কার হলো না। তবে এটুকু বুঝতে পারলো আগামীকাল তার ক্লাস নেই। তবে আজ নিমালীদের বাড়ীতে কোন এক অনুষ্ঠান আছে তাই তাকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রুপার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। আগামীকাল তার টিউশনি নেই মানে পাঁচশো টাকা হাতছাড়া। রুপা অনুষ্ঠান, পাটি©, লোক সমাগম যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে। তবে আজ বিকেলে ছাত্রীর বাড়ী যাবে বলে সে ঠিক করলো। এর কারণ বিকেলে রুপার তেমন কোন কাজ নেই। তাছাড়া রুপা নিমালীর মাকে বেশ পছন্দ করেন। ভদ্রমহিলা খুব সুন্দরী নন। তার মতোই কালো। রুপাকে তিনি অবজ্ঞার চোখে দেখেন না। বরং তিনি যে রুপার প্রতি কেয়ারিং তা তার কথায় আচরণে বেশ বুঝতে পারে রুপা। বাড়ীতে গেলে রুপা তার নিজের গায়ের কালো চামড়ার কথা একেবারেই ভুলে যায়। সেখানে রুপা নিজেকে বেখাপ্পা মনে করে না।

বিকেলে রুপা ভাল একটা জামা পড়ে নিমালীদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। অন্যান্য দিন রুপা বাসে করে যায় তবে আজ সে সিএনজি নিল। নিমালীদের বাড়ীর কাছে এসে দেখে বিশাল এক গেট সাজানো হয়েছে যেন বিয়ে বাড়ী। গেট থেকে ভেতরে পুরো উঠান জুরে আলোক সজ্জা। রুপা এবার লজ্জায় পড়ে গেল। বাড়ীতে নিশ্চয় বড় কোন পাটি© কিন্তু সে তো সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে আসে নি। এমন কি সাথে কোন উপহারও আনে নি। তাছাড়া কি অনুষ্ঠান সেটাও পরিস্কার নয়। রুপা ভাবলো হয় তো আজ তার ছাত্রীর জন্মদিন। হ্যাu তাই হবে। নিমালীর মা বলছিলেন যে তার ছাত্রী বড় হয়ে গেছে। বড় হওয়ার অথ© তো জন্মদিনই বুঝায়।

রুপা সিএনজি থেকে নামলো না। সে সিএনজি নিয়ে চলে গেলে মার্কেটে। মার্কেট খুব বেশী দূরে নয়। যাওয়ার সময় রুপা ভাবলো কি নেওয়া যায় তার ছাত্রীর জন্য। তাছাড়া তার হাতে খুব বেশী টাকাও নেই। হঠা রুপার মনে পড়লো নিমালী একদিন বলেছিল আট© করতে তার খুব ভাল লাগে। তাই সে এক বক্স ফেব্রিকস পেইন্ট কিনলো। প্যাকেট করা হলে রুপা উপরে সুন্দর করে লিখলো Ôউইস ইউ হ্যাপি বাথ© ডেÕ

 

রুপা যখন নিমালীদের বাড়ীতে পৌuছালো তখন বাজে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। একটু শঙ্কা নিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই দেখে পুরো উঠোন জুরে গোল গোল টেবিল পাতা। প্রত্যেকটা টেবিলে কারুকাজ করা বড় গামলায় পানির মধ্যে সাদা ফুল আর জলন্ত মোমবাতি ভাসছে। এরই সাথে সফট মিউজিক চলছে। খুব সুন্দর পরিবেশ। অনেক অতিথির সমাগম হয়েছে। রুপা সোজা নিমালীদের বসার ঘরে প্রবেশ করলো। গিয়ে দেখে নিমালী ধবধবে সাদা ম্যাক্সি পরে বসে আছে। মাথায় সাদা রিডভেল। যেন ওয়েষ্টান© বিয়ের সাজ। রুপাকে দেখে নিমালীর মা এগিয়ে এসে বললেন,

Òতোমার দেরি দেখে আমি তো ভেবেছি তুমি হয় তো আসবে না।Ó

Òনিমালীর অনুষ্ঠান আর আপনি আসতে বললেন আমি না এসে কি পারি? তবে দেরী হওয়ার জন্য দুtখিত।Ó

Òনা না খুব বেশী দেরি হয় নি। মূল অনুষ্ঠান তো এখনো শুরু হয় নি। আমরা এখনই নিমালীকে বাইরে নিয়ে আসবো। তুমি বরং ...... (কারো দিকে ইশারা করে) সালিন্দা তুমি রুপাকে নিয়ে অতিথিদের সাথে বসো। আমরা এখনই বাইরে আসবো।Ó

তখন এক যুবক এসে রুপাকে বললেন, Òপ্লিজ কাম উইথ মিÓ

রুপা কোন কথা না বলে যুবকটির সাথে বাইরে বাগানে গিয়ে একটি টেবিলের কাছে দাঁড়াল। সালিন্দা রুপার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, (কথোপকথন ইংরেজিতে)

Òআমি সালিন্দাÓ

রুপা তার জীবনে কখনও কোন ছেলের হাত স্পশ© করে নি। নিজেকে গুটিয়ে রাখা যার স্বভাব সে কিভাবে একটা যুবকের হাত স্পশ© করবে? সাতপাu ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রুপা হাত না বাড়িয়েই বললো, Òআমি রুপাÓ

সালিন্দা তার হাতটি বাড়িয়েই আছে। আবারও খুব জোড়ে বললো, Òহ্যালো আমি সালিন্দা।Ó

রুপা বুঝতে পারলো হ্যান্ডসেক না করা পর্যন্ত ছেলেটি হয় তো এভাবেই থাকবে। তাই রুপা সালিন্দার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তবে রুপার ভেতরটাতে কেমন যেন সংকোচবোধ হচ্ছিল। যে রুপা তার জীবনে কোন দিন কোন মেয়ের সাথেই ভাল মতো কথা বলে নি, আর সালিন্দার মতো এমন এক সুদর্শন ছেলের সাথে কথা বলতে তার কথাগুলো কেমন যেন জড়িয়ে যাচ্ছিল।

সালিন্দা একটি চেয়ার পেছনে ঠেলে রুপাকে বসতে দিয়ে নিজেও অন্য একটি চেয়ারে বসলো। রুপা ধন্যবাদ দিয়ে চেয়ারে বসলো।

সালিন্দা বললো, Òআপনিই তাহলে আমাকে সেদিন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন

রুপা অবাক হলো Òমানে

Òমানে গত সপ্তাহে আপনি আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে দৌuড়ে পালালেন। পেছন ফিরে দেখলেনও না যে এই অধম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বেuচে আছে না মরে গেছে।Ó

এবার রুপা বুঝতে পেরে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেল। Òসরি আমি আসলে এমন ভয় পেয়েছিলাম যে

Òকুকুর কে এত্ত ভয়

এরই মধ্যে বেয়ারা এসে তাদের টেবিলে বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় রেখে গেল। রুপা আর সালিন্দা দুজনেই অরেঞ্জ জুস নিলো। আর একজন বেয়ারা এসে তাদের টেবিলে হাড© ডিংক্স রাখতেই সালিন্দা বললো,

Òএখানে এগুলোর দরকার নেই। এগুলো নিয়ে যাও।Ó

হঠা রুপা বলে ফেলল, Òআপনি ডিংক্স করেন না

Òকরি না তা নয়, তবে আশেপাশে মেয়েরা থাকলে এ্যাভয়েট করি। মেয়েরা এগুলো পছন্দ করে না তাই আর কিÓ

রুপা কোন উত্তর দেয়ার আগেই জোরে হাততালির শব্দে তাদের কথায় ছেদ পরলো। তারা সামনে তাকিয়ে দেখে নিমালীর মা নিমালীকে নিয়ে বাইরে আসছেন। তাই সবাই হাততালি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। অতিথিদের সবাই প্রায় শ্রীলংকার নাগরিক। এতক্ষণে রুপার চোখে পড়লো বাগানের ঠিক মাঝখানে সুন্দর করে একটি ষ্টেজ সাজানো হয়েছে। পুরোটাই লাল আর সাদা গোলাপ দিয়ে। পেছনে একটি ব্যানার। বড় করে নিমালীর ছবি। উপরে শ্রীলংকার ভাষায় অনেক কিছু লেখা। শুধু ইংরেজিতে লেখা আছে Òকংগ্রাচুলেশনস টু আওয়ার বিগ গার্ল©Ó

সালিন্দা বললো, Òনিশ্চয়ই আপনার জীবনের এই দিনটির কথা এই মূহুতে© আপনার মনে পড়ছে

Òনা আমি জীবনে কখনো জন্মদিন পালন করি নি। তাই এসবের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই।Ó

Òআমি আপনার জন্মদিনের কথা বলছি না।Ó

Òতাহলে

Òবলছি বিগ গার্ল হওয়ার অনুষ্ঠানের কথা।Ó

এবার রুপা একটু দ্বিধায় পড়ে গেল। কি বলছে এরা বিগ গার্ল বিগ গার্ল।

এদিকে কেক কাটা হচ্ছে কিন্তু কেউ Ôহ্যাপি বাথ© ডেÕ বলছে না। সবাই হাততালি দিয়ে কংগ্রাটুলেশনস এন্ড সেলিব্রেশনস গানটা গাইল। তবে শেষে Ôউইস ইউ আ হ্যাপি বিগ গাল© লাইফÕ এরকম কি যেন বললো।

রুপা সালিন্দাকে জিজ্ঞেস করলো, Òআচ্ছা এটা কিসের অনুষ্ঠান হচ্ছে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন কি

Òআপনি তো একজন শিক্ষিকা আবার মেডিকেলেও পড়ছেন শুনলাম। এখনো কিছু বুঝতে পারছেন না

Òনা আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছি না।Ó

Òআপনার ছাত্রী আর ছোটটি নেই। সে এখন Fতুমতি হয়েছে, সি গট পিরিয়ডÓ

এবার রুপা লজ্জা পাবে না অবাক হবে বুঝতে পারছে না। একজন মেয়ের মাসিক হয়েছে আর তাই এত্তবড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মানুষকে জানানো হচ্ছে। এটা আবার কেমন রীতি? এটা তো লজ্জার ব্যাপার, গোপন করার ব্যাপার। সালিন্দা কি তার সাথে মজা করছে নাকি সে- শুনতে ভুল করেছে?

সালিন্দা বিষয়টি বুঝতে পেরে বললো, Òআপনি মনে হয় লজ্জা পাচ্ছেন। কেন আপনাদের এখানে এই অনুষ্ঠান হয় না

রুপা মাথা নিচু করে বললো, Òনা, আসলে এটি যে কোন অনুষ্ঠানের পর্যায়ে পড়ে তা আমরা ভাবতেই পারি না। আমাদের দেশে এটি খুবই গোপনীয় এবং ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার।Ó

Òএতে গোপনীয়তার কি হলো? আমার মায়ের হয়েছে, আমার স্ত্রীর হয়েছে, আমার মেয়েরও হবে। এটা একটা প্রাকৃতিক এবং খুশির বিষয়।Ó

রুপা প্রসঙ্গ পাল্টাতে হঠা বললো, Òআপনার মেয়ের বয়স কত

Òমেয়ে? আমার মেয়ে

Òহ্যা

সালিন্দা একগাল হেসে বললো, Òমেয়েতো এখনো হয় নি। তবে ভবিষ্যতে হবে তো তাই বললাম আর কিÓ

Òও। আপনার স্ত্রী কি এখানেই থাকেন নাকি শ্রীলংকাতে

সালিন্দা আরো জোরে জোরে হেসে বললো, Òআমাকে কি বিবাহিত কয়েক ডজন মেয়ের বাপ বলে মনে হয় আপনার

Òতা না। স্ত্রীর কথা বললেন যে

Òবলেছি এজন্য যে যাকে আমি বিয়ে করবো সে তো ইতিমধ্যেই বড় হয়ে গেছে তাই না

রুপা আর চুপ থাকতে পারলো না সে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

সালিন্দা বললো, Òআপনি আজ দাঁত ব্রাশ করে নি

রুপা চমকে উঠলো Òমানেরুপার কান দুটি যেন হঠাৎ গরম হয়ে উঠলো লজ্জায়। ছেলেটা কি যে সব বলছে।

সালিন্দা বললো, Òহাসি পাচ্ছে অথচ জোর করে হাসিটাকে আটকে রাখেছেন। তাই ভাবলাম আপনি হয় তো আজ দাঁত ব্রাশ করে নি। ময়লা দাu আমাকে দেখাতে লজ্জা পাচ্ছেন।Ó

রুপা এবার যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। বুঝতে পারলো সালিন্দা সত্যি সত্যি বলে নি। তার সাথে মজা করেছে। রুপা অনেকটা সহজ হয়ে তার দাঁতগুলো বের করে দেখালো।

সালিন্দা বললো, Òনা দাu তো ঠিকই আছে, ময়লা নেই। তবে এভাবে দেখাতে হয় না। হাসির সময় দাu বের করে হাসতে হয়। নয় তো শ্রীলংকায় গিয়ে যখন এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসবেন। মানুষ ভাববে আপনি হয় তো দাu ব্রাশ করেন না। আপনার দাuতে ময়লা। তাই দাu লুকিয়ে হাসেন।Ó

এবার রুপা সত্যি সত্যি হা হা করে হেসে উঠলো। রুপা নিজেই অবাক হলো কতদিন পর সে এভাবে প্রাণ খুলে হাসছে। এদিকে সালিন্দা রুপার হস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।

Òজানেন হাসলে আপনাকে কতটা সুন্দর লাগে

Òমানে

Òআপনি যখন হাসছিলেন আপনাকে খুব সুন্দর লাগছিল। তাই সব সময় হাসিখুশি থাকবেন।Ó

রুপার কোন বন্ধু নেই। আসলে সে- সব সময় মানুষের সঙ্গ এড়িয়ে চলে। তার প্রতি মানুষের অবহেলা সে বুঝতে পেরেই নিজেকে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু সালিন্দাকে রুপার খুব ভাল লেগে গেল। সে সমস্ত জড়তা কাটিয়ে সালিন্দার সাথে সহজভাবে কথা বলতে থাকে।

Òআপনি খুব মজার মানুষ।Ó

Òআসলে আমাদের সবার জীবনেই কোন না কোন দুt কষ্ট থাকে কিন্তু দুtখকে নিয়ে বেশী চিন্তা করলে সুখও আমাদের ছেড়ে পালায়। তাই দুtখকে বেশী লাই দিতে নেই। সুখের চর্চা করতে হয়, আনন্দের চর্চা করতে হয়। তাহলে দুt আর ধারে কাছে আসবে না। কি বুঝলেন কিছু

Òএখানে কোথায় আছেন আপনি?Ó

Òএ বাড়িতেই তো আমি থাকিÓ

Òআমি গত দুই মাস যাবৎ নিমালীকে পড়াচ্ছি এর আগে কিন্তু আপনাকে আমি দেখিনি।Ó

Òবাড়ী গিয়েছিলাম ছুটিতেÓ

Òআপনার দেশ ছেড়ে এখানে থাকতে কষ্ট হয় না

Òনা, কষ্ট লাগার মতো কেউ তো আমার নেই। তাই যেখানে যাই সেটাই আমার ঘর, সেটাই আমার বাড়ী।Ó

Òকেন আপনার মা-বাবা

সালিন্দা এবার একটু গম্ভীয় হয়ে বললো, Òআমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। বড় এক বোন আছে ওর ওখানেই সপ্তাহখানেক ছিলাম। তার পর এখানে সেখানে সারা শ্রীলংকা চষে বেড়িয়ে চলে এলাম।Ó

Òআমি দুtখিত। না জেনে আপনাকে কষ্ট দিলামÓ

Òনা না মোটেও কষ্ট পাই নি। বরং খুব ভাল লাগছে এজন্য যে কেউ একজন আমার খোu খবর করছেÓ

এদিকে নিমালী প্রত্যেকটি টেবিলে গিয়ে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে, বড়দের আশীবা© নিচ্ছে আর সবাই তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তাদের টেবিলের কাছাকাছি এলে সালিন্দা রুপাকে বললো, Òআপনার ছাত্রী আসছে।

আপনি আবার Ôহ্যাপি বাথ© ডেÕ বলে বসবেন না যেনÓ

রুপা হাসতে হাসতে বললো, Òআমি তো গিফটের প্যাকেটে Ôহ্যাপি বাথ© ডেÕ লিখে এনেছি।Ó

Òকোন সমস্যা নেই। আপনি তো আর জানতেন না।Ó

তোদের টেবিলে এলে রুপা নিমালীকে বললো, Òকংগ্রাচুলেশন মাই ডিয়ার বিগ গার্ল নিমালীÓ

নিমালী রুপার পা ছুuয়ে আশিবা© নিল। এরপর সালিন্দার কাছে এলে সালিন্দা নিমালীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। এরপর শুরু হলো রাতের খাবার। খাবারের আয়োজন দেখে তো রুপা অবাক। সব মিলিয়ে প্রায় Õখানেক আইটেম। খাবারের এত আয়োজন নিয়েও রুপা আর সালিন্দার মধ্যে অনেক কথা হলো। রুপা যতটা সময় ছিল পুরোটা সময়ই সালিন্দা রুপাকে সঙ্গ দিল। অনুষ্ঠান শেষে সালিন্দা রুপার সাথে গেট পর্যন্ত গিয়ে একটা সিএনজিও ডেকে দিল।

রুমে ফিরে রুপার শুধু সালিন্দার কথাই মনে পরতে লাগলো। কি সহজ সরল একটি ছেলে। মনে কোন হিংসা নেই, জটিলতা নেই। যা মনে হয় তা- সরল মনে বলে ফেলে। আচ্ছা সালিন্দা কি তার বন্ধু? বন্ধুই তো বন্ধুর সাথে এভাবে মন প্রান খুলে কথা বলে। রুপা আবার মনে মনে ভাবে হয় তো সালিন্দা সবার সাথে এই একই এভাবে কথা বলে। তার সাথে বিশেষ কোন কিছু নয়। আবার ভাবে তার সাথে তো কেউই কখনো এভাবে কথা বলে নি। শুধু সালিন্দাই বললো তাহলে সালিন্দাকে তার ভাল লাগলে তো দোষের কিছু নেই। তাছাড়া সালিন্দা তো আর তার ভাল লাগার কথা জানছে না। সব ভেবে রুপা একা একা হাসতে লাগলো। সারা রাত রুপার ঘুম এলো না।

পরের দিন রুপা ঘুম থেকে উঠে দেখে সকাল নয়টা। এত বেলা অবধি ঘুমের অভ্যাস রুপার নেই। তবে কাল রাতে দুটো চোখের পাতা এক করতে পারে নি। তাই ভোরে ভাল ঘুম হয়েছে। শুধু ঘুমই নয় একটা স্বপ্নও রুপা দেখেছে। স্বপ্নে কথা মনে করে রুপা হাসতে লাগলো। ছিt কি সব স্বপ্ন সে দেখলো!

রুপা হাতমুখ না ধুয়ে বিছানায় বসে বসে স্বপ্নটা মনে করতে চেষ্টা করলো। হ্যাu মনে পড়েছে। ছোট্ট একটা নৌকায় করে সালিন্দা আর সে মস্ত এক বিলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। সে লাল পেড়ে সাদা একটা শাড়ী পড়েছে। রক্ত শাপলায় সারা বিল ছেয়ে আছে। রুপা শাপলা তুলছে। হঠাৎ একদল প্রজাপতি এসে ওদের নৌকার চারদিকে উড়ে বেড়াতে শুরু করলো। সালিন্দা রুপাকে একটা প্রজাপতি দিবে বলে ধরতে চেষ্টা করতে লাগলো। প্রজাপতিগুলো উপড়ে দিকে উড়ে যেতে থাকায় সালিন্দাও নৌকার উপর উঠে দাuড়িয়ে প্রজাপতি ধরার চেষ্টা করছে।

রুপা বলছে, Òতুমি বসো সালিন্দা পড়ে যাবে। প্লিজ তুমি বসো। আমার প্রজাপতি লাগবে না।Ó তবুও সালিন্দা ধরতে চেষ্টা করছে। এক সময় ঝপাস করে সালিন্দা পানিতে পড়ে গেল। সালিন্দা পানিতে পড়তেই রুপা হাসতে হাসতে নৌকায় লুটোপুটি খেতে লাগলো। এদিকে সালিন্দা তার হাত বাড়িয়ে বলছে, Òরুপা আমাকে ধর আমি সাuতার জানি না। আমাকে তোল প্লিজ।Ó ঠিক তখনই রুপার স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেল।

স্বপ্নটা মনে পড়তেই রুপা ভাবলো ইস& কেন যে পরেরটুকু দেখলো না। যদি সে সালিন্দাকে টেনে তুলতে না পারে তবে তো! ছি ছি কি সব ভাবনা। স্বপ্ন তো স্বপ্নই। নিশ্চয়ই সালিন্দা সাuতার জানে। রুপা ভাবলো আবার সালিন্দার সাথে দেখা হলে সে জেনে নেবে সালিন্দা সাuতার জানে কি না।

 

 

এদিকে নিমালীদের বাড়ীর অনুষ্ঠান শেষ হলে সব গুছিয়ে রাত দুটোর সময় সালিন্দা বিছানায় গেল। তবে সালিন্দারও ঘুম এলো না। তার চোখের সামনে শুধু রুপার নির্মল হাসি আর ডাগর ডাগর চোখ দুটো ভেসে উঠতে লাগলো। এত সুন্দর হয় মানুষের চোখ?

ছুটির দিনে সালিন্দা বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। তবে আজ সে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উঠোনে সবুজ লনে হাuটতে লাগলো। নিমালীর মা কান্তি সালিন্দাকে লনে দেখে কাজের বুয়াকে বাগানের টেবিলে দুÕ কাপ চা দিতে বললেন।

Òকি ব্যাপার আজ এত সকালে যেÓ

Òরাতে ঘুম হয় নি দিদিÓ

Òবল কি? কাল যে ধকল গেল। আমি তো বিছানায় গিয়েই এক ঘুমে রাত কাবার করে দিয়েছি। ভেবেছিলাম আজ একটু দেরী করে উঠবো তা আর হলো না। তোমার দাদা সাতসকালে অফিসে চলে গেছেন।Ó

Òঅফিসে? কেন কোন সমস্যা হয়েছে নাকি

Òকি জানি, আমাকে তেমন কিছু বলে নি। তবে ভোরে ম্যানেজারের ফোন এসেছিলÓ

Òআমাকে আগে বলবে না! আমি তাহলে চলি।Ó

Òতোমাকে যেতে হবে না। সকালে আমি তোমাকে ডাকার কথা বলেছিলাম। বলেছে দরকার হলে তোমাকে ডাকবে। তা তোমার কেন ঘুম হয় নি সেটা বল শুনিÓ

Òতেমন কিছু নাÓ

Òচাইলে শেয়ার করতে পার।Ó

Òএখনো শেয়ার করার মত হয় নি। হলে তোমাকেই তো বলবো সবার আগে।Ó

চা এসে গেল। দুজনে বাগানের গোল টেবিলটাতে বসলো। চা কাপে ঢালতে ঢালতে নিমালীর মা বললেন, Òসালিন্দা গতকালকের অনুষ্ঠান ভালই ছিল কি বল

Òহ্যাu তবে আমার মনে হলো বাংলাদেশের অতিথিরা খুব অবাক হয়েছে। ধরনের অনুষ্ঠানের সাথে এরা নাকি পরিচিত নয়।Ó

Òহ্যাu বেশ কয়েকজন গেষ্ট বিষয়টা নিয়ে কথা বলছিল।Ó

Òআরে আমাদের টিচারও কিন্তু যারপর নাই অবাক হয়েছেন।Ó

Òহ্যাu, বেশ কয়েকটি গিফ&টে Ôহ্যাপি বাথ© ডেÕ লেখা ছিল। হ্যাu, কাল তো তুমি নিমালীর টিচারকে নিয়েই খুব ব্যস্ত ছিলে মনে হলোÓ

Òনা মানে উনার পরিচিত তো কেউ এখানে ছিল না। তাই আমাকেই সময়টা দিতে হয়েছে।Ó

Òমেয়েটা কিন্তু খুব ভাল।Ó

Òহ্যাu ভালই মনে হলোÓ

Òআর কিছু

Òনা পয©ন্তই।Ó

Òঅগ্রগতির সম্ভাবনা আছে না কি

Òহলে তো তোমাকেই সবার আগে বলবোÓ

এসময় নিমালী এসে সালিন্দাকে উদেশ্যে করে বললো, Òমামা তুমি কিন্তু এখনো আমাকে কোন গিফ& দাওনিÓ

Òদিবো, আগে বল& তোর বাংলা শেখার কি অবস্থা

Òমামা খুব কঠিনÓ

Òনতুন ভাষা কঠিন তো হবেই। এই দুই মাসে কি শেখা হল বলতো

Òএমন করে বলছো যেন তুমি কত বাংলা বলতে পার।Ó

Òভাবছি আমিও বাংলা শিখবো। আচ্ছা বল তো Ôকহমা দ্যাÕ বাংলাতে কিভাবে বলে

Òতুমি কেমন আছ

Òবেশ তো! আচ্ছা বলতো Ôমামা অয়াটা গোডাক আদারেÕ এই কথাটা কিভাবে বলতে হয়

Òমামা কি ব্যাপার! কাকে আবার আদারে করতে শুরু করলে। মা শুনেছো

নিমালীর মা- ওদের সাথে যোগ দেন, Òহ্যাu তাই তো এটা শিখে তুমি কি করবে? মনে হচ্ছে তুমি বাংলাদেশের কাউকে এই কথাটা বলতে চাইছো

Òএকটু শিখে রাখি। বল& না কিভাবে বলতে হয়

Òবলবো নাÓ

Òযা তোকে কোন গিফ& দিব নাÓ

Òপ্লিজ মামা। ঠিক আছে আমি তোমাকে শেখাবো। গিফ& দিবে বল

Òদিব। আগে বলÓ

Òআমি তোমাকে ভালবাসি।Ó

Òকি বললি? আমি তোমাকে ভাল আছিÓ

Òআছি না বাসিÓ

Ò বাসি। আমি তোমাকে ভালবাসি। ঠিক আছে কি গিফ& নিবি বল

সালিন্দা নিমালীকে আপন ভাগ্নির মতোই ভালবাসে। আবার দুজনে খুনসুটিও করে। নিমালীর মা এদের খুনসুটি দেখে হাসতে হাসতে উঠে চলে গেলেন।

নিমালী বললো, Òমামা পতেঙ্গা যাবো। বাবাকে বল না।Ó

Òওকে হয়ে যাবে।Ó

Òমামা সামনের শুক্রবারÓ

Òশুক্রবার? শুক্রবার না তোর বাংলা ক্লাস আছে

Òএকদিন না শিখলে কিছু হবে নাÓ

Òআজও তো তোর ক্লাস নেই তাই না

নিমালী মুখ গোমরা করে বললো, ÒহুমÓ

Òতো পরপর দুই দিন নো ক্লাস

Òবাংলা তো আমি শখে শিখছি। নো ক্লাস হলে নো প্রবলেমÓ

Òশোন& যে কারণেই হোক শিখছিস তো। যেটা শিখবি মন দিয়ে শিখবি। কোন ফাuকিবাজি নাÓ

Òমামা তুমি আমার বাংলা ক্লাস নিয়ে এত চিন্তিত কেন? কোন রহস্য আছে নাকি

Òতুই ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করেছিস

Òনা Ó

Òচল আমিও করি নি। খুব ক্ষুধা পেয়েছে।Ó

Òকথা ঘুরাচ্ছো মামা Ó

Òপিচ্চি, বড়দের সাথে এসব কি কথা হচ্ছে

Òমামা আমি এখন আর ছোট নই কিন্তুÓ

Ò হো হো হো তুমি তো এখন বড় হয়ে গেছো আমি ভুলেই গিয়েছিলামÓ

নিমালী মামার দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হেসে বললো, Òমামা সাহায্যের প্রয়োজন হলে নিদ্বি©ধায় বলো লজ্জা করো না।Ó

Òএই গেলি তুইÓ বলে সালিন্দা নিমালীর দিকে তেরে এলো আর নিমালী দৌuড়ে ঘরে চলে গেল।

 

 

মি. সামান্তার অফিসে কোন একটা ঝামেলা চলছে তাই তাদের পতেঙ্গা যাওয়া হলো না। যথারীতি রুপা শুক্রবার তার ছাত্রীকে বাংলা পড়াতে এলো। এই আট দিন রুপার মনে হয়েছে যেন আটটি বছর। দিন যেন কাটতেই চাইছিল না। বাড়ীর গেট দিয়ে প্রবেশ করে রুপা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সে দশ মিনিট আগেই চলে এসেছে। রুপা মনে মনে ভাবতে লাগলো কি সমস্যায় পড়া গেল। সময় যে কাটছেই না। এখনও দশ মিনিট বাকী। কি করে আজ এত আগে চলে এলো। তার তো রকম হয় না। সে আস্তে আস্তে হাuটতে লাগলো। এদিকে সালিন্দাও উঠোনের বাগানে চায়ের কাপ নিয়ে বসে আছে যেন কারো জন্য আপেক্ষা করছে।

নিমালীর মা এসে বললেন, Òচা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খাওÓ

Ò দিদি তুমিÓ

Òকারো জন্য অপেক্ষা করছো নাকি

Òকই না তোÓ

Ò আমি ভাবলাম কারো আসার কথাÓ

Òনা কে আসবে

Ò তো আমাদের বাঙ্গালী টিচার আসছেÓ

সালিন্দা বুকটা যেন ধক& করে উঠলো। সে গেটের কাছে তাকিয়েই বললো, Ò আজ শুক্রবার আমার মনেই ছিল নাÓ

Òআমার তো মনে হয় আজকাল তুমি শুক্রবার দিনটাকেই বেশী মনে রাখÓ

সালিন্দা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই রুপা তাদের সামনে এসে বললো, Òগুড ইভিনিং। আজ একটু তারাতারি চলে এলাম।Ó

নিমালীর মা বললেন, Òতোমার ছাত্রী এখনো ঘুমে। অসুবিধা নেই তুমি আমার এই ভাইটির সাথে কথা বল। আমি তোমার ছাত্রীকে ডেকে দিচ্ছিÓ বলেই তিনি ঘরে চলে গেলেন। নিমালীর মায়ের কথা শুনে রুপা একটু লজ্জা পেল।

সালিন্দা বললো, ÒবসুনÓ

Òআমি আগে এসে কি অসুবিধা করলাম

Òনা না ভালই তো হল। আমি একা বসে আছি। একজন কথা বলার মানুষ পেলাম।Ó

দুজনেই চুপ করে রইলো। নিরবতা ভেঙ্গে সালিন্দা বললো, Òকই কিছু বলুনÓ

রুপা কি বলবে ভেবে পেল না। হঠাৎ সে বললো, Òআচ্ছা আপনি কি সাuতার জানেন

Òসাuতার

Òহ্যা

Òকেন

Òনা এমনেইÓ

Òজানি। শুধু জানি বললে ভুল হবে। যদি প্রতিযোগিতায় আপনার সাথে লড়তে হয় তবে অবশ্যই আমি জিতবোÓ

Òএত আত্মবিশ্বাস

Òঅবশ্যইÓ

Òআমিও কিন্তু ভাল সাuতার জানিÓ

Òনিশ্চয়ই আমার মতো নয়Ó

Òকিভাবে এত শিওর হচ্ছেন

Òকারণ আমি হচ্ছি জেলের ছেলে। জেলে পাড়ায় আমার বাড়ী। বুঝতেই পারছেন। পানির সাথে আমার ভাব কতটা।Ó

যে পরিমান উৎসাহ নিয়ে রুপা প্রসঙ্গটা শুরু করেছিল সালিন্দা জেলের ছেলে শুনে ঠিক সেই পরিমান দমে গেল। সালিন্দা রুপার পরিবত© খেয়াল করে বললো, Òকি ভয় পেলেন তো

রুপা কি বলবে ভেবে পেল না কারণ সালিন্দা জেলের ছেলে শুনে তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। সে জেলে পছন্দ করে না। জেলে কথাটা শুনলেই তার নাকে মাছের গন্ধ চলে আসে। জেলে পছন্দ না করার আরেকটা কারণ সে মাছ খেতেও পছন্দ করে না। সে আমতা আমতা করে বললো, Ò তাহলে তো আমি আপনার সাথে সাuতারে পারবো না।Ó

Òআপনি সাuতার শিখেছেন কোথায়

Òআমাদের বাড়ীতে পুকুর আছে সেখানেই শিখেছিÓ

Ò বেশ মজা তো। আপনি সমুদ্রে গিয়েছেন কখনো

Òনা এখনো যাওয়া হয় নিÓ

Òবলেন কি? আচ্ছা আপনাকে আমি সমুদ্রে নিয়ে যাব। যাবেন আমার সঙ্গে

একটু আগে হলেও হয় তো রুপা এক নিমিষেই হ্যাu বলে ফেলতো। কিন্তু সালিন্দা জেলের ছেলে শোনার পর সালিন্দার সাথে কোথাও যাওয়ার আগ্রহটা একেবারেই নিভে গেছে। তাই সে বললো, Òযাব কি না ভেবে দেখতে হবেÓ

Òকেন আমি বিদেশী বলে

Òসেটাও ভেবে দেখার বিষয়Ó

Òকবে উত্তরটা জানাবেন

Òআগে তো ভাবি। ভাবা যদি আজই শেষ হয়ে যায় তো কালই জানাবোÓ

Òআমি কিন্তু আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলামÓ

তখনই নিমালীদের ধবধবে সাদা কুকুরটি এসে সালিন্দার পায়ের কাছে ঘেuষে বসলো। সালিন্দা কুকুরটিকে আদর করতে করতে সিংহালা ভাষায় কি যেন বলতে লাগলো।

রুপার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে রুপা কুকুর দেখে খুব ভয় পাচ্ছে। সালিন্দা বললো, Òআপনি কি ভয় পাচ্ছেন? খুব ভাল। আপনাকে কিছু বলবে নাÓ

Ò দিন যে ভাবে তাড়া করেছিল আর আপনি বলছেন কিছু বলবে নাÓ

Òতখন তো আপনাকে চিনতো নাÓ

Òএখন বুঝি আমাকে চিনে

Òহ্যাu আমি ওকে আপনার কথা বলেছিÓ

Òআমার কথা? কি বলেছেন

Òবলেছি ঐদিন যাকে ধাওয়া করেছিলে সে হচ্ছে আমাদের নিমালীর টিচার। উনি খুব ভাল। উনি আমাদের আত্মীয়। তাই উনাকে আর বিরক্ত করবে না।Ó

Òআপনার কি মনে হয় কুকুরটি এতে সব বুঝে গেছে

Òকুকুর বলছেন কেন

Òতো কি বলবো

Òওর নাম তো জ্যাকÓ

Ò সরি। জ্যাক সব বুঝে গেছে

Òআচ্ছা আপনাদের বাড়ীতে পোষাপ্রাণী নেই

Òনা। আমাদের বাড়ীতে নেই। তবে আমাদের পাশের বাড়ীতে আছে। ওর নাম টমিÓ

Òবাহ& দারুন তো! দেখেন বাংলাদেশের মানুষের নামের সাথে শ্রীলংকার মানুষের নামের কোন মিল নেই অথচ বাংলাদেশের কুকুরের নামের সাথে শ্রীলংকার কুকুরের নামের কি দারুন মিল।Ó

Òজ্যাক আর টমি আপনি মিল দেখলেন কোথায়

সালিন্দা বললো, Òবাংলাদেশের মানুষদের নিজস্ব বাঙ্গালী নাম আছে। ঠিক তেমনি শ্রীলংকার মানুষদেরও নিজস্ব সিংহালা নাম আছে তবে কুকুরদের বেলায় কেন ইsরেজী নাম? কুকুরদের নাম সাধারনত হয় টমি-জিমি-জ্যাকি-রকি তাই না? কেন বলুন তো

রুপার কাছেও বিষয়টা অবাক লাগলো। রুপা মুচকি মুচকি হেসে বললো, Òআমি ঠিক জানি না। আপনি বলেন তো কেন

সালিন্দা বললো, Ò১৮১৫ সালে বৃটিশরা যখন শ্রীলংকা দখল করে নেয় তখন তারা শ্রীলংকানদের বাধ্য করে নিজেদের জমিতে বিশেষ করে চা বাগানে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। তখন শ্রীলংকানরা নিজেদের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে অস্বীকার করে। সে সময় বৃটিশরা ভারতের তামিলনাডু থেকে গরীব অসহায় লোকদের সস্তায় শ্রমিক হিসেবে নিয়ে আসে চা বাগানে কাজ করার জন্য। আর কিছু তামিল নারী পুরুষকে তারা ঘরের কাজের জন্য রাখে। শ্রীলংকানদের অপমান করার জন্য বৃটিশরা ঘরের কাজের লোকদের শ্রীলংকান সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী পুরুষদের নাম রাখেন যেমন ম্যানিকা, আপ্পু ইত্যাদি। তখন বৃটিশদের অপমান করার জন্য শ্রীলংকানরা তাদের বাড়ির পোষা কুকরদের নাম রাখতে থাকে টমি, রকি, জ্যাক, ম্যাক্স। এই হচ্ছে ইতিহাস। এবার বলেন তো বাংলাদেশের কুকুরদের নাম কেন ইংরেজি হয়

রুপা সমস্যায় পড়ে গেল। আসলে বাংলাদেশের কুকুরদের নামের ইতিহাস তার জানা নেই। সত্যি তো দেশী কুকুরদের বিদেশী নাম কেন? বাংলাদেশেও কি এধরনের কোন ইতিহাস আছে নাকি?

রুপা অকপটে বললো, Òআমি জানি নাÓ

Òবেশ। জেনে নেবেন।Ó

রুপার এই বিষয়টা আগে কখনই মাথায় আসে নি। তবে আজ তার মনে হচ্ছে বিষয়টা অবশ্যই জানা দরকার। কেন বাংলাদেশের কুকুরদের নাম ইংরেজী হবে। রুপা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাuচটা বেজে দশ মিনিট। সে বললো, Òআমার দশ মিনিট লেট হয়ে গেল যে। আমি আসিÓ বলেই সে নিমালীর ঘরে চলে গেল। নিমালী পড়ার টেবিলে অপেক্ষা করছিল। রুপা তাকে দেখে বললো, Òআমি দুtখিত। দেরি হয়ে গেল।Ó

Òনা ঠিক আছে। আপনি মামার সাথে কথা বলছিলেন তাই আর ডাকিনি।Ó

রুপা পড়াতে শুরু করলো। কিন্তু তার মন পড়ে রইলো সালিন্দাকে নিয়ে। সালিন্দা জেলের ছেলে। মাছের গন্ধ। সে কি ভাবছে এসব। সালিন্দার চিন্তা বাদ দিয়ে যখনই সে নিমালীর পড়ার দিকে মন দিল তখনই আবার মনে পড়লো আজ তাকে দশ মিনিট লেট করে যেতে হবে। কিন্তু তাকে বাড়তি সময় পড়াতে হলো না। ঠিক ছয়টায় নিমালীর মা যথারীতি টিউশনি ফি আর জল খাবার নিয়ে হাজির হলেন। গত আট দিন যে আনন্দ উত্তেজনা নিয়ে রুপার দিন কাটছিল আজ তাতে যেন ভাটা পড়ে গেল। আজ সে নিমালীদের বাড়ী থেকে প্রায় না খেয়েই এসেছে। হলে এসেও কিছু খায় নি। এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। এদিকে তার লেখাপড়ায় মন বসছে না। এখন রুপার মনে হতে লাগলো সালিন্দা আসলে তার জীবনের একটা উটকো ঝামেলা ছাড়া আর কিছু নয়। শুধুশুধু তার কথা ভেবে গত আট দিন সময় নষ্ট করেছে আর এখন সালিন্দা জেলের ছেলে শুনে শুধুশুধু তার মন খারাপ হচ্ছে। কি হবে লোকটার কথা ভেবে? তাকে ডাক্তার হতে হবে। এটাই শেষ কথা। পরের কথা ভেবে সময় নষ্ট করলে চলবে না। সে সিদ্ধান্ত নিল আর কোন সালিন্দা ফালিন্দা নয় এখন থেকে শুধু রুপা আর পড়াশুনা, পড়াশুনা আর রুপা।

রুপা উঠে ক্যান্টনে গিয়ে দেখে খাবার প্রায় শেষ। ডিমভাজা আর ডাল। তার খুব খিদে পেয়েছে। তাই সে ডাল আর ডিমভাজা দিয়ে ভাত খেয়ে পুকুর পাড় ধরে বেশ কিছুক্ষণ হাuটলো। হঠাৎ তার মনে পড়লো সালিন্দা তাকে সমুদ্রে বেড়াতে নিয়ে যেতে চেয়েছে। সে যাবে কিনা তাও জানতে চেয়েছে। রুপা ভাবতে ভাবতে রুমে গিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলো।

আজ রাতেও রুপা সালিন্দাকে স্বপ্নে দেখলো। আশ্চয©! কেন সালিন্দা বারে বারে তার স্বপ্নের মাঝে তাকে বিরক্ত করছে? অন্যায় ভারী অন্যায়!

আজ রুপা স্বপ্নে দেখলো সে সালিন্দার সাথে সমুদ্রে বেড়াতে গেছে। দুজনে হাত ধরে খালি পায়ে সৈকতে হাuটছে। আস্তে আস্তে ঢেউ বাড়তে লাগলো। সাথে আসতে লাগলো নানান ধরনের ঝিনুক। ঝিনুক দেখে রুপা দিশেহারা হয়ে পড়লো সেগুলো তোলার জন্য। সে বসে পড়ে ঝিনুক কূড়াতে লাগলো। সালিন্দাও তাকে সাহায্য করতে লাগলো। ঝিনুকে রুপার শাড়ীর আচল ভরে গেল। ঠিক তখনি বড় একটা সুন্দর ঝিনুক ঢেউয়ে তোরে চলে গেল। রুপা সালিন্দাকে বললো ধরো ধরো। সালিন্দা ঝিনূকটা ধরতে গেলেই বড় একটা ঢেউ এসে সালিন্দাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। সালিন্দা হাবুডুবু খেতে লাগলো। রুপা তার আচলের ঝিনূকগুলো ফেলে সালিন্দাকে তুলতে চেষ্টা করতেই আরো বড় এক ঢেউ এসে রুপাকে একে বারে তীরে ফেলে দিয়ে সালিন্দাকে সমুদ্রের মাঝখানে নিয়ে গেল। রুপা সালিন্দাকে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু সালিন্দাকে আর দেখতেই পেল না কোথাও।

দুটো স্বপ্নের অনেক মিল। স্বপ্ন দুটোতেই সালিন্দা তার জন্য কিছু আনতে গিয়ে পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। এর অথ© কি হতে পারে? রুপা যতই সালিন্দাকে ভুলতে চেষ্টা করে ততই তার মনে পড়ে। কি আজব! রুপা ভাবলো এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা তার জানতেই হবে। কিন্তু কাকে সে জিগ্যেস করবে?

স্বপ্ন দেখার পর বাকি রাতে রুপার আর ঘুম হলো না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে শক্ত যুক্তি দিয়ে সে তার সিদ্ধান্ত পালল্টে ফেললো। রুপা তার জীবনে প্রথম কাউকে পছন্দ করেছে তাই সে মাছওয়ালা, রিক্সাওয়ালা, বাদামওয়ালা কিংবা চটপটিওয়ালা যে- হোক না কেন সে তাকে পছন্দ করবে। কারণ তার পছন্দটা তো আর কেউ দেখছে না। সে তো আর কাউকে তার পছন্দের কথা বলতেও যাচ্ছে না, তার সাথে ঘুরতে বা সময় কাটাতেও যাচ্ছে না। সমস্যা কি? সবই তো হবে মনে মনে। এই মনে মনে কাউকে ভালবেসে যদি সে ভাল থাকে, নিজে একটু সুখ পায় মন্দ কি? সে তো আর কাউকে বিরক্ত করছে না। রুপা সিদ্ধান্ত নিল সে মনে মনে সালিন্দাকে তার মনটা দিয়েই দিবে।

যেমন কথা তেমন কাজ। রুপা প্রতিদিন পড়ালেখার ফাuকে ফাuকে শুধু রাতেই নয় দিনেও সালিন্দাকে নিয়ে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। রুপার সময় বেশ কেটে যাচ্ছে। ক্লাস থেকে ফিরে এসে সে মনে মনে সালিন্দার সাথে একা একা কথা বলে যেন সালিন্দা তার প্রেমিক।

 

 

পরের শুক্রবার রুপা নিমালীদের বাসায় পড়াতে গেল। বাগানের কোথাও সালিন্দাকে দেখলো না। যদিও রুপা আশা করেছিল সালিন্দাকে বাগানের টেবিলে এক নজর দেখতে পাবে। মনে মনে হতাশ হলেও তা বুঝার উপায় নেই। কারণ সালিন্দার প্রতি তার কোন দূব©লতা প্রকাশ পাক তা সে চায় না। নিমালীকে পড়ানো শেষ হলে সেদিন নিমালীর মা একা এলেন শুধুমাত্র সাদা খাম নিয়ে। এসেই খামটি রুপার হাতে দিয়ে বললেন, Òচলো রুপা আজ আমরা এক সাথে চা খাবো। তোমার আপত্তি নেই তো

Òনা না ঠিক আছে চলুন।Ó রুপা ভাবলো এখন নিশ্চয়ই সে সালিন্দার দেখা পাবে। মনে বড় আশা নিয়ে সে মিসেস সামান্তার সাথে ড্রইংরুমে এলো। রুপাকে সোফায় বসিয়ে রেখে নিমালীর মা খাবার ঘরে গেলেন। একটু পরেই ফিরে এলেন। পেছনে দুজন গৃহপরিচালিকা। বড় বড় দুটি ট্রলিতে করে খাবার সাজিয়ে এনেছেন। নিমালীর মা বললেন, Òআজ নিমালীর বাবা মামা কেউ বাসায় নেই। ওদের অফিসে কি একটা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে মিটিং চলছে। দুজনেই অফিসেÓ বলেই সোফায় বসে রুপার সামনে খাবারের প্লেট মেলে ধরলেন। এই বাড়ীতে রুপা যতটা ফ্রি থাকে আর কোথাও সে থাকে না। এমনকি তার নিজের রুমেও নয়। খেতে খেতে নিমালীর মা বললেন, Òতুমি আমার বোনের মত তোমাকে কিছু কথা বলিÓ

Òহ্যাu বলুনÓ

Òতোমার বাড়ীতে কে কে আছে

Òআমার মা বাবা, আমার দুই বোন আর এক ভাই।Ó

Òতুমি বুঝি সবার বড়

Òহ্যা

Òবোনেরা কি লেখাপড়া করে

Òএক বোনের বিয়ে হয়ে গেছেÓ

Òতোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি

Òএই তো লেখাপড়াটা শেষ করতে চাইÓ

Ò তা তো করবেই। আমি বলছিলাম বিয়েসাদি করবে না? তোমার পছন্দের কেউ আছে কি

Òনা আমার পছন্দের কেউ নেইÓ

Òকেমন ছেলে তোমার পছন্দ

রুপা যেন আকাশ থেকে পড়লো। তার মতো একটা কালো মেয়ে আবার নিজে ছেলে পছন্দ করে বিয়ে করবে? তবে সে শুধু বললো, Òআসলে আমি আগে ডাক্তার হতে চাই। তাছাড়া আপনি আমাকে এসব জিগ্যেস করছেন কেন

Òতুমি কি জান সালিন্দা তোমাকে অনেক পছন্দ করে

Òমানেরুপা অবাক হলো

Òমানে সে তোমাকে বিয়ে করতে চায়। যদি তোমার অমত না থাকেÓ

রুপা যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। সে সালিন্দাকে পছন্দ করে সেটা ঠিক কিন্তু সালিন্দা যে তাকে পছন্দ করবে সেটা সে মেনে নিতে পারছে না কারণ সে কালো একটা মেয়ে। কেউ তাকে পছন্দ করবে এটা অন্যায়। শুধু অন্যায় নয়, ভারী অন্যায়।

রুপা কি বলবে বুঝতে না পেরে হঠাৎ বলে বসলো, Òআমাকে কেন

Òসেটা তো আর আমি জানি না। বেশ কিছু দিন যাবৎ আমি লক্ষ্য করছিলাম। আজ জিগ্যেস করতেই মুখ খুলেছে। তুমি আজ আমাদের বাড়ীতে আসবে আর সময় থাকতে পারবে না বলে খুব মন খারাপ করছিল তাই বিষয়টা আমার নজর এড়াতে পারে নি। শেষে বলতে বাধ্য হয়েছে।Ó

এদিকে রুপা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে দেখে নিমালীর মা বললেন, Òআমার যদি ভুল না হয় তবে আমার মনে হয় তুমিও ওকে পছন্দ কর। তাই নয় কি

রুপা কি বলবে ভেবে পেল না।

মিসেস সামান্তা বললেন, Òলজ্জার কিছু নেই। আমি তোমার বড় বোনের মত। আর সালিন্দা আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সালিন্দা খুব ভাল ছেলে। তুমি যদি ওর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নাও তবে ঠকবে না সেই গ্যারান্টি আমি দিতে পারি। আর যদি তোমার অন্য কোন পছন্দ থাকে তবে সেটা আলাদা কথা।Ó

রুপা বললো, Òনা না আমার কোন পছন্দ নেইÓ

Òতার মানে তুমি সালিন্দাকেই পছন্দ করো

রুপা মুচকি হেসে চায়ের কাপটা রেখে বললো, Òআমার দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি আজ আসিÓ

Ò হ্যাu সালিন্দা নাকি তোমাকে সমুদ্রে বেড়াতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ওকে উত্তরটা তারাতারি জানিয়ে দিওÓ

রুপা লজ্জায় কোন উত্তর দিতে পারলো না। মাথা নেড়ে বললো, ÒআসিÓ

রুপা আজ রিক্সা নিয়ে হলে ছুটলো। তার মনে হচ্ছে সে যেন হাওয়ায় উড়ছে। সন্ধ্যার আকাশ আগে তার এত ভাল লাগে নি। আজ তার আকাশ দেখতে ভাল লাগছে। দূরের জোনাকি পোকাগুলো দেখতে ভাল লাগছে। রুপার মনে হলো আজ যদি হোষ্টেলে না গিয়ে সারাটা সন্ধ্যা এভাবে ঘুরে বেড়াতে পারত। ভাবতে ভাবতেই হোষ্টেলের গেইটের সামনে রিক্সা এসে থামলো।

রুমে ফিরে সালিন্দা আর মিসেস সামান্তার সাথে বলা কথাগুলো রুপা আবার মনে করতে লাগলো। নিমালীর মা বললেন সালিন্দা তাকে পছন্দ করে। তার যদি কোন সম্প© না থাকে তবে সে সালিন্দার কথা ভাবতে পারে। এদিকে সালিন্দা তাকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাবে বলেছে। সে যাবে কি না তা জানতে চেয়েছে। এর মানে কি সরাসরি ভালবাসার প্রস্তাব দেওয়া। সালিন্দার কথাটা পুরোপুরি বোঝা না গেলেও নিমালীর মা তো তাই বললেন।

কিন্তু তার যে জেলে ভাল লাগে না। রুপা আবার ভাবে সালিন্দা তো জেলে নয়, সে তো মি. সামান্তার সেক্রেটারি। তাহলে সালিন্দা নিজেকে জেলে বললো কেন? তার সাথে মজা করার জন্য? হয় তো ওর বাপ দাদা জেলে ছিল। হোক না সে জেলের ছেলে, জেলের নাতি, জেলের ধুতি, সে তো আর মাছ ধরে না। সে তো চাকরি করে। তাও আবার বিদেশে। হ্যাu, বাংলাদেশ তো সালিন্দার কাছে বিদেশই। তাহলে! তাছাড়া সে তো সালিন্দাকে পছন্দই করে। শুধুমাত্র জেলের ছেলে শুনে সে সালিন্দাকে ভুলে যাবে? না না তা হতে পারে না। তার জীবনে এই প্রথম কাউকে ভাল লাগলো। আর সেই মানুষটিও তাকে পছন্দ করে। তবে সে কেন তা পায়ে ঠেলে দেবে?

রুপা আবার ভাবে কিন্তু সে তো কালো একটি মেয়ে। সালিন্দা কেন তাকে পছন্দ করবে? সালিন্দা খুবই স্মাট, সুদশ© একটি ছেলে। সে আরো সুন্দরী কোন মেয়েকে জীবন সঙ্গি করতে পারবে। না না যা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। অন্যায় ভারী অন্যায়। সে শুধু মনে মনে সালিন্দাকে ভালবাসবে এর বেশী আর কিছুই হতে পারে না। তাছাড়া বিদেশী একটি ছেলে। রুপা এত আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে না সময় নেবে।

রুপা আরো সিদ্ধান্ত নিলো সে আগামী সপ্তাহে নিমালীকে পড়াতেই যাবে না। হয় তো এ মাসে সে আরো পাuচশো টাকা কম পাবে কিন্তু সে গল্পকে আর এগুতে দেবে না। হতেও তো পারে সালিন্দা তার সাথে মজা করছে। রুপা লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করলো। তাকে ডাক্তার হতে হবে। অনেক বড় হতে হবে। সে কালো এমনি এমনি তার বর বা ঘর কোনটাই জুটবে না। তাই নিজের ভবিষ্যৎ নিজেকেই দেখতে হবে। সে মযা©দার সাথে বাuচতে চায়। সে মনে মনে ঠিক করলো সে আর সালিন্দার কথা ভাববে না। কিন্তু ঘুরে ফিরে শুধুই সালিন্দার কথাই তার মনে পড়তে লাগলো।

সত্যিই রুপা পরের শুক্রবার নিমালীকে পড়াতে গেলনা। এদিকে সালিন্দা সকাল থেকে অপেক্ষা করে রইলো বিকেলে রুপা আসবে।

 

 

রুপা ভেবেছিল ডাক্তারী পাশ না করে সে আর বাড়ি ফিরে যাবে না। গত দুই বছরে সে একবারও বাড়ী যায় নি কিন্তু আজ বাড়ি থেকে ছোট ভাইয়ের চিঠি পেল মা অসুস্থ। এক মাস যাবৎ মায়ের শরীর ভাল যাচ্ছে না। বার বার নাকি রুপার কথাই বলছেন। এদিকে রুপা বাড়িতে কাউকেই নিজের ঠিকানা দেয় নি শুধু ছোটভাই ছাড়া। এখানে এসে সে ভাইকে একটা চিঠি লিখেছিল ভাইও মন খারাপ করে একটা উত্তর দিয়েছিল। এরপর দুপক্ষ থেকে কেউই আর যোগাযোগ করে নি। আজ প্রায় এক বছর পর ভাইয়ের চিঠি এল। রুপা মাকে দেখতে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।

রাতে শুয়ে শুয়ে সালিন্দার কথা ভাবলো সে কি সালিন্দাকে কিছু জানাবে? আবার ভাবলো না সালিন্দাকে না জানিয়ে নিমালীর মাকে জানানো যাক। নিমালীর মা জানলে নিশ্চয়ই সালিন্দা জানাবে। দেখা যাক সালিন্দা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় কি না। শনিবার বিকেলে রুপা নিমালীদের বাসায় ফোন করলো। নিমালীর মা ফোন ধরলেন।

Òহ্যালোÓ

Òআমি রুপাÓ

Òকি ব্যাপার রুপা কাল পড়াতে এলে না যে? শরীর ভাল তো

Òহ্যাu আমি ভাল আছি। আসলে আমার মা অসুস্থ আমি কয়েক দিনের জন্য বাড়ি যাচ্ছি। তাই আগামী সপ্তাহে পড়াতে আসতে পারবো কি না বলতে পারছি না।Ó

Ò তাই নাকি। কি হয়েছে? এখন তোমার মা কোথায় আছেন? বাড়ীতে নাকি হাসপাতালে

Òআজই ভাইয়ের চিঠি পেলাম। বিস্তারিত কিছু লেখা নেই। মা আমাকে দেখতে চাইছেন। Ó

Ò তা যাচ্ছো কবে

Òআগামী কাল সকালে। Õটার বাসে যাবো।Ó

Òঠিক আছে ভালমতো যেওÓ

রুপা ফোনটা রেখে দিল। তবে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল কারণ মিসেস সামান্তা সালিন্দার কথা কিছু বললেন না। রুপা নিচতলা থেকে ফোন করে তিন তলায় নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগ গোছাতে লাগলো। সে তারাতারি বিছানায় গেল তবে তার ঘুম হলো না।

সকাল সাড়ে চারটার এলাম© দিয়ে রেখেছে সে। আর তার ঘুম এলো ভোর তিনটার দিকে। এলাম© বাজতেই উঠে তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামলো রুপা। গেইট দিয়ে বাইরে বেড়িয়েই তার বুকের ভেতর ঢেuকির মতো কুটনি শুরু হয়ে গেল। একি গেইট থেকে একটু দূরে সালিন্দার মতো কে যেন দাuড়িয়ে আছে। হ্যাu সালিন্দাই তো! রুপা দেখতে পায় নি এমন ভঙ্গিতে হাuটতে লাগলো।

সকালে রিক্সা খুব একটা পাওয়া যায় না। কাউকে বলে দিলে সময় মতো নিতে আসে কিন্তু রুপা কাউকে বলতে ভুলতে গেছে। তাই সে রিক্সার জন্য একটু পেছনে তাকায় আবার সামনে তাকায় আবার হাটে। এমন সময় সালিন্দা রুপার সামনে এসে বললো,

Òশুভ সকালÓ

Òআপনি এত সকালে এখানে

Òপ্রাতভ্রমন করতে এসেছিÓ

Òআজই কি প্রথম

Òনা রোজই আসিÓ

একটু থেমে গম্ভীর হয়ে সালিন্দা বললো, Òগিয়েই কিন্তু মায়ের শরীরের অবস্থা জানাবেÓ

ÒজানাবোÓ

ঠিক তখনই একটা রিক্সা এসে গেল। সালিন্দা রিক্সা থামিয়ে বললো, ÒউঠÓ

রুপা রিক্সায় উঠা মাত্রই সালিন্দা রুপার পাশে উঠে বসলো। সালিন্দা রিক্সায় উঠবে রুপা মোটেও আশা করে নি। রুপা অবাক হয়ে সালিন্দার দিকে তাকালো যার অথ© তুমি কেন রিক্সায় উঠলে? সালিন্দা রিক্সাওয়াকে বললো বাস ষ্ট্যান্ডে যেতে।

রিক্সায় সালিন্দা বা রুপা কেউ কোন কথা বললো না। তবে রুপার মনে হচ্ছে এটিই তার জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় একটি মূহূত© ভোরের সকাল, উষার আকাশ, নিম© বাতাস সালিন্দার পাশে বসে রিক্সায় ছুটে চলা এর মতো আনন্দের জীবনে আর কি হতে পারে! বাতাস এসে রুপার চুলগুলো এলামেলো করে দিতে লাগলো। রুপা তার বাম হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো। আর তার ডান হাতটি ছিল হাuটুর উপর।

সালিন্দা তার বাম হাতটি দিয়ে আস্তে করে রুপার ডান হাতটি স্পশ© করলো। রুপার সারা শরীর কেuপে উঠলো। কি হচ্ছে তার? সালিন্দার স্পশে© তার বুক শরীর কাuপছে কেন?

সালিন্দা রুপাকে কানের কাছে মুখ এনে বললো, Òতারাতারি ফিরে এসো, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবোÓ

কথাগুলো শুনে রুপা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে সে যেন স্বপ্নে দেখছে। সে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে তার হাতের উপর রাখা সালিন্দার হাতটি শক্ত করে ধরে চোখ দুটো জোর করে বন্ধ করে রইলো।

সালিন্দা কিছু বললো না সে রুপার দিকে অপলক নয়নে চেয়ে রইলো। পুরোটা রাস্তা কেউ আর কোন কথা বললো না। বাসষ্ট্যাডে এসে রিক্সা থামলে সালিন্দা মৃদুস্বরে রুপাকে ডাকলো-

Òরুপা আমরা বাসষ্ট্যাডে এসে গেছি।Ó

রুপার চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। তার মনে হচ্ছে কেন এত তারাতারি তারা বাসষ্ট্যান্ডে চলে এলো! অন্যদিন তো আরো দেরি হয় আজ কেন এত তারাতারি এলো? রুপা চোখ খুলে দেখে সে সালিন্দার হাত ধরে আছে। রুপা হাতটি ছাড়িয়ে নিতে চাইলে সালিন্দা অন্য হাতটিও রুপার হাতের উপর রাখে মৃদু চাপ দিলো। তারপর রুপার দিকে চেয়ে হাসলো। এর পর নিজে রিক্সা থেকে নেমে রিক্সার ভাড়া দিয়ে রুপার ব্যাগ নিয়ে বাসে বসিয়ে দিয়ে বললো, Òতুমি বসো আমি আসছি।Ó

একটু পর সালিন্দা ফিরে এলো রুপার জন্য খাবারের প্যাকেট নিয়ে। সাথে কিছু ফল। সালিন্দা খাবার নিয়ে এসে দেখে বাস ইতিমধ্যে ভরে গেছে তাই বাস না ছাড়া পয©ন্ত সালিন্দা জানালার পাশে দাড়িয়ে রইলো। হঠাr বললো, Òআমি যদি তোমার সাথে তোমার বাড়ি যেতে চাই তুমি কি আমাকে তোমার সাথে নেবে

Òসত্যি যাবে

Òহ্যা

ÒচলোÓ

সালিন্দা হাসতে হাসতে বললো, Òআমি প্রায় তিন বছর যাবৎ তোমাদের দেশে আছি। আমার মতো একজন অপরিচিত ছেলেকে তুমি যদি এখন তোমার বাড়িতে নিয়ে যাও তাহলে যে আমি ঘাড়ে মাথা নিয়ে আর ফিরে আসতে পারবো না সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি।Ó

রুপা খুব জোরে জোরে হাসতে লাগলো। বললো, Òবাববা প্রাণের এত মায়া

Òতোমাকে নিয়ে ঘর বাuধার স্বপ্ন দেখছি যে রুপা। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আগে মরতে চাইনা আমি।Ó

রুপা এবার মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। ফোন নম্বার আর ঠিকানা লেখা একটা কাগজ বের করে রুপার হাতে দিয়ে সালিন্দা বললো, Òবাড়িতে পৌuছেই মায়ের অবস্থা আমাকে জানাতে ভুলবে না।Ó

ঠিক তখনই বাস ছাড়ার তোড়জোড় পড়ে গেল। বাস ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। সালিন্দা হাত নেড়ে রুপাকে বিদায় জানায়। রুপার মনে হয় তাকে যেন কেউ জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সে হাত uচু করার শক্তি পয©ন্ত পায় না। জীবনে অনেকবার সে একা ভ্রমন করেছে কিন্তু কারো জন্য তার কোনদিন এমন কষ্ট লাগে নি। তার মায়ের জন্য নয় এমন কি ছোট ভাইটির জন্যও নয়। তাহলে সালিন্দার জন্য তার এমন লাগছে কেন? একেই বলে ভালবাসা?

 

 

রুপা ঠিক সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাড়ি পৌuছাল। এপ্রিল মাস দিন বড় তাই অন্ধকার গাড় হয় নি। রুপার ভাই মানিক খেলা শেষে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিল। দিদিকে দেখে দিদির ব্যাগটা নিজেই বয়ে নিয়ে এল। এদিকে রুপার মনে যে কি এক আনন্দ সে নিজেই জানে না। বাস ছাড়ার সময় যে কষ্টটা শুরু হয়েছিল বার তের ঘন্টার জানি©তে তার সে কষ্টটা কখন যে সুখের আবেশে পরিনত হয়েছে সে নিজেই বুঝতে পারে নি। যে রুপা নিজের গায়ের কালো চামড়ার জন্য হীনমন্যতায় ভুগতো সে আজ সালিন্দাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছে।

Òদিদি তুমি কি আমার চিঠি পেয়েছিলে

Òহ্যাu তোর চিঠি পেয়েই আমি চলে এলাম। নয়ন মায়ের কি হয়েছে

Òগ্রামের ডাক্তাররা কিছু বলতে পারছে না। বলেছে ঢাকা নিয়ে যেতে হবে।Ó

Òবাড়ির সবাই কেমন আছে?

Òবাড়িতে গেলেই বুঝতে পারবেÓ

ভাইয়ের কথায় রুপা বুঝতে পারে বাড়িতে খারাপ কিছু ঘটছে।

Òদিদি তোমার ডাক্তার হতে আর কত দিন লাগবে

Òআরো অনেক দিন, মাত্র তো দুই বছর হলো। এখনো তিন বছর বাকী আছে।Ó

Òএখনো তিন বছর

Òহ্যাu কেন রে

Òনা ভাবছিলাম তুমিই তো মাকে ওষুধ দিতে পারতে

Òচল আগে গিয়ে দেখি মায়ের কি হয়েছে।Ó

Òজান দিদি, মনিদির বিয়ে হয়ে গেছে

রুপা অবাক হলো না। কারণ মিতার বিয়ের সময়ও সে ছিল না তাই মনির বিয়ের সময়ও তাকে জানান হবে না সে আর তার জন্য নতুন কি। রুপা শুধু বললো, Òকবে

Òবড়দিনের পরÓ

Òতাই! তুই বুঝি খুব মজা করেছিস

Òমজা না ছাইÓ

Òকেন

Òতোমার কথা খুব মনে পড়ছিল। তাছাড়া

Òতাছাড়া কি

Òনা থাকÓ

Òকেন কি হয়েছে বল

Òমনিদির বিয়ে নিয়েই তো মা আর দাদীর মধ্যে প্রচন্ড ঝগড়াÓ

Òঝগড়া কেন

Òমা বিয়ের সময় তোমাকে জানাতে চেয়েছিল কিন্তু দাদী বারণ করেছিল বলে মা দাদীর সাথে ঝগড়া করেছেÓ

Òমা দাদীর সাথে ঝগড়া করেছে? বিশ্বাস হচ্ছে না।Ó

Òদিদি, মা অনেক বদলে গেছে। এখন সারাক্ষণ দাদীর কথার প্রতিবাদ করে। মা-ই তো তামাকে আসার জন্য আমাকে দিয়ে চিঠি লিখিয়েছে।Ó

এবার রুপা অবাক হলো। হাuটা বন্ধ করে রুপা ছোট ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, Òসত্যি করে বল ভাই আমাকে আসার জন্য মা তোকে চিঠি লিখতে বলেছে

মানিক দিদির হাত ছুuয়ে বললো, Òতোমার গা ছুuয়ে বলছি দিদি মা- আমাকে চিঠি লিখতে বলেছে।Ó

রুপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, Òতাহলে মায়ের কিছু হয় নি

Òনা দিদিÓ

দুই ভাইবোন কথা বলতে বলতে বাড়ির কাছে চলে এল। রুপা বললো, Òদাদী তো তাহলে আমাকে দেখে খুব রেগে যাবেন তাই না

Òকি জানি চল গিয়ে দেখিÓ

রুপাদের বাড়িতে ঢুকতেই বাuশের চটির গেইট আছে। গেইট খুলতে খুলতে নয়ন চেuচাতে লাগলো, Òমা দিদি এসেছে দিদি এসেছে।Ó

রুপার দাদী বারান্দায় বসে পান সাজাচ্ছিলেন বললেন, Òআমার কোন দিদি আইছে? মনি নাকি মিতা

ঠিক তখনই ঘর থেকে রুপার মা বের হয়ে উত্তর দিলেন, Òআপনার মনিও আসে নি, মিতা আসে নি, এসেছে আমার রুপা।Ó

Òরুপা, রুপা কই থিকা আইলো

ততক্ষণে মানিক ব্যাগ বারান্দায় রেখে ফিরে আবার দিদিকে হাত ধরে টেনে আনতে গেল। রুপার দাদী ভাল করে চোখে চশমা গুজে অবাক হয়ে বললো, Òতুই এই আন্ধাইরা রাইতে কই থিকা আইলি

রুপা উত্তর দেওয়ার আগেই মা বললেন, Òরুপা ঘরে আয়Ó

রুপা দাদীর কথার কোন উত্তর না দিয়ে দাদীর পা ছুuয়ে আশিবা© নিয়ে ঘরে ঢুকলো। ছোটভাই বারান্দা থেকে গামছা নিয়ে কলপারে স্নান করতে চলে গেল। এই দুই মিনিটে যা যা ঘটলো তাতেই বাড়ীর নিয়মকানুন যে অনেকটাই পাল্টে গেছে তা রুপার কাছে পরিস্কার হয়ে গেল। রুপা মায়ের ঘরে প্রবেশ করা মাত্র মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাuদতে লাগলেন।

রুপা অবাক হয়ে বললো, Òকাuদছো কেন মা? তোমার কি হয়েছে? মানিক চিঠিতে লিখেছে তুমি নাকি অসুস্থ, কি হয়েছে তোমার

Òকি হয়েছে কিছু বুঝতে পারছিস না মা

রুপা আরো অবাক হলো! আসার পরই তো মা কাuদছে সে কি করে বুঝবে! রুপা চুপ করে রইলো। চোখ মুছে মা বললেন, Òসারা দিনে কিছু খেয়েছিস মা

মায়ের এমন প্রশ্নেও সে অবাক হলো। সে বাড়িতে এমন প্রশ্ন আগে কখনো শুনেনি। কেউ তার খিদের খবর, ভাল-মন্দের খবর জিজ্ঞেস করেনি। আজই প্রথম মা জিজ্ঞেস করছে। ব্যাপারটা তার কাছে কেমন যেন অদ্ভুদ লাগলো। তার মনে হলো তার মা সত্যি খুব অসুস্থ।

Òকিরে বলছিস না যে। সারা দিনে কি খেয়েছিস

সকালে রুপা সালিন্দার কিনে দেওয়া পরোটা আর ডিম ভাজি খেয়েছে। দুপুরেও সালিন্দার দেওয়া একটা আপেল খেয়েছে। এরপর আর কিছু সে খায় নি।

মা বললেন, Òসেই কোন দুপুরে একটা আপেল খেয়েছিস। আপেল খেলে কি পেট ভরে? মানিকের স্নান হয়ে গেছে তুই স্নান করে আয় আমি ভাত দিচ্ছি।Ó

রুপা ব্যাগ থেকে আপেলগুলো বের করে মায়ের হাতে দিল। মানিক স্নান করে ঘরে আসতেই মা বললেন, Òযা তো বাবা, দিদির জন্য দুই বালতি পানি কল থেকে চেপে দে তো।Ó

রুপা বললো, Òনা মা আমি চেপে নিতে পারবো। মাত্র খেলে এসেছেÓ

Òদিদি তুমি বসো আমি দিচ্ছিÓ বলেই ভাই কল চাপতে বাইরে চলে গেল। এদিকে দাদী বারান্দায় বসে বসে একা একা বকবক করছে।

রুপা স্নান করতে গেলে মা বললেন, Òবেশীক্ষণ স্নান করিস না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তার মধ্যে হঠাৎ করে পানি বদল হলে ঠান্ডা লাগতে পারে।Ó

আগে বাড়িতে থাকতে রুপাই ভাইয়ের স্নানের পানি চেপে দিত আজ ভাই তাকে পানি চেপে দিয়েছে। রুপা চুলে শ্যাম্পু করতে গিয়ে সালিন্দার কথা মনে পড়লো সালিন্দা তাকে বলেছে তার চুলগুলো খুব সুন্দর। এর আগে অনেকেই অবশ্য তার চুলের প্রশংসা করেছে। তবে সালিন্দা তার চুলের চোখেরও প্রশংসা করেছে। সবচেয়ে বড়কথা সালিন্দা তার মনের প্রশংসা করেছে। সে রুপাকে সম্মান দিয়েছে। সালিন্দার সাথে কথা বলে সে বুঝতে পারেছে মানুষের বাইরের রুপটাই আলস নয়। মানুষের ভেতরেও যে একটা রুপ আছে আর সেটাই মানুষকে বিচার করার মানদন্ড। রুপা সারা গায়ে পানি ঢালে আর একা একা হাসে। কখন যে সে সালিন্দাকে ভালবেসে ফেলেছে তা সে নিজেও বুঝতে নি।

স্নান সেরে এসে দেখে মা খাবার প্রস্তুত করে বসে আছে। ভাই বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আপেল খাচ্ছে। আজ রান্না হয়েছিল রুইমাছের ঝোল আর ডাল। রুপা আসাতে মা ঝটপট ডিমও ভেজে ফেলেছেন। রুপা খেতে বসতে বসতে বললো, Òমা আবার ডিম ভাজতে গেলে কেন

Òতুই তো মাছ বেশি পছন্দ করিস না তাই ডিম ভাজলাম।Ó

আগে বাড়িতে রুপার জন্য আলাদা কিছু হতো না। খেলে খাও নইলে না। মিতার চিংড়ি আর ইলিশ মাছে এলা©জি আছে। যেদিন চিংড়ি বা ইলিশ মাছ হতো সেদিন মিতার জন্য আলাদা কিছু হতো। মনি বাইন মাছ, গজার মাছ খেতে পছন্দ করতো না যেদিন বাড়িতে এসব রান্না হতো সেদিন ওর জন্যও আলাদা কিছু হতো। আলাদা কিছু হতো না শুধুমাত্র রুপার জন্য। আজই প্রথম রুপার জন্য মা একটি ডিম মরিচ, পেuয়াজ দিয়ে ভেজে দিয়েছেন। অন্য সময় হলে হয় তো রুপা খেতো না। কিন্তু সালিন্দার কথা মনে পড়লো। সালিন্দা সব সময় বলে এই পৃথিবীতে আমরা মাত্র কিছু দিনের জন্য এসেছি কেন অন্যের সাথে রাগ অভিমান করে অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে কষ্ট পেয়ে জীবনটাকে সমস্যাময় করে তুলবো। সবকিছু সহজ ভাবে নিতে হবে। যা গেছে গেছে। রুপা আগে ডিমটি পাতে নিয়েই খাওয়া শুরু করলো। দাদী সামনের বারান্দায় বসে চেuচাতে লাগলেন -

Òআমার খাওনের কথা কাউর মনে নাই এই বাড়িতেÓ

রুপা বললো, Òমা দাদীকে খেতে দাও নি

Òতার খাবার সময় এখনো হয় নি।Ó

Òদাদী খাবার চাচ্ছে যে

Òতোকে খেতে দেখেছে তাই হিংসের জ্বালায় চেuচাচ্ছেÓ

দাদীর বাহানা রুপার জানা আছে তাই রুপা চুপ করে খেতে লাগলো। এরই মধ্যে হঠাৎ দাদী এসে চেuচিয়ে বললো, Òএই যে রাক্ষসীর দল বাড়ীতে একটা মুরব্বী আছে তার কি খেয়াল আছে? মুরব্বী রাই্খ্যা খাইতে বইছÓ

রুপা হকচকিয়ে গেল। রুপার মা শান্ত স্বরে বললো, Òআপনি গিয়ে সামনের বারান্দায় বসেন আমি খাবার দিচ্ছিÓ

Òবলি বাজে কয়ডা

Òআটটা এখনো বাজে নাই।Ó

Òমিছা কথা কইবা না আমার লগে। মানিক দেখতো কয়ডা বাজে

মানিক বললো, Òদাদী আটটা বাজতে এখনো দশ মিনিট বাকিÓ

Ò কইছে তরে। সব কয়ডা শয়তান। সব কয়ডা এক জোট হইয়া আমার পিছে লাগছে।Ó বলতে বলতে দাদী সামনের বারান্দায় চলে গেলেন। রুপার মা খাবার সাজিয়ে দাদীকে দিয়ে এলেন। ভাত খেয়ে রুপা ফ্যানের নিচে বসে চুল শুকাতে শুকাতে বললো, Òমা আমি আমার ব্যাগটা ঘরে রেখে আসি।Ó

মা বললেন, Òতুই আজ রাতে আমার সাথে ঘরেই ঘুমাবি। তোর বাবা ঘরে এখন আর ঘুমায় না। আমার সাথে ঘরে মানিক থাকেÓ

রুপা অবাক হয়ে বললো, Òকেন

Òতুই চলে গেলি, মিতার বিয়ে হয়ে গেল। তোদের ঘরটা তো খালিই পরে আছে। তাই তোর বাবা ঘরেই শোয়।Ó

Òমা তুমি কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছোÓ

Òনা লুকাচ্ছি না। তোকে সব বলবো বলেই এখানে আসার জন্য খবর পাঠিয়েছি।Ó

দাদী ভাত খেয়ে নিজের ঘরে যাবার সময় মায়ের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললেন, Òদেখ বৌমা আমি এখনো বেuচে আছি। এই বাড়িঘর সব আমার অথচ তুমি আমার উপর দিয়ে চলতে চেষ্টা করছো। এর ফল ভাল হবে না।Ó

রুপার মা বললেন, Òএতদিন তো আপনার কথা শুনেই এসেছি। কোন ফলটা ভাল হয়েছে

দাদী আর কথা না বাড়িয়ে ঘটঘট করে নিজের ঘরে চলে গেলেন। দাদীর কথায় মায়ের এমন প্রতিবাদ শুনে রুপা বিষ্ময়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। মা দাদীর খাবারের থালাবাটি গুছিয়ে আনতে গেলেন। সারাদিনে ক্লান্ত থাকায় রুপা বিছানায় গিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো। মা বিছানায় এসে দেখেন রুপার নিশ্বাস ভারী হয়ে পড়ছে। মানিক প্রতিদিন যেমন একপা মায়ের গায়ের উপর দিয়ে ঘুমায় আজও রুপার গায়ের উপর পা তুলে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। মা মানিককে নিজের কাছে সরিয়ে এনে শুয়ে পড়লেন তবে সারা রাতে তার ঘুম এলো না। কিভাবে রুপাকে সব কথা জানাবে আর রুপা সব সত্যি জেনে কি প্রতিক্রিয়া করবে সেসব চিন্তা করতে লাগলেন।

 

 

 

সকালে উঠোন ঝাড়ুর শব্দে রুপার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানায় মা নেই। আগে তিন বোন মিলেই সকালের কাজগুলো তারা করতো। মা নিশ্চয়ই উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছেন এই ভেবে রুপা বাইরে গিয়ে দেখে একজন অচেনা মহিলা। তার মা সকাল সকাল চুলা ধরিয়েছেন। রুপা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে মা চালের গুড়ি নিয়ে বসেছেন পিঠা বানাতে। রুপা বললো,

Òমা কি পিঠা বানাবে

Òকি পিঠা খাবি বল আমি বানিয়ে দেই

Òআমার কোন পছন্দ নেই। তুমি যা বানাবে আমি তাই খাবো।Ó

Òরুপা কেন তোর কোন পছন্দ নেই? তুই কেন মুখ ফুটে তোর পছন্দের কথা বলতে পারিস না, যে মা আমার এটা খেতে ইচ্ছে করে ওটা কিনতে ইচ্ছে করে

রুপা মায়ের চোখ দেখে বুঝতে পারলো সারারাত মায়ের ঘুম হয় নি। নিশ্চয়েই কোন বড় ঝামেলায় আছে তার মা। তাই কথা না বাড়িয়ে রুপা বললো, Òঠিক আছে মা তুমি আমাকে চিতই পিঠা বানিয়ে দাও।Ó

রুপার মা খুশি হলেন।

Òমা আমি তোমাকে সাহায্য করি

Òনা তুই আমার পাশে বোস। কতদিন হয় তোকে দেখিনিÓ

রুপার লজ্জা লাগতে লাগলো। কারণ তার মা আগে তার সাথে কখনো এভাবে কথা বলেননি। তাহলে তার মা কি আসলেই অসুস্থ? এদিকে দাদী সকালে উঠে রান্নাঘরে পিঠার আয়োজন দেখে আবার চেuচাতে শুরু করলেন। বললেন, Òলাট সাহেবের বেটি আইছে তার জন্য আবার পিঠা পায়েস।Ó

রুপা ভাবলো তার মা হয় তো কোন উত্তর দিবে আর সাত সকালে ঝগড়া ঝাটি শুরু হবে। কিন্তু রুপার মা চুপ করে রইলেন। দাদী কতক্ষণ গড়গড় করে কোথায় যেন চলে গেলেন। রুপার বাবা আর মানিকও হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরে খেতে এলো। বাবাকে দেখে রুপা উঠে পা ছুuয়ে প্রনাম করলো। বাবাও রুপার মাথায় হাত রেখে বললেন, Òকেমন আছিস মা

Òভাল আছি। কাল এত ক্লান্ত ছিলাম রাতে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বাবা। তুমি কখন এসেছো টের পাইনি।Ó

বাবা বললেন, Òকতদিন পর তুই বাড়ি এলি। মিতা মনি ওদের আসতে বলে দেই। কি বলিস

মানিক বললো, Òকি মজা হবে! আবার সব দিদিরা একসাথে হবে। বাবা, দিদিদের বলবে যেন এসে কয়দিন থেকে যায়।Ó

রুপা মাথা নেড়ে হ্যাসূচক ইঙ্গিত করলো। রুপার বাবা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, Òতুমি কি বলো

রুপার মা বললেন, Òতোমার মেয়েদের তুমি আসতে বলবে আমি আবার কি বলবো।Ó

এদিকে কাজের মহিলাটিও পিঠা তৈরিতে হাত দিয়েছেন। তাই চা পিঠা সবই প্রস্তুত। রুপার মা সবাইকে খেতে দিয়ে দাদীর জন্য চা পিঠা সাজিয়ে মানিককে বললেন, Òযা দাদীকে দিয়ে আয়Ó

রুপার বাবা খেয়ে বাজারে চলে গেলেন। সেখানে তার কনফেকশনারির দোকান আছে। দুই মেয়েকে রুপার আসার খবর দিতেই বিকেলে দুইবোন চলে এলো। দিদিকে দেখে দুইবোনই খুশি। মিতা মনির বিয়েতে রুপাকে জানানো হয়নি বিষয়টি শুরু করতেই রুপা প্রসঙ্গ পাল্টে বললো, Òতা শুধু তোরা এলি তোদের বররা এলো না

মিতার বর বিদেশে থাকে আর মনির বর ফিরে যাওয়ার সময় নিতে আসবে বলে মনি জানালো। দাদীও দুই নাতনীকে পেয়ে খুব খুশি। রাতের খাবার খেয়ে তিন বোন মিলে উঠোনো বসে খুব গল্প করতে লাগলো। মিতার এক ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। মানিক মিতার মেয়েকে নিয়ে খেলা করতে লাগলো। রুপার মা- বারান্দার সিড়িতে বসেছিলেন। ওদের বাবা এখনো ফিরেন নি। হঠাৎ দাদী এসে বললেন, Òএই বাড়ীর সম্পত্তির এক কানিও আমি রুপারে দিমু না।Ó

দাদীর এরুপ আচরণে রুপা, মিতা আর মনি তিনবোনই অবাক হলো। ওরা নিজেদের কথা থামিয়ে চুপ হয়ে গেল। রুপা ভেবেছিল মা হয় তো কোন উত্তর দিবেন। তাই রুপা ঘাড় ঘুড়িয়ে মায়ের দিকে তাকাল। কিন্তু মা দাদীকে কিছু না বলে রুপাকে বললেন, Òরুপা ঘরে আয়, তোর সাথে আমার কিছু কিথা আছেÓ বলেই ঘরের ভেতর চলে গেলেন। রুপা উঠে মায়ের পেছনে পেছনে ঘরে ঢুকলো। রুপাও মাকে কিছু কথা বলতে চাইছিল। কিন্তু সকাল থেকেই মা রান্নাবান্না নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে রুপা মাকে একা পেলই না। এবার রুপা ভাবলো এই সুযোগে সালিন্দার কথাটা মাকে জানিয়ে দেবে। মা নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না।

এদিকে মা ঘরে গিয়ে খাটের উপর বসে বসে ভাবতে লাগলেন তিনি কিভাবে রুপাকে বললেন যে তিনি রুপার মা নন। রুপা যাকে বাবা বলে জানে তিনিও রুপার বাবা নন। এই বাড়ীর সাথে রুপার রক্তের কোন বন্ধন নেই। শুধুই আত্মীয়তার সম্পক© তিনি কিভাবে রুপাকে বলবেন যে রুপা তার বড় বোনের মেয়ে। রুপাকে দুই মাসের রেখে রুপার বাবা মা দুজনেই রোড এ্যসিডেন্টে মারা গেছেন। বিয়ের সময় শাশুড়ীর অনিচ্ছা সত্বেও তিনি রুপাকে এই বাড়ীতে নিয়ে এসেছিলেন বলে আজো তিনি শাশুড়ীর মন যুগাতে পারেন নি। তাই তো তার শাশুড়ী রুপাকে আজো মেনে নিতে পারেন নি। ভাবতে ভাবতে মায়ের চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। ঠিক তখনই রুপা ঘরে ঢুকলো। মায়ের চোখে জল দেখে রুপা ভাবলো রুপাকে দাদী ওমন কথা বলেছে বলেই মা কষ্টে কাuদছেন। তাই মাকে হালকা করার জন্য রুপা বললো, Òমা দেখেছ মিতার মেয়েটা কি মিষ্টি হয়েছে

রুপার মা চোখ মুছে বললেন, Òরুপা তোর ইচ্ছে করে না ওদের মতো করে সংসার সাজাতে

রুপা লজ্জা পেল। বললো, Òমা তোমাকে একটা কথা বলবো ভাবছি।Ó

Òবল না কি বলবি।Ó

Òমা আমাকে একটি ছেলে পছন্দ করেÓ

Òতুই করিস না

Òহ্যাu মা আমিও করিÓ

Òকে সেই ছেলেটি। কোথায় বাড়ী। কুমিল্লায়

Òনা মা ওর বাড়ী শ্রীলংকায়Ó

Òশ্রীলংকায়

Òহ্যাu তবে কুমিল্লায় থাকে। আমি যে মেয়েটিকে বাংলা শিখাই সেই মেয়েটির মামা।Ó

Òছেলেটি কি খ্রিষ্টান

Òনা মা বৌদ্ধÓ

Òঅন্য ধমে©

Òমা আমি যে মেয়েটিকে পড়াই মেয়েটির বাবা বৌদ্ধ আবার মা খ্রিষ্টান। দুইজন দুই ধম© পালন করে। শ্রীলংকায় নাকী এধরনের মিশ্র বিয়ে হয়। আর জানো মা ওরা মানুষের মন দেখে বিচার করে মানুষটি কেমন। গায়ের চামড়া দেখে না। আমার গায়ের কালো চামরা নিয়ে ছেলেটির কোন মাথাব্যাথা নেই।Ó

Òতুই কি ভাবছিস? ছেলেটিকে বিয়ে করতে চাস

Òআমি ছেলেটিকে পছন্দ করি। বিয়ের কথা ভাবিনি। তুমি বলো আমি কি করবো

Òআমার দিক থেকে কোন সমস্যা নেই। তুই যদি মনে করিস ছেলেটি তোকে বুঝতে পারে, তোকে সম্মান করে। তুই যদি ওকে বিশ্বাস করিস তবে বিয়ে করে ফেল। আমি তোদের সব রকম সহযোগিতা করবো।Ó

রুপা মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, Òমা তুমি জানি আমাকে কি বলতে চেয়েছিলে? Ó

রুপার মা সিদ্ধান্ত পরিবত© করলেন। ভাবলেন মেয়েটি তার জীবনে প্রথম একটু ভালবাসার একটু আনন্দের ছোuয়া পেতে চলছে এসময় তিনি মেয়েটাকে অতীত বলে কষ্ট দিবেন না। থাক রুপাকে তার অতীত না জানলেও চলবে।

মা বললেন, Òতোর দাদী যেভাবে তেড়ে গিয়েছিলেন তাই তোকে ঘরে নিয়ে আনার জন্য ঐ রকম বলেছিলাম। রুপা ছেলেটির নাম কি রে

Òসালিন্দাÓ

Òতুই যদি সালিন্দাকে বিয়ে করে সুখী হোস তাহলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না জানিস।Ó

Òমেয়েরা সুখী হলে মায়েরা খুশি হয় তাই না মা

Òতুই আমার কাছে মিতা মনির চেয়ে আলাদা কিছু যদিও আগে কোনদিন তোকে আমি এই কথাটি বলতে পারি নি। Ó

Òমা তুমি কেন দাদীকে এত ভয় পাও। বাবাই বা এত ভয় পায় কেন

Òথাক এসব কথা। সালিন্দাকে বিয়ে করলে ওকি তোকে শ্রীলংকা নিয়ে যাবে নাকি কুমিল্লায়ই থাকবি

Òমা তুমি তো অনেক কিছুই চিন্তা করে ফেললে। এসব কিছু নয়। শুধু পছন্দ করে। তোমাকে আমি চিঠিতে সব জানাবো। আচ্ছা মা তোমার শরীর তো ভালই আছে আমাকে ডেকে আনলে যেÓ

Òতোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই

Òদেখলে তো। তাহলে কাল আমি ফিরে যাই মা। আমার ক্লাস চলছে।Ó

Òআর দুইদিন থেকে যা মাÓ

Òঠিক আছে মাত্র দুইদিন।Ó

রুপা যে দুইদিন বাড়ীতে রইলো মিতা আর মনিও রইলো। রুপা আগে কখনও মায়ের এত কাছে যায় নি। এবার সে প্রথম তার মায়ের খুব কাছাকাছি রইলো আর মা হয়ে উঠলো তার কাছের বন্ধু। কুমিল্লায় ফেরার দিন মায়ের জন্য তার মনটা খুব খারাপ লাগছিল। এই প্রথম রুপা বাড়ী ছাড়ার সময় চোখে জল এলো। মা খুব করে কাuদলেন।

বাবার হাতে রুপার ব্যাগ। বাবা রুপাকে বাসে তুলে দিবেন। মা রুপাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, Òতোর প্রতি অনেক অবিচার করেছি আমি। যদি পারিস মা আমায় ক্ষমা করে দিস।Ó

রুপা মাকে বললো, Òতুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো এরচে বেশী করার সামথ© যে তোমার ছিল না মাÓ বলেই রুপা মায়ের চোখের জল মুছিয়ে বললো, Òমা তুমি আমাকে যা বলতে পারোনি সেসব আমি জানি। কাল রাতে দাদী মিতা আর মনিকে আমার গল্প বলছিল আমি সব শুনে ফেলেছি। তবে আমার কোন দুt নেই। আমি জানি তুমিই আমার মা। সব সময় তুমি আমার মা হয়েই থেকোÓ বলেই রুপা চোখ মুছতে মুছতে বাবার পেছনে পেছনে হাuটতে লাগলো।

 

১০

 

হোষ্টেলে ফিরেই রুপা স্নান সেরে বিছানায় শুয়ে পড়ে। এতবড় জানি© তার উপর মনটা তার পড়ে আছে মায়ের কাছে। মা জাতিটা কি অদ্ভুদ! শুধু তার জন্য নিজের ভালমন্দ সুখ বিসজ© দিয়ে একজন মহিলা সারাটা জীবন শাশুড়ীর অত্যাচার সহ্য করলো।

রুপা তার মায়ের জীবনে না থাকলে রুপার মায়ের জীবনটা এমন হতো না। তিনিও স্বামীর ভালবাসা, শাশুড়ীর স্নেহমমতা পেতেন। কি দূভা©গা কপাল নিয়েই না সে জন্মেছে। ছোটবেলায় বাবামাকে হারালো আবার একমাত্র মাসীটাও তার জন্য শান্তি পেল না। এখন আর রুপার কোন পিছুটান নেই। অবশ্য আগেও ছিল না। এসব ভাবতে ভাবতে রুপা ঘুমিয়ে পড়লো। পরেরদিন বৃহস্পতিব্র ক্লাস শেষ করে এসে রুপা নিমালীদের বাড়ীতে ফোন দিল। জানালো সে পরের দিন অথা© শুত্রবারে পড়াতে যাবে। ফোনে নিমালীর মা যথারীতি রুপার এবং রুপার পরিবারের সবার খোuজখবর নিলেন। তবে সালিন্দার কথা কিছু বললেন না।

শুক্রবার বিকেল পাuচটা বাজার দশ মিনিট আগেই রুপা নিমালীদের বাড়ী পৌuছাল। নিমালীর মা রুপার মায়ের শারীরিক অবস্থা সম্পকে© যে খুবই উদ্বিগ্ন তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু রুপা মিথ্যে বলতে পারে না। তাই সে সত্যি কথাটাই বলে দিল। মা তাকে দেখতে চেয়েছিলেন। তাই ভাইকে দিয়ে মিথ্যে চিঠি লিখিয়েছিলেন। নিমালীর মা

বললেন, Òআর এদিকে তোমার মায়ের চিন্তায় সালিন্দা তো নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে। তুমি বসো আমি তাকে ডেকে দিচ্ছিÓ

রুপা বললো, Òএখন থাক আমি পড়াতে এসেছিÓ

Òতুমি না হয় দশ মিনিট পড়েই পড়ালে। কিন্তু যে এত অস্থির হয়ে আছে তাকে তো আগে স্থির করতে হবে।Ó

রুপা লজ্জা পেল। নিমালীর মা বাইরে গিয়ে সালিন্দাকে ডেকে নিয়ে আসলেন। বললেন,

Òতোমরা কথা বলো আমি আসছি।Ó রুপা মাথা নীচু করে বসে রইলো সালিন্দা বললো, Òকোন খবর দিলে না যে

Òআমি ছিলাম মাত্র পাuচদিন এর মধ্যে খবর দেব কি করে? তাছাড়া মায়ের তেমন কিছু হয় নি।Ó

Òবাড়ীতে আমার কথা জানিয়েছো

রুপা Ôহ্যামাথা নাড়লো

Òসবাই অনেক আপত্তি করলো বুঝি

Òনা কেউ আপত্তি করে নি। সবাই খুব খুশি হয়েছে।Ó

Òসত্যি বলছো না কি মজা করছো

Òআমি এখন পড়াতে যাবো দেরী হয়ে যাচ্ছে।Ó

Òকাকে পড়াবে। তোমার ছাত্রী তো বাসায় নেই।Ó

Òমানে

Òআজ ওর স্কুলের শিক্ষা সফর। টেকনাফ গেছে Ó

Òকই ম্যাডাম তো কিছু বললেন না আমাকে Ó

Òবলেন নি কারণ তুমি আজ আমাকে পড়াবেÓ

রুপা উঠে দাড়িয়ে ছিল। সালিন্দা রুপার হাত ধরে বসিয়ে বলল, Òআজ আমাকে শেখাবেÓ

Òকি শেখাবো

Òপ্রেমÓ

রুপা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। সালিন্দা বললো, Òচলো রুপা কোথাও ঘুরে আসি। যাবে আমার সাথে

রুপা বললো, ÒযাবোÓ

Òতুমি একটু বসো আমি পাu মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসবোÓ বলে সালিন্দা ভেতরে চলে গেল। তখনই মিসেস সামান্তা রুপার জন্য চা নাস্তা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। বললেন,

Òসরি রুপা প্ল্যানটা কিন্তু সালিন্দার ছিল তাই আমার সাথে রাগ করো না Ó

রুপা হাসতে লাগল। মিসেস সামান্তা বললেন, Òবাড়ীতে জানিয়েছো

Òহ্যা

Òকি বললেন তারা

Òআমি যা সিদ্ধান্ত নিবো তাই হবেÓ

Òযাক শুনে ভাল লাগছে। যাও সালিন্দার সাথে ঘুরে, কথা বলে, মিশে দেখ ওর সাথে সারাটা জীবন কাটাতে পারবে কি না।Ó ঠিক তখনই সালিন্দা চলে এলো।

Òদেখলে পাu মিনিটের এক সেকেন্ডও বেশী নেই নিÓ

মিসেস সামান্তা সালিন্দার জন্যও চা করেছিলেন তবে সে খেল না বললো বাইরে রুপার সাথে খেয়ে নেবে।

রুপা আজ অনেকটাই ভারমুক্ত। নিজেকে তার হালকা লাগছে। সে তার জীবনের সব কথাই সলিন্দাকে খুলে বলেছে। অবহেলার মধ্যে বড় হওয়া, নিজের রুপ নিয়ে হীনমন্যতা আর গতকালের সদ্য প্রকাশিত তার জীবনের আরেক সত্য। সে যাদের তার বাবা মা বলে জানতো তারা আসলে তার কেউ নন, মাসীকে সে মা বলে ডাকতো। আর তার জন্যই তার মাসী সারাটা জীবন স্বামী-শাশুড়ীর কাছে অবহেলিত হয়েছেন।

সব শুনে সালিন্দা রুপার হাত নিজের হাতে রেখে বলেছে Òরুপা তোমার সুখ-দুখ, হাসি-আনন্দ সবটারই আমি ভাগ নেব। জীবনের কোন অবস্থাতে আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না। ছায়ার মতো তোমার পাশে থাকবো। একবার আমাকে বিশ্বাস করে দেখ।Ó

রুপা সালিন্দাকে বিশ্বাস করেছে। সে সালিন্দাকে বলেছে, Òআমি তোমাকে বিশ্বাস করি।Ó

Òভালবাসো না

Òহ্যাu, আমি তোমাকে ভালবাসিÓ

Òবিয়ে করবে আমাকে

ÒকরবোÓ


১১



সালিন্দা আর রুপার মধ্যে এমনটিই কথা হলো- দুজনের দুই ধমে© হওয়াতে বাংলাদেশে দুজনে কোটে© বিয়ে করবে। তারপর দুজনে শ্রীলংকা চলে যাবে। শ্রীলংকা গিয়ে দুজন মিশ্র বিয়ে সম্পন্ন করবে। কারণ শ্রীলংকাতে খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধদের মধ্যে মিশ্র বিয়েটা সাধারণ ব্যাপার। প্রথমে গীজা© বিয়ে হবে তারপর বৌদ্ধ ধমীয়© রীতিতে বিয়ে হবে। দুজনে দুই ধম© পালন করবে। আরো সিদ্ধান্ত হলো ডিসেম্বরে সালিন্দা আর রুপা শ্রীলংকা যাবে। সেখানে মাস তিনেক থাকার পর আবার বাংলাদেশে ফিরে আসবে। রুপা তার লেখাপড়া শেষ করবে আর সালিন্দা আগের মতোই চাকরি করবে। রুপার লেখাপড়া শেষ হলে দুজন ফিরে যাবে শ্রীলংকাতে।

রুপা সালিন্দার সাথে নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা তার মাকে চিঠিতে জানালো। রুপার মা অনেক খুশি হলেন। তিনি সালিন্দাকে নিয়ে বাড়ীতে আসার জন্য রুপাকে লিখে পাঠালেন। তবে রুপা বাড়িতে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলো।

আগষ্ট মাসের কোন একদিন মিসেস সামান্ত রুপাকে ফোন করে বাসায় ডাকলেন। রুপা নিমালীদের বাসায় এলে মিসেস সামান্তা বললেন, Òএখন শুধুমাত্র ছাত্রী পড়ানোর জন্য শুক্রবারের অপেক্ষায় থাকলে হবে না। আমার ভাইটির কথা মনে হলেই চলে আসবে।Ó

তিনি কচি কলাপাতা রঙ্গের একটি শাড়ী রুপার হাতে দিয়ে বললেন, Òযাও নিমালীর ঘরে গিয়ে শাড়ীটি পড়ে এসো। সালিন্দা আর আমি পছন্দ করে কিনেছি। রুপা শাড়িটি নিয়ে নিমালীর ঘরে গেল। নিমালী ঘরে নেই। শাড়ীর সাথে ব্লাউজ-ছায়া সবই আছে। রুপা খুব সুন্দর করে শাড়ীটি পড়লো। নিমালীর মা নিজের সাজসজ্জার জিনিস এনে বললেন,

Òএকটু সেজে নাও।Ó

রুপা কোন কথা না বলে সাজতে লাগলো। তবে রুপা এখানে আসার পর এখনো সালিন্দাকে দেখেনি। সে ভাবচ্ছে সালিন্দা কোথায়? তাকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাকে শাড়ী পড়িয়ে সাজিয়ে গুজিয়ে কি করা হবে? বাইরে কোথাও বেড়াতে যাবে নাকি এরা? মিসেস সামান্তাও তো সুন্দর শাড়ী পরে সেজেগুজে আছেন। কিন্তু বাড়ীর বাকী সবাই কোথায়? তবে সে মুখে কিছু বললো না। রুপা একটু পাউডার মেখে চোখে কাজল পড়ে বসে রইলো। এদিকে বসার ঘরে কারো আসার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নিমালীর মা এসে রুপাকে ডেকে বাইরে নিয়ে গেলেন। রুপা অবাক! এই একটু সময়ের মধ্যেই বাইরের ঘরটা ফুলে ফুলে সাজানো হয়ে গেছে। সালিন্দা, নিমালী আর মি. সামান্তা গিয়েছিলেন ফুল কিনতে। পাশেই নানা রকম বাহারী খাবার সাজানো রয়েছে। নিমালীর মা রুপাকে একটি সোফায় বসিয়ে রেখে সালিন্দাকে বললেন, Òযাও তারাতারি রেডি হয়ে এসো তোমরা।Ó

মিসেস সামান্তা খাবারের আইটেমগুলো আবারও সাজাতে লাগলেন। রুপা যে পাশে বসেছে সেখানটার পেছনে একটা ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে। Ôহ্যাপি এঙ্গেইজমেন্ট সালিন্দা এন্ড রুপাÕ কিসের অনুষ্ঠান হচ্ছে রুপার আর বুঝতে বাকী রইলো না। এরই মধ্যে সবাই রেডি হয়ে এসে গেছে। সালিন্দা পড়েছে সাদার মধ্যে কচি কলাপাতা রঙ্গের কাuচকরা পাঞ্চাবী। রুপার মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুদশ© পুরুষটিই যেন এসে তার পাশে বসলো। তার বুকের ভেতরটা ধুকধুক করলে লাগলো। সালিন্দা রুপার পাশে বসেই বললো, Òতোমাকে আজ শাড়ীতে খুব সুন্দর লাগছে।Ó

রুপা কি উত্তর দিবে ভেবে পেল না। তার নিশ্বাস যেন যে দ্রুত গতিতে পড়ছে। সে নীচের দিকে তাকিয়ে পায়ের বুড়ো নখ দিয়ে মেঝে ঘষতে লাগলো।

সালিন্দা রুপার দিকে ঝুকে আবার বললো, Òবললেনা আমাকে কেমন লাগছে

রুপা দাu দিয়ে ঠোu চেপে রইলো। তার খুব লজ্জা লাগছে। তার জীবনেও এমন দিন-ক্ষণ-মূহুত© আসতে পারে সে কখনো কল্পনাই করতে পারে নি।

Òরুপা আমার দিকে একবার তাকিয়ে দেখ। বল আমাকে কেমন দেখাচ্ছে। আমি বাঙ্গালীদের মতো পাঞ্চাবী পড়েছি। দেখেছো

এবার রুপা সালিন্দার দিকে তাকালো। সালিন্দার দিকে তাকিয়ে রুপা যেন আর চোখ ফেরাতেই পারছিল না। মিসেস সামান্তা দাuড়িয়ে সালিন্দা আর রুপার এঙ্গেইজমেন্ট অনুষ্ঠান সম্পকে© ইংরেজিতে ছোটখাট একটা ভাষণ দিলেন দুজনকে শুভ কামনা জানিয়ে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সদস্যের সংখ্যা মাত্র পাচজন। মি. মিসেস সামান্তা, নিমালী এবং সালিন্দা-রুপা। মিসেস সামান্তার ভাষণ দেয়া শেষ হলে সালিন্দা রুপাকে দামী পাথর বসানো একটি আংটি পড়িয়ে দিল। সবাই জোরে হাততালি দিল। রুপা সালিন্দাকে

বললো, Òআমি তো তোমার জন্য কিছু আনিনি

সালিন্দা বললো, Òতুমিই তো আমার। আমার আর কিছু চাই না।Ó এরপর নিমালী বেশ কিছু ছবি তুললো। শুরু হলো খাওয়া-দাওয়ার পব©

 

১২

 

রুপার প্লেনে উঠার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। জানুয়ারী মাস কিন্তু প্লেন উঠার সময় হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হল। এমনেই প্লেনের বিকট শব্দ তার মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলে রুপা ভাবলো হয় তো বিপদেই পড়া হচ্ছে। সালিন্দা বারে বারে রুপাকে অভয় দিতে লাগলো। একবার রুপা ভাবলো যাক যদি বিপদ হয় তো হোক সালিন্দা তার সাথে আছে মরে গেলে সালিন্দার সাথেই মরে যাবে। কিন্তু না তেমন কিছুই হলো না। তিনঘন্টা পর ওরা ব্যাঙ্ককে গিয়ে পৌuছালো। ব্যাঙ্ককে পাu ঘন্টা ট্রান্সিট। এতবড় এয়ারপোট© রুপার চোখ জুরিয়ে যায়। পাuচঘন্টা সারা এয়ারপোর্টের দর্শনীয় স্থানগুলো রুপাকে ঘুরিয়ে দেখিয়ে, কফি খেয়ে রাত এগারটায় শ্রীলংকার উদ্দেশে প্লেনে চড়ে বসলো দুজনে। প্লেন শ্রীলংকায় পৌuছালো রাত দুটোয়। এরপর বান্দারানায়েক এয়ারপোট© থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা মাহ&তারা প্রদেশের উদেশ্যে যাত্রা।

কোথাও uচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা আবার কোথাও সমতল রাস্তা ধরে এগিয়ে চললো তাদের ট্যাক্সি। ট্যাক্সিটি যখন পাহাড়ের উপর থাকে তখন নিচের রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ীর আলোগুলোকে জোনাকী পোকার মতো লাগে। পোকাগুলো যেন সারি বেuধে একবার উপরে উঠে আবার নিচে নামে। এভাবে আলো আধাuরের খেলা দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে। আলোতে প্রথম দেখাতেই শ্রীলংকাকে ভাল লেগে গেল রুপার। খুবই ছিমছাম পরিছন্ন রাস্থাঘাট। রাস্তার দুই পাশে সবুজ সারি সারি গাছ। এরই মধ্যে রাস্তার পাশের ছোট ছোট খাবারের দোকানগুলো খুলতে শুরু করেছে। সালিন্দা একটি বেকারির কাছে ট্যাক্সি থামাতে বললো। বেকারির নাম পেরেরা এন্ড সান্স। চব্বিশ ঘন্টাই খোলা থাকে। দুজনে সকালের নস্তো সেরে আবার রওনা দিল।

রুপা বললো, Òএই জায়গাটির নাম কি

ÒকালুতারাÓ

Òতোমাদের বাড়ী কি এখনো অনেক দূর

Òতোমাদের বাড়ি বলছো যে

Òআমি কিন্তু এখনো তোমার বউ না

Òআমার কাছে কিন্তু আইনি কাগজপত্র আছেÓ

রুপা হেসে আবার জিগ্যেস করে, Òঅনেক দূর

Òমাত্র তো অধে© এলাম। কেন কষ্ট হচ্ছে তোমার

Òনা না এমনেই বললামÓ

রাজধানী কলোম্বো থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে একেবারে সমুদ্র উপকূলে ঘেuষে মাহতারা প্রদেশ। আর মাহ&তারার শহরের শেষ প্রান্তে একেবারে সমুদ্রের কূল ঘেuষে সালিন্দার ছোট্ট একটা বসতভিটা। রুপা সালিন্দার ঘরবাড়ী সম্পকে© সবই জানে। সালিন্দার পূব©পুরুষেরা জেলে ছিলেন। তবে সালিন্দার বাবা ছিলেন ট্যুরিষ্ট গাইড। তিনি লেখাপড়া করে ইংরেজি শিখে বিদেশীদের গাইড হয়েছিলেন। সালিন্দাও আর জেলে পেশায় যায় নি। তবে তারা এখনো জেলে পাড়ায়ই থাকে। কেননা তাদের পূব©পুরুষের ভিটামাটি যেখানে সেখানেই সালিন্দা রুপাকে নিয়ে যাচ্ছে।

জেলেপাড়া সম্পকে© রুপার মুটামুটি ধারনা আছে। ঘিঞ্চিঘিঞ্চি খুপড়ি খুপড়ি ঘরের উপর ঘর। বারান্দা উঠোন বলতে কিছু নেই। রোদ নেই, বাতাস নেই, চারিদিকে অন্ধকার। তবে রুপার বড় ঘর, বড় উঠোন-বারান্দা, রোদ-বৃষ্টি এসব কিছুই চাওয়ার নেই। রুপার দরকার শুধু একটু ভালবাসা। সালিন্দার ভালবাসা পেলে সে ঘিঞ্চি ঘুপড়ি অন্ধকার ঘরে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। তাই নিজেকে প্রস্তুত করেই সে সালিন্দার সাথে জেলে পাড়ায় থাকতে এসেছে।

রুপার চিন্তায় ছেদ ধরিয়ে সালিন্দা বললো, Òকি বোডে© লেখাগুলোর কিছু কি বুঝতে পারছো

Òনা ওগুলোতো মনে হয় শ্রীলংকার ভাষায় লেখা। তাই না

Òহুম। তাই খুব তারাতারি তোমাকে শ্রীলংকার ভাষাটা শিখে নিতে হবেÓ

Òতুমি পাশে থাকলে পারবোÓ

Òগুড। তবে একটা খারাপ খবর আছেÓ

রুপা চমকে উঠলো Òসেটা আবার কি

Òড্রাইভার বলছিল রাস্তা ভাল না আজ গাড়ী আমাদের বাড়ী পয©ন্ত যাবে না।Ó

Òতাহলে আমরা এখন কি করবো

Òকোথাও আজকের বাকী দিনটা আর রাতটা কাটাতে হবেÓ

Òআচ্ছা গাড়ী যাবে না কেন

Òরাস্তা মেরামতের কাজ চলছেÓ

Òঅন্য কোন রাস্তা নেই

Òনা। একটাই রাস্তা। এখান দিয়ে খুব শিগ্রই মহাসড়ক হবে। তখন মাত্র তিন ঘন্টায় আমরা এয়ারপো© থেকে আমাদের বাড়ী যেতে পারবো।Ó

Òসেটা কবে হবে

Òএই ধরো আরো দুই তিন বছর পর।Ó

Òদুই তিন বছর পরের কথা চিন্তা না করে এখন কি করবে সেটা বলো তোÓ

Òকি আর করবো। দাড়াও ড্রাইভার ভাইকে জিগ্যেস করে দেখি ধারে কাছে কোথাও গেষ্ট হাউজ আছে কি না।Ó

এরপর সালিন্দা ড্রাইভারের সাথে সিংহালা ভাষায় কি যেন কথা বলে রুপাকে বললো, Òএকটা নম্বর পাওয়া গেছে ফোন করে দেখি কাজ হয় কি না।Ó

সালিন্দা কাগজে লেখা নম্বরটা টিপে টিপে তার মোবাইল থেকে ফোন করলো এবং শ্রীলংকার ভাষায় কথা বললো। সালিন্দার কথা শুনে রুপা কিছু না বুঝলেও ট্যাক্সি ড্রাইভার খুব হাসলো। কথা শেষ হলে ড্রাইভার কি বলে যেন আবার হাসলো।

রুপা সালিন্দাকে জিগ্যেস করলো, Òআচ্ছা তোমার কথা শুনে লোকটা হাসছে কেন

Òনা মানে গেষ্টরুম বুকিং করতে হলে অনেক তথ্য দিতে হয়। তাই আমি বললাম যে নতুন বিয়ে করেছি বউকে নিয়ে হানিমুন করার জন্য গেষ্টরুম বুকিং করতে চাই। তাই হয় তো লোকটি হাসছে।Ó

Òতুমি মিথ্যে বললে কেন

Òমিথ্যে বলালম কই

Òবললেই হতো আমরা বাড়ী যাচ্ছি রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে গাড়ী যাবে না তাই থাকবোÓ

Òশোন হানিমুনের কথা বললে এখানকার গেষ্ট হাউজগুলোতে স্পেশাল কেয়ার পাওয়া যায় তাই বললামÓ

Òতাই নাকিÓ

ÒহুÓ

Òছি ছি। এসব কথা বলতে হয়

Òবা-রে গেষ্ট হাউজের ম্যানেজার জানতে চাইলেন যে। আমি যদি বলি আমি আমার গা©লফেন্ডকে নিয়ে আসবো তবে ওরা কি আমাকে রুম দিবে

Ò তাও তো ঠিকÓ বলে রুপা হাসতে লাগল।

কালুতারা পার হয়ে আরো দুইঘন্টা পর ওরা একেবারে সমুদ্রের তীরঘেষা রাস্তা দিয়ে একটা বাড়ীর সামনে এসে পৌuছালো। বাড়ীটির চারপাশে ছোট দেয়াল দেওয়া আর পুরো দেয়াল জুড়ে লতানো ফুলের গাছ। ভেতরের পুরো উঠোন জুড়ে সবুজ ঘাস। একপাশে রক গাডে© আরেক পাশে একটি পানির ফোয়ারা। ফোয়ারার নিচে নানান রঙ্গের মাছের সমাহার। পুকুরের উপর ছোট একটি ব্রিজও আছে। অপরুপ দেখতে বাগানটি। এক দেখায়ই বাড়ীটি রুপার ভাল লেগে গেল। বাড়ীর পেছনে একটি বড় আম গাছ আছে যার আমসহ ডালপালাগুলো ছড়িয়ে আছে টালি বিছানো ঘরের পুরো ছাদজুড়ে।

ট্যাক্সি থামতেই একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে সালিন্দাকে নমস্কার দিয়ে ট্যাক্সি থেকে মালপত্র নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ট্যক্সি বিল পরিশোধ করে লোকটিকে সালিন্দা ইংরেজিতে জিগ্যেস করলো রুম রেডি আছে কি না। লোকটি জি স্যার বলেই একটি ফরম সালিন্দার হাতে তুলে দিল। সালিন্দা ফরমটি রুপাকে দিয়ে বললো, Òরুপা এটি ফিলআপ করে দাও তো।Ó

রুপা ফরমটা হাতে নিয়ে লিখতে শুরু করলো। এক জায়গায় এসে সে বললো, Òআচ্ছা আমরা কি এদেশি নাকি বিদেশী

Òকেন

Òএদেশের হলে এদেশের ঠিকানা চাইছে। আমি তো ঠিকানাটা জানি না তাই।Ó

Ò তুমি ফরমটা রাখ আমি ফিলআপ করে দিচ্ছি। চল আগে তোমাকে আমি রুমে দিয়ে আসি।Ó

ম্যানেজার চাবি নিয়ে আগে আগে চললো। রুপা আর সালিন্দা পেছনে। রুপা বললো, Òআচ্ছা আমাদের লাগেজগুলো আনা হলো না যেÓ

Òওরা দিয়ে যাবেÓ

Ò বয়স্ত লোকটা আমাদের লাগেজগুলো টানবে

Òনা আরো একজন আছে লাগেজ টানার জন্যÓ

রুপা আর কথা বাড়াল না। ঘরটা যে এত সুন্দর হবে রুপা কল্পনাও করেনি। বাইরে থেকে বোঝাই যায় নি ভেতরে এত বিলাসবহুল ব্যবস্থা। বড় একটা ঘর। উপর থেকে নিচ পযন্ত কাuচের প্রশস্ত জানালাগুলো সাদা রঙের ভারী পদা© ঢাকা। ঘরের পদা© সঙ্গে মিলিয়ে নরম গদিওয়ালা বিছানা আর সোফাসেট। এট্যাচ কিচেন ডাইনিং বিলাস বহুল বাথরুম। সবকিছুই একদম ঝকঝকে। সব কিছু দেখে রুপার চক্ষু যেন চরখগাছ। সালিন্দা রুপাকে ঘরে দিয়েই গেছে ফরম ফিলআপ করতে। এদিকে একটি অল্প বয়স্ক ছেলে এসে ব্যাগগুলো দিয়ে গেছে। ছেলেটি রুপাকে দেখে মিটিমিটি হাসছিল। রুপাও ছেলেটির দিকে তাকিয়ে হাসি দিল। মনে মনে ভাবলো মনে হয় হানিমুনের কথাটা ছেলেটিও জেনে গেছে তাই হাসছে।

একটু পর সালিন্দা ফিরে এসে রুপাকে জড়িয়ে ধরে বললো, Òকি পছন্দ হয়েছে রুম

Òহ্যাu খুব সুন্দর, মনে হচ্ছে স্বপ্নে রাজ্যে এসে পড়েছিÓ

Òকি হোটেল হোটেল লাগছে

Òআচ্ছা নিশ্চয়ই অনেক ভাড়া দিতে হবে

Òনা ফ্রিÓ

Òফ্রি! বলো না প্লিজ

Òএকদিনে পঞ্চাশ ডলারÓ

Òপঞ্চশ ডলার! তার মানে কত হলো

Òআচ্ছা এখন কি তুমি আমাকে ক্যালকুলেটার নিয়ে বসতে বলছো

রুপার হাত দুটো ধরে সালিন্দা বললো, Òএখন টাকা পয়সার হিসেব রাখো। সময়টাকে উপভোগ কর। যাও ফ্রেস হয়ে এসো। আর শোন দুপুরে কি খাবে? এখানেই খাবে নাকি বাইরে কোথাও? Ó

Òতোমার ইচ্ছে Ó

Òবললে ওরা খাবার তৈরি করে দিবে, নয় তো আশেপাশে আরো হোটেল রেষ্টুরেন্ট আাছে। তবে আমি জিগ্যেস করেছি ওদের খাবার মন্দ নয়। বলো কি খেতে চাও

Òতুমি যা খাবে আমি তাই খাব।Ó

Òআচ্ছা এখন এখানে আমার পছন্দ আর রাতে খাব তোমার পছন্দে ওকে

ÒওকেÓ

রুপা গেল বাথরুমে। রুপা তার জীবনে কখনো বাথটবে স্নান করে নি। এই প্রথম সে বাথটব পেয়েছে তাও আবার মারবেল পাথরের ঝকঝকে। তাই অনেক সময় নিয়ে সে স্নান করলো। রুপা স্নান করে  মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে রুমে ফিরে এসে দেখে সালিন্দা ঘরে নেই। ড্রেসিন টেবিলের উপর একটি হেয়ার ড্রায়ার রাখা আছে। কিন্তু সেটি ভাল না মন্দ তা নেড়েচেরে দেখতে দেখতে ঘরের দরজায় শব্দ হলো। রুপা ‘কাম ইন’ বলে দরজায় দিকে তাকিয়ে দেখে সালিন্দা।

বললো, Òদেখো তো এটি কাজ করে কি না

Òশোনো এখানকার সব কিছু এক নম্বর। কাজ করবে না মানেÓ বলেই সালিন্দা বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে বললো, Òএসো তোমার চুল গুলো শুকিয়ে দেইÓ

Òআমার চুল তোমার শুকাতে হবে না তুমি স্নান সেরে এসো। আমার খুব খিদে পেয়েছে।Ó

Òআচ্ছা আমি কি তোমার বাথরুমে স্নান করতে পারি

Òএকি কথা! কেন তোমার জন্য কি আলাদা বাথরুম আছে নাকি

Òহয় তো খুuজলে পাওয়া যাবে। জিজ্ঞেস করে দেখবো? Ó

Òনা না জিগ্যেস করতে হবে না। আমি শুধু বলেছি বিয়ের আগে একসাথে ঘুমানো যাবে না।Ó

Òতার মানে একসঙ্গে স্নান করা যাবে- তাহলে তো বড় চান্স মিস করলাম।Ó

রুপা তার হাতে থাকা হেয়ার ড্রয়ার উচিয়ে বলল, Òকি বললে

Òনা না আমি স্নানে যাচ্ছি বলেই হাসতে হাসতে সালিন্দা স্নানে চলে গেল।Ó

 

১৩

 

হালকা নীল রঙ্গের একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে রুপা। খোলা চুলে রুপাকে যেন অপরুপা দেখতে লাগছিল। স্নান সেরে বেড়িয়ে সালিন্দা রুপাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, Òতোমাকে নীলে এত সুন্দর মানায় জানা ছিল না তো।Ó

Òতাই বুঝি। আমার কিন্তু খুব ক্ষিধে পেয়েছে।Ó

Òআর আমার খিদে চলে গেছে। এই যে তোমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আছি এতেই বেশ ভাল লাগছে। আর খেতে ইচ্ছে করছে না।Ó

রুপা সালিন্দার হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, Òআমার কিন্তু খিতে পেয়েছেÓ

Òঠিক আছে চল চল খেতে যাই।Ó

ওরা বাইরে এস দেখে বাগানে ছাতার নিচে ইতিমধ্যে ছোট ছেলেটি এসে খাবার রেখে গেছে। রুপা ট্রে খুলে দেখে একটি বোলে ভাত, মুরগীর ঝোল, নারিকেল দিয়ে ডাল আর গোটুকলা সাম্বল। রুপা জীবনে সাম্বল দেখে নি। সালিন্দা বললো, Òএটা খেয়েছো কখনো? একেবারে খাuটি শ্রীলংকার খাবার। এটা হচ্ছে তোমাদের দেখের থানকুনি পাতা।Ó

ওরা খেতে শুরু করলো। ভাত খেয়ে দুজনে আইসক্রিম খেল। এরপর বাগানের চারপাশ ঘুরে দেখলো। রুপা যা দেখে তাই দেখে আনন্দিত হয়, উৎফুল্ল হয়। সবচেয়ে রুপার ভাল লাগলো চালের উপর নুয়ে পড়া আমগাছটি। এই জানুয়ারী মাসে এত আম দেখলেই মনটা ভরে যায়।

রুপা বললো, Òআচ্ছা আমরা যদি আম পেড়ে খাই ওরা কি আমাদের বকবে

রুপার এই সরলতা দেখে সালিন্দার ভাল লাগলো। বললো, Òনা বকবে না। দাuড়াও আমি তোমার আম খাওয়া ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।Ó

রুপা বললো, Òনা থাক ওরা কি ভাববে

Òকিছু ভাববে না। আমার বউ আম খেতে চেয়েছে আর খাওয়াতে পারবো না তাই কি হয়

সালিন্দা ছোট ছেলেটিকে ডেকে কি যেন বললো। ছেলেটি হাসতে হাসতে দৌড়ে বড় একটি লাঠি নিয়ে এলো। রুপা বললো, Òবাহ ছেলেটি বেশ চটপটে তো

সালিন্দা ছেলেটির হাত থেকে লাঠি নিয়ে আম পাড়তে শুরু করলে রুপা কুড়াতে লাগলো। ছেলেটি দূরে দাড়িয়ে দেখছিল। ঠিক তখনই ম্যানেজার এসে ছেলেটিকে কি যেন বললো। রুপা ভাবলো ছেলেটি তাদের আম খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলে হয়তো ম্যানেজার ছেলেটিকে বকছে।

রুপা বললো, Òএই শোন আর পেড়ো না। ম্যানেজার ছেলেটিকে বকছে।Ó

Òআমাদের তো আর বকছে না। তুমি আম কুড়াওÓ

রুপার লজ্জা এবং দুt দুটোই করতে লাগলো। সালিন্দা ছেলেটিকে কি যেন বললো ছেলেটি মুখ কালো করে ভেতরে চলে গেল।

ম্যানেজার রুপার কাছে এসে বললেন, Òম্যাডার আপনাদের যদি কিছু দরকার হয় আমাকে বলবেন আমি ব্যবস্থা করে দিব। আপনারা কষ্ট করে কেন এসব করছেন

রুপার ওকে বলে চুপ করে বসে রইলো। সে আর আম কুড়াতে গেল না। সালিন্দা বাকী আমগুলো কুড়িয়ে রুপার কাছে এসে বললো, Òকি আমাকে একা ফেলে এখানে বসে আছো যে

Òতুমি দেখোনি আম পেড়েছি বলে ম্যানেজার রাগ করেছেন। ছেলেটিকে কেমন বকা দিয়ে পাঠিয়ে দিল।Ó

Òরাগ তো করবেনই। আমরা উনাদের ঘর ভাড়া নিয়েছি। আমগাছ তো আর ভাড়া নেই নি। জানিনা কত ডলার কেটে রাখে

Òকি বল। এই আমের জন্য

Òনয় তো

Òআমারই ভুল হয়েছে কেন যে বললাম আমের কথা

Òশোন এই আমগুলো কিভাবে খাবে বলতো

Òএখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না।Ó

Òআমার কিন্তু খুব খেতে ইচ্ছে করছে। বল তো কি করবো এগুলো? ছিলে আনবো? তোমার মনটা খারাপ হয়ে গেছে তাই না? আচ্ছা আমি তোমাকে শ্রীলংকার ষ্টাইলে আচার বানিয়ে খাওয়াইÓ বলেই সালিন্দা পডি পডি বলে ডাকতে লাগলো।

রুপা বললো, Òপডিটা কি

Òএখানে যে ছেলেটা কাজ করে সে।Ó

Òএটা আবার কেমন নাম

Òপডি মানে হচ্ছে ছোটÓ

Òওকে আবার ডাকছো কেন

এরই মধ্যে ছেলেটি দৌড়ে এসে হাসিমুখে দাuড়ালো। ছেলেটিকে দেখে রুপার এমন লজ্জা লাগলো সে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। তবে রুপা ছেলেটিকে দেখে অবাকও হলো। বকা খেয়েও ছেলেটি একটুও মন খারাপ করে নি। মুখে কি সুন্দর হাসি।

সালিন্দা ছেলেটিকে আমগুলো দেখিয়ে কি যেন বললো। ছেলেটি আমগুলো তুলে নিয়ে চলে গেল।

Òকি বললে ওকে

Òআমগুলোকে আচার বানিয়ে দিতে বললামÓ

Òদেখেছো ছেলেটি একটু আগে বকা খেল অথচ এখানে এসে দিব্যি হাসছিলÓ

Òএটাই ওদের ব্যবসা। কাষ্টমারদের সামনে না হাসলে কি চলে

ওরা বসে গল্প করতে লাগলো। এরই মধ্যে ছেলেটি আমগুলো দিয়ে শ্রীলংকার ষ্টাইলে মাখিয়ে নিয়ে এসেছে। সালিন্দা আর ছেলেটির মধ্যে হালকা কথাবাতা©ও হলো।

সালিন্দা বললো, Òচলো আম খেতে খেতে হাঁটিÓ

Òকোথায় যাবে

Òসমুদ্রের পাড়ে।Ó

Òতুমি চিনবে

Òওদের জিগ্যেস করে দেখি এখান থেকে সমুদ্র কত দূর, কিভাবে যেতে হবে।Ó

সালিন্দা পডি বলে ডাকার সেঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি এসে হাজির। সালিন্দা পডির সাথে কথা বলে রুপাকে বললো, Òচল বেশী দূরে নয় দুটো বাড়ী পড়েই নাকি সমুদ্র।Ó

Òতাই নাকি

Òতাই তো বললোÓ

চলো বলে সালিন্দা মাখানো আমের বাটিটি নিয়ে রুপার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। সত্যি রুপারা যে গেষ্ট হাউজে উঠেছে তার তিনটি গেষ্টহাউজ পরেই সমুদ্র। বিশাল সমুদ্র। রুপা অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইলো। সমুদ্র এত্ত বড় হয়! কি বিশাল! সবচেয়ে বড় কথা তাদের হাউজের এত কাছে সমুদ্র অথচ তারা বুঝতেও পারে নি। ছোট ছোট ঢেউ পাড়ে আছড়ে পড়ছিল। সালিন্দা বললো, Òপানিতে নামবে না

রুপার মনে পড়ে গেল সালিন্দা রুপাকে সমুদ্র দেখাবে বলে কথা দিয়েছিল আর আজ সে সালিন্দার হাত ধরে সমুদ্রের তীরে হাuটছে। ছোট ছোট ঢেউ দুজনের পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। রুপা চুপ করে সমুদ্রের বিশালতা উপভোগ করতে লাগলো। সালিন্দা একদৃষ্টে রুপার মুখের দিকে চেয়ে রইলো।

হঠাৎ রুপা বললো, Òআচ্ছা ঢেউগুলো নাকি খুব বড় হয়

Òহ্যাu আর একটু পর বাড়বে। সন্ধ্যায়। আর বাতাস থাকলে তো সারাদিনই ঢেউ থাকে। আজ যে বাতাস নেই, তাই ঢেউ কম।Ó

ইতিমধ্যে আশেপাশের মানুষজন, বেশকিছু বিদেশী ট্যুরিষ্টও সমুদ্রের তীরে ভীড় জমিয়েছে।

রুপা বললো, Òএই জায়গাটা মনে হয় ট্যুরিষ্ট এলাকা তাই না

Òকি করে বুঝলে

Òদেখ না কত বিদেশীÓ

Òহ্যাu আমারও তাই মনে হচ্ছেÓ

Òআচ্ছা আমরা সন্ধ্যা পয©ন্ত এখানে থাকবো তো

Òতুমি যতক্ষণ চাইবে আমরা ততক্ষণই থাকবো।Ó

ঠিক সন্ধ্যা যখন হয় হয় আকাশে বড় একটা চাu উঠলো।

 

সালিন্দা রুপাকে দেখিয়ে বললো, Òদেখ রুপা চাuদটা কি সুন্দর মনে হচ্ছে সারাটা রাত এখানে তোমার হাত ধরে কাটিয়ে দেই।Ó বলেই সালিন্দা রুপার হাতটা শক্ত করে ধরলো। দুজনে হাতধরে পা ভিজিয়ে হাuটতে লাগলো। আজ রুপার একটা স্বপ্ন পূরণ হলো।

 

১৪

 

রাতে খেতে বসে সালিন্দা বললো, Òআগামীকাল পূর্ণিমা। আমার সাথে মন্দিরে যাবে রুপা

Òমন্দিরে? আমি তো খ্রিষ্টান আমি যেতে পারবো

Òহ্যাu সাদা একটা পোশাক পড়ে নিওÓ

Òআচ্ছা তুমি এখানকার মন্দির চিনবে

Òকাউকে জিজ্ঞেস করে চিনে নিব।Ó

খেতে খেতে সালিন্দা বললো, Òআচ্ছা আমি রাতে কোথায় ঘুমাবো

Òআমিও তাই ভাবছিÓ

Òআচ্ছা আইন অনুযায়ী তো আমি তোমার স্বামী তাহলে আমি তোমার ঘরে ঘুমাতেই পারি তাই না।Ó

Òপার তবে একই বিছানায় থাকা যাবে নাÓ

Òঠিক আছে আমি তাহলে ওদের কাছে আরো একটা বাড়তি খাট চাই।Ó

Òহু তা চাইতে পারোÓ

Òকিন্তু একটা সমস্যা আছেÓ

Òকি

Òওরা জানে আমরা হানিমুন করতে এখানে এসেছি। এখন যদি বাড়তি খাট চাই তবে ওদের সন্দেহ হবে। তাছাড়া ওদের বাড়তি খাট আছে কি না কে জানে। আবার সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দিবে। বলবে আমি তোমাকে ভাগিয়ে এনেছি।Ó

রুপা বললো, Òতাহলে ঘুমিয়ে কাজ নেই আমরা বরং জেগে গল্প করেই রাতটা কাটিয়ে দেই।Ó

Òবিশ্রাম না নিলে অসুখ করবে। নতুন জায়গা নতুন আবহাওয়া কয়েকটা দিন তোমাকে একটু সাবধানে থাকতে হবে।Ó

রুপা বললো, Òথাক ওদের কাছে আর কিছু চাওয়ার দরকার নেই।Ó

Òতাহলে আমি তোমার সঙ্গেই ঘুমাচ্ছি

Òসেটা বললাম নাকি

Òতাহলে

Òআমি নীচে বিছানা পেতে ঘুমাবÓ

Òখাটটা ভাগ করে নেওয়া যায় না

রুপা আর সালিন্দা দুজনেই হাসতে লাগলো।

পরের দিন সকালের নাস্তা সেরে রুপাকে নিয়ে সালিন্দা মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সালিন্দা এখানকার মন্দির চেনে না। তাই যাবার সময় গেষ্ট হাউজের ম্যানেজারকে জিগ্যেস করে জেনে নিয়েছে। রাস্তায় বেড়িয়ে সালিন্দা একটি সিএনজি নিল আর ঠিক মন্দিরের সামনে গিয়েই নামলো। গেইটের কাছ থেকে সালিন্দা সাদা পদ্মফুল কিনে নিল। রুপার হাতে দিয়ে বললো, Òপ্রথম মন্দিরে এসেছো তাই যা খুশি চেয়ে নাও। মন থেকে চাইলে অবশ্যই পাবে।Ó

সালিন্দার মুখের দিকে চেয়ে রুপা মিষ্টি করে হাসলো। দুজনে সিড়ি দিয়ে উঠে বটগাছের নিচে গৌতম বুদ্ধের মুতি© পায়ের নিচে ফুল রেখে প্রাথ©না করলো। সালিন্দা রুপাকে পুরো মন্দির চত্ত্বর ঘুরে দেখিয়ে বৌদ্ধ ধমে© অনেক ইতিহাসই রুপাকে বিস্তারিত বলতে লাগলো। রুপা মনোমুদ্ধ হয়ে সালিন্দার কথা শুনতে লাগলো। মন্দির থেকে বেড়িয়ে আসার সময় সালিন্দা রুপাকে নিয়ে গেল শপিংমলে। রুপা বললো, Òএখানে নিয়ে এলে যে

Òবিয়ের কেনাকাটাটা সেরে ফেলিÓ

Òমানে এখানে কেন? তোমার বাড়ী যাবো না

Òএই এলাকাটা তো ট্যুারিষ্ট এলাকা তাই এখানে কোয়ালিটি সম্পন্ন জিনিস পাওয়া যাবে তাইÓ

Òথাক আমার কোয়ালিটির দরকার নেই। আগে তোমার বাড়ি যাব তারপর কেনাকাটা Ó

Òআচ্ছা বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে না তুমি বরং কিছু নরমাল পোশাক কিন। মানে শার্ট-প্যান্ট-ষ্কাট এসব পছন্দ কর।Ó

Òমানে

Òএখানে থাকবে আর এসব পড়বে নাÓ

Òনা আমি আমার বাংলাদেশের পোশাকই সব সময় পড়বোÓ

Òআচ্ছা অন্য কিছু অন্তত কিন। ঠিক আছে তোমাকে কিছু কিনতে হবে না আমার যা পছন্দ আমি তোমার জন্য তাই কিনবো।Ó বলে পুরো সপিংমল ঘুরে ঘুরে সালিন্দা নিজে পছন্দ করে রুপার জন্য একটা শাড়ি কিনলো। শাড়িটা রুপারও খুব পছন্দ হয়েছে।

এরপর দুজনে মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে সিনেমা দেখলো। সন্ধ্যায় দুজনে গেষ্ট হাউজে ফিরে এলো।

 

১৫

 

রাতে শুয়ে রুপা সালিন্দাকে জিগ্যেস করলো, Òআচ্ছা কাল আমরা বাড়ি যেতে পারবো

তো

Òকেন এই জায়গাটা তোমার পছন্দ হয় নি? Ó

Òজায়গাটাতো অসম্ভব সুন্দর! বাড়ির পাশে সমুদ্র। যখন খুশি তখন যাওয়া যায়, সমুদ্রের গজ© শোনা যায়, সূযা©স্ত দেখা যায়। এই জায়গাটার তো তুলনাই হয় না।Ó

Òতবে বাড়ি যেতে চাইছো যে

Òশোন পরের বাড়ি যে সেটা পরের বাড়িই, তা যত সুন্দরই হোক না কেন। আমি তোমার বাড়ি যেতে চাই। যেটা আমার নিজের ঘর।Ó

Òশোন রুপা তুমি যে আমার বাড়ি আমার বাড়ি করছো সেখানে গিয়ে কিন্তু এত সুযোগ সুবিধা পাবে না। স্নান ঘর নেই, নদীতে স্নান করে নদীর পাড়েই পোশাক পরিবত©ন করে আসতে হবে।Ó

Òনদীর পাড়ে মানে

Òসবাই নদীর পাড়েই কাপর পাল্টায়Ó

Òআমি না হয় বাড়ি এসেই কাপর পাল্টাবোÓ

Òঠিক আছে। তবে জেলেদের জীবনযাত্রা কিন্তু সোজা কথা নয়, পারবে তো মানিয়ে নিতে? Ó

Òকই আসার আগে তো এসব বলো নি। এখন এসব বলে ভয় দেখাচ্ছো কেন

Òভয় নয় সত্যি কথা।Ó

Òপারবো। তুমি পাশে থাকলো সব পারবো আমি।Ó

Òরুপা কাল সকালে আমি একটা কাজে বাইরে যাবো। তোমাকে কিছুটা সময় একা থাকতে হবে। পারবে তো থাকতে

Òবাইরে কি দরকার

Òখবর আনতে যাব কবে ঠিক হবে রাস্তা।Ó

সকালের নাস্তা সেরে সালিন্দা বেড়িয়েছে। রুপা বাগানে বসে বসে বই পড়ছিল। পেপারওয়ালা দুইটি পেপার দিয়ে গেল। একটি ইংরেজি একটি শ্রীলংকার ভাষায়। রুপা ইংরেজি পেপারটি হাতে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় ছবিসহ খবরটি পড়ে ফেললো। Ôমাহ&তারার উপকূলীয় এলাকা দিয়ে মানব পাচার, পাচারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছে যাদের বেশীরভাগই নারী।Õ এই এলাকারই কিছু স্থানীয় লোকজন জড়িত। নিজের অজান্তেই রুপার বুকটা & করে উঠলো। একই ছবি ছেপেছে সিনহালা পত্রিকাটিতেও। নিশ্চয়ই একই খবর। রুপার মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল। কিন্তু কেন তা সে নিজেই বুঝতে পারলো না। এদিকে রাস্তা দিয়ে দুজন বিদেশী মেয়ে যাবার সময় রুপাকে হাত নেড়ে Ôশুভ সকালÕ বললো। রুপা মুখে হাসি ঝুলিয়ে প্রতিউত্তর দিল।

 

মেয়ে দুটি খোলা গেইট দিয়ে ভেতেরে ঢুকে রুপাকে বললো, Òহ্যালো আমি রোজ ভিয়েতনাম থেকে। তোমার সাথে কি পরিচিত হতে পারি

Òহ্যাu অবশ্যইÓ

রোজ অন্য মেয়েটিকে দেখিয়ে বললো Ò আমার বন্ধু সিলভিÓ

রুপা হায় বলে হাত বাড়িয়ে দিল। রোজ বললো, Òএই গেষ্ট হাউজটা খুব চমৎকার এবং আরামদায়ক। আমরা গতবছর এখানে ছিলাম। এবার এই গেষ্ট হাউজটি বুক করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ম্যানেজার বললেন যে এখন নাকি এই গেষ্ট হাউজ আর ভাড়া দেওয়া হবে না। হাউজের মালিক নিজেই থাকবেন। তাহলে তোমরাই বুঝি এই গেষ্ট হাউজের মালিক

রুপা অবাক হলো। তবে হাসি মুখে বললো, Òনা না আমরা মালিক নই। আমরা এখানকার গেষ্ট।Ó

Òআমাদের তো বলা হয়েছিল এই গেষ্ট হাউজ আর ভাড়া দেওয়া হবে না।Ó

Òকিন্তু আমাদের তো ভাড়া দিল।Ó

Òকি জানি হয় তো মালিক সিদ্ধান্ত পরিবত© করেছেন।Ó

আবারও রুপার ভেতরটা কেuপে উঠলো। কি বলছে এরা! যদি গেষ্ট হাউজ ভাড়া না দেয় তবে তাদের কেন ভাড়া দেওয়া হলো? এর মধ্যে কি কোন রহস্য আছে। রুপা সালিন্দাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভাবতে চায় না। কিন্তু বারবার তার মনে একই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো তবে সে কিছু বললো না। মেয়ে দুইটি রুপার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে সমুদ্রের পাড়ে চলে গেল। রুপাকেও সাথে যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তবে রুপা যাবে না জানিয়ে দিল।

দুপুরের খাবারের আগে সালিন্দা ফিরে এলো। এরই মধ্যে রুপা স্নান শেষ করে নিজের ঘরে একা বসে বসে অনেক কিছু চিন্তা করে ফেললো। ঘরে ফিরে সালিন্দা রুপাকে বললো, Òতোমার একটা খারাপ খবর আছেÓ

রুপা চমকে গিয়ে বললো, Òকি খবর

Òরাস্তার কাজ শেষ হতে আরো বেশ কয়েকদিন সময় লাগবেÓ

Òতার মানে আমাদের এখানেই থাকতে হবেÓ

সালিন্দা পেছন থেকে রুপাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ÒহুÓ

Òজানো এই গেষ্ট হাউজ নাকি কাউকে ভাড়া দেওয়া হবে না জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।Ó

Òতাই নাকি। কেন

Òমালিক নাকি নিজেই থাকবেন। আচ্ছা আমাদের কেন তাহলে ভাড়া দিল

Òহয় তো মালিক প্ল্যান চেঞ্জ করেছেন।Ó

রুপা ভাবলো সালিন্দার কথাটাই ঠিক। ভাত খেতে খেতে সালিন্দা বললো, Òআচ্ছা রুপা এদের খাবার খেতে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে? তুমি যদি চাও তো এদের রান্নাঘরে গিয়ে তোমার নিজের মতো করে রান্না করে নিতে পারো।Ò

Òসত্যি বলছো

Òহ্যা

নারিকেলের তরকারী খেতে খেতে রুপার আসলেই অরুচি ধরে গেছে। সে বললো, Òতাহলে কাল আমি রান্না করবো। আচ্ছা আমি যা দিয়ে রান্না করবো তা এখানে পাওয়া যাবে তো

Òতোমার কি লাগবে তুমি একটি লিষ্ট করে দাও ম্যানেজার সব এনে দিবেÓ

হঠাৎ রুপার সকালে পত্রিকায় পড়া খবরটার কথা মনে পড়লো সে বললো, Òআচ্ছা আজ পেপারে একটা নিউজ দেখলাম। এখান থেকে নাকি মানব পাচার হয়

Òতাই নাকি। অনেক ইনফরমেশন নিয়ে ফেলেছো দেখছি জায়গাটা সম্পকে©?Ó

Òপেপারে দিয়েছে। তাই দেখলামÓ

Òদেখি কোথায়। আমার নাম নিশ্চয়ই সেখানে নেই

রুপা অবাক হয়ে বললো, Òমানে! তোমার নাম থাকবে কেন

সালিন্দা হাসতে হাসতে বললো, Òনা তোমার মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তুমি খবরে আমার নাম পড়ে ফেলেছ তাই আমাকে জেরা করছো।Ó

সালিন্দার কথা শুনে রুপার সন্দেহ & করে দ্বিগুণ হয়ে গেল সে বললো, Òআচ্ছা তোমাদের বাড়িতে কখন যাব

Òসেই খবরই তো জানতে গিয়েছিলাম। রাস্তা ঠিক হতে নাকি বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।Ó

Òসেকি কথা! তাহলে মানুষ যাতায়াত করবে কিভাবে

Òকরবে নাÓ

Òতা কি করে সম্ভব! রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে ঠিক আছে তবে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চয়ই আছে।Ó

Òনেই। আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুমি গিয়ে অন্য কাউকে জিগ্যেস করতে পার।Ó

Òতাহলে রাস্তা যতদিন ঠিক না হবে আমাদের এখানে থাকতে হবে।Ó

ÒহুমÓ

সালিন্দা স্নান করতে গেল। রুপা পেপার হাতে নিয়ে বসে রইলো। তার কিছুই ভাল লাগছে না। রুপার সব স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে যেতে চাইছে। আজ সকাল থেকে সালিন্দা গেষ্ট হাউজে ছিল না। বাইরে তার কাজ ছিল। রুপা ভাবতে লাগলো সালিন্দার এখানে কি দরকারি কাজ। তার মানে এই এলাকা সালিন্দার পরিচিত। সেও পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত। রুপা ভাবলো সে মিসেস সামান্তাকে ফোন করবে। তারা এখন কোথায় আছে কেমন আছে তাকে সব জানাবে। রুপার ফোন নেই। সালিন্দা স্নান থেকে বের হলে কোন রকমে সে মিসেস সামান্তার ফোন নম্বরটা চেয়ে নেবে। তারপর ফোন করবে। সালিন্দা স্নান থেকে বেরিয়ে এলে রুপা বললো, Òআচ্ছা মিসেস সামান্তার সাথে তোমার যোগাযোগ হয়

Òনা আসার পর শুধু জানিয়েছিলাম ভালমতো পৌuছেছি। এরপর আর যোগাযোগ হয় নি।Ó

Òআমরা তো বাড়িতে পৌuছাইনি। তুমি জানাওনি যে আমরা এখানে আটকা পড়েছি

Òএই কথা বললে তারাও নিশ্চয়ই টেনশন করবে। তাদেরকে টেনশনে রাখার কোন দরকার আছে কি বলো

রুপা বললো, Òজানো বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে। বাড়িতে একটা ফোন করবো ভাবছি।Ó

Òঠিক আছে কথা বলো। তবে আমরা যে এখানে আটকা পড়ে আছি সেটা বলার দরকার নেই।Ó

Òকেন

Òতোমার বাড়ির লোকজনও নিশ্চয়ই টেনশন করবে।Ó

Òকরুক আমি তাদের বলবো যে আমরা মাইত্রি নামে একটা গেষ্ট হাউজে আটকা পড়ে আছি।Ó

Òঠিক আছে জানিয়ে দাও।Ó

বাড়িতে ফোন করার কোন ইচ্ছেই রুপার নেই নেই। শুধু সালিন্দার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যই রুপা কথা বলেছিল। সালিন্দা রুপার হাতে ফোন দিয়ে বললো, Òনাও কথা বলÓ বলেই সালিন্দা বিছানায় শুয়ে পড়লো। রুপা বারান্দায় গিয়ে সালিন্দার ফোন ঘেটে মিসেস সামান্তার নম্বর বের করলো। এরপর রুপা মিসেস সামান্তাকে ফোন দিল। তিনিই ফোন ধরলেন-

Òহ্যালো রুপা কেমন আছোÓ

Òভাল। আপনারা কেমন আছেন

Òআমরাও ভাল আছি। শুনলাম তোমরা নাকি একটা গেষ্ট হাউজে আটকা পড়ে আছ

রুপা অবাক হলো। সালিন্দা বলেছিল মিসেস সামান্তা বিষয়টি জানেন না। কিন্তু তিনি জানেন। রুপা বললো, Òহ্যাu কবে যে রাস্তা ঠিক হবে

Òকেন যেখানে আছ সেই জায়গাটাতে কি খুব অসুবিধে হচ্ছে

Òনা না অসুবিধে নয়। তবে- Ó

Òতবে আর কি। একটু কষ্ট করে থাক না ভাই কয়েকটা দিন।Ó

এরপর অল্পবিস্তর কথা বলে রুপা রেখে দিল। এখন মিসেস সামান্তার চরিত্রটিও রুপার কাছে রহস্যময় লাগছে। রুপা রুমে গিয়ে দেখে সালিন্দা বিছানায় উঠে বসে আছে। রুপা ঘরে ঢুকে সালিন্দাকে ফোনটি দিয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াল। সালিন্দা ফোনটি না নিয়েই বললো, Òরুপা একটা কাজ করলে কেমন হয় বলো তো

Òকি

Òচলো আমরা এখানেই বিয়েটা করে ফেলিÓ

Òএখানে মানে

Òমানে আমাদের তো কথা ছিল যেদিন বাড়ি যাবো পরের দিন বিয়ে করবো তাই না

Òহ্যা

Òশোন বাড়ি কবে যাই ঠিক নেই আমরা বরং বিয়েটা এখানেই সেরে ফেলি।Ó

সালিন্দার এই কথাতে রুপার মনে হলো সালিন্দা তাকে ভোগ করবে তারপর পাচার করে দিবে। সে সিদ্ধান্ত নিলো সে এখানে বিয়ে করবে না। রুপাকে চুপ থাকতে দেখে সালিন্দা বললো, Òকি ভাবছো

Òনা আমি এখানে বিয়ে করবো নাÓ

Òকেন এখানে সমস্যা কি

Òতোমাদের বাড়ির মানুষজন, আত্মীয়-স্বজন কেউ থাকবে না। তা কি হয়

Òকাউকে দরকার নেই। শুধু তুমি আর আমি হলেই তো হলো তাই না

সালিন্দা গলার স্বরটা ভারী করে আবার বললো, Òদেখ আমি প্রতিরাতে তোমার পাশে ঘুমিয়ে থাকি অথচ তোমাকে একটু ছুuতেও পারি না। আমার আর তর সইছে না রুপা। চলো কালকেই বিয়ে করবো।Ó

একটু থেমে সালিন্দা আবার বললো, Òনা থাক কাল না। কারণ তোমাকে তো গীজা©য় নিয়ে বিয়ে করতে হবে। ফাদারের সাথে কথা বলতো হবে।Ó

রুপা ভাবলো এই সুযোগটা সে নিবে। সে বললো, Òঠিক আছে আমি কিন্তু তোমার সাথে যাবো ফাদারের সাথে কথা বলতেÓ

Òঠিক আছে। আমি তাহলে ফাদারের সাথে কথা বলে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখি।Ó

রুপা ভাবলো ফাদারের কাছে গিয়ে সে তাদের পরিস্থিতির কথা সব খুলে বলবে। যদি রহস্যজনক কিছু থাকে তো ফাদার নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন। ফাদার রুপাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। আর রুপা আসার সময় কুমিল্লার ফাদারের কাছ থেকে মনে করে একটা চিঠি নিয়ে এসেছিল। চিঠিটি এখানকার ফাদারকে দেখালে তিনি নিশ্চয়ই রুপাকে যে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।

পরের দিন সকালে রুপাকে নিয়ে সালিন্দা গীজা© গেল। মাইত্রী গেষ্ট হাউজ থেকে খুব বেশী দূরে নয়। সিএনজিতে করে মাত্র দশ মিনিটের পথ। ফাদার প্রাসান্না বিক্রামাসিংঘে সালিন্দাকে আর রুপাকে উষ্ণ অভ্যথ©না জানালেন। ফাদার তাদেরকে নিয়ে গেলেন খাবার ঘরে। সেখানেই কথা হলো। সব কথাই হলো ইংরেজিতে। কোন কথাই রুপার বুঝতে বাকী থাকলো না। রুপা যা বলবে ভেবে রেখেছিল সালিন্দাই সব বলে দিল। ফাদার শুনে বললেন, Òহ্যাu রাস্তাঘাট কবে ঠিক হয় তার তো ঠিক নেই। তোমরা এখানেই বিয়েটা সেরে নিতে পার। আমি তোমাদের সব ধরনের সহযোগিতাই করবো।Ó

রুপা হয়তো অমত জানাতো কিন্তু ফাদারের একটা কথা শুনে রুপার মনের দ্বন্দ্বের অবসান হলো। তা হলো সালিন্দার দুলাভাই অথা© তার আপন বোনের জামাই এখানকার ফাদারদের হোষ্টেলে থেকেই বড় হয়েছেন, পড়াশুনা করেছেন। বোন বৌদ্ধধমে© হলেও দুলাভাই খ্রিষ্টান। ফাদার এদের সবাইকে চেনেন।

রুপার এখন নিজেকে খুব হালকা লাগছে তবে সালিন্দাকে মিথ্যে সন্দেহ করার জন্য কোথায় যেন একটা কষ্ট মনে রয়ে গেল। ফাদারের কাছ থেকে বেড়িয়ে দুজনে গেল বিয়ের শপিং করতে। রুপা অনেক কিছুই পছন্দ করলো এর কিছু কিনলো আর কিছু কিনলো না। তবে সালিন্দা রুপার পছন্দের জিনিসগুলো সবই দেখে রাখলো। সেদিনও সারাদিন বাইরে বেড়িয়ে খাওয়া-দাওয়া করে দুজনে সন্ধ্যায় গেষ্টহাউজে ফিরলো। বিয়ের আগের রাতে সালিন্দা রুপাকে শ্রীলংকার বিয়ের রীতিনীতি বলে দিল।

১৬

 

রুপার বিয়ে আজ বিকেল চারটায়। বিয়ের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে খেয়েদেয়ে রুপা বসলো সাজতে। রুপাকে সাজাতে পালা© থেকে দুইজন বিউটিশিয়ান এসেছেন। তারাই বিয়ের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে এসেছেন। বিয়ের গাউন দেখে রুপা একেবারে অবাক। গতকাল যে গাউনটি অনেক দামী বলে সে নেড়েচেড়ে রেখে এসেছিল আজ সেটিই তাকে পরানো হচ্ছে। গতকালের তার পছন্দ করা সব জিনিষগুলো দিয়েই তাকে সাজানো হচ্ছে। সাজানো শেষে আয়নার সামনে দাuড়িয়ে রুপা নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছে না। বিয়ের সাজে তাকে কি অপূব© সুন্দর লাগছিল।

শ্যামনগরের সেই কালো মেয়েটির আজ বিয়ে হবে। রুপার খুব মায়ের কথা মনে পড়লো। আজ তার মা তাকে এই সোজপোষাকে দেখলে কি খুশিই না হতেন! আনন্দে রুপার চোখদুটো ভিজে উঠলো। ঠিক তখনই মিসেস সামান্তা এবং নিমালী এসে রুপাকে সারপ্রাইজ দিল। রুপা  তাদেরকে দেখে অবাক।

Òতোমরা

Òহ্যাu, তোমাদের বিয়ে আর আমরা থাকবো না। আজ আমরা কিন্তু মেয়ের পক্ষেরÓ

সবাই হাসতে লাগলো। নিমালী আর তার মা রুপাকে গাড়ীতে করে গীজা© নিয়ে। দুপুরের পর থেকে রুপা সালিন্দাক দেখে নি। সে কোথায় জিগ্যেস করতেই মিসেস সামান্তা বললেন, Òযথা সময়ে সে এসে যাবে।Ó

সালিন্দাও এসে গেল তার বোন আর বোন জামাইয়ের সাথে। গির্জায় প্রবেশ করলো প্রথমে রুপা আর তার দুই পাশে মি. এবং মিসেস সামান্তা। পেছনে সালিন্দা আর তার দুইপাশে বোন আর বোন জামাই। বিয়ে শুরু হয়ে গেল। সালিন্দার কিছু আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব সব মিলিয়ে প্রায় Õখানেক মানুষ। আংটি-মালা বদল আর কিছু মন্ত্র উচ্চারনের মধ্য দিয়ে সালিন্দা আর রুপা দুজন দুজনের হয়ে গেল চিরদিনের জন্য। এখন থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী।

গর্জায় খ্রিষ্টান রীতিতে বিয়ে সম্পন্ন হলে সবাই মিলে গেল রিসেপশন হলে। সেখানে বৌদ্ধধর্মের রীতি অনুযায়ী আবারও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো দুজন। এরপর শুরু হলো আহার পব© এমন  জাঁকজমকভাবে রুপার বিয়ে হবে রুপা চিন্তাও করতে পারে নি।

রুপা তার বিয়েতে মিষ্টার সামান্তার পরিবার এবং সালিন্দার বোনের পরিবারকে পেয়ে খুবই খুশিহলো। সালিন্দা তাকে এতবড় সারপ্রাইজ দিবে সে ভাবতেও পারে নি। রাতে রিসেপশন হলের পুরো অনুষ্ঠান শেষ হলে রুপা সালিন্দাকে বললো, Òতুমি কিন্তু আমাকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিলেÓ

সালিন্দা হাসতে বললো, Òআর একটা সারপ্রাইজ দিব তোমাকেÓ

Òআরো?Ó

Òআমাদের বাড়ির রাস্তা ঠিক হয়ে গেছে। আমরা এই রিসেপশন হল থেকে বেড়িয়ে সোজা আমাদের বাড়ি যাবোÓ

Òসত্যি বলছো

Òহ্যাu তবে তোমাকে একটু কষ্ট করতে হবেÓ

Òকি

Òজানোই তো অনেকদিন ধরে বাড়িতে থাকি না তাই বাড়ি ঘরের অবস্থা কি কে জানে

ঠিক মূহুতে সালিন্দার বোন মেনুকা এসে বললো, Òনা না তোমাকে মোটেও কষ্ট করতে হবে না আমি এখানে আসার আগে তোমাদের বাড়িঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখে এসেছি।Ó

সালিন্দা বললো, Òধন্যবাদ দিদি। তুই এই কাজটা না করে দিলে আজ আমাদের বাসর রাতটাই হতো না। সারা রাত ঘরবাড়ি পরিস্কার করেই কাটিয়ে দিতে হতো।Ó

মিসেস সামান্তা এসে ভাই বোনের কথার সুর ধরে বললেন, Òতবে তোমাদের তো বাড়ি পৌuছাতে পৌuছাতেই ভোর হয়ে যাবে। বাসররাত করবে কখন

রুপা খুব লজ্জা পেল। সে মাথা নিচু করে রইলো। বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকাতা শেষে রাত দুটো নাগাদ সালিন্দা আর রুপা ফুলে ফুলে সাজানো এক গাড়ীতে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রিসেপশন হলের সব কাজ শেষ করে সালিন্দার বোন পরে বাড়ি ফিরবে। আর উপহার সামগ্রি সালিন্দার বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে। সালিন্দা আগেই রুপাকে বলেছিল এখান থেকে তাদের বাড়ি যেতে ঘন্টা তিনের মতো লাগবে। সারাদিরে ক্লান্তির পর সালিন্দার বুকে মাথা রেখে রুপা গাড়ীতে ঘুমিয়ে পড়লো।

সালিন্দা রুপাকে ডাকল। Òরুপা আমরা এসে পড়েছিÓ

রুপার মনে হলো যেন আধা ঘন্টা পরই সালিন্দা তাকে ডাকতে শুরু করেছে। রুপা আধোঘুমে চোখে মেলে তাকাল। সারা বাড়ি-উঠোন বিভিন্ন রঙ্গিন বাতিতে আলোকিত। আকাশে পূর্ণিমার বড় একখানি চাuদ। তার কাছে মনে হলো যেন চারপাশের পরিবেশটা তার চেনা। একটা গেষ্ট হাউজ। হাউজের চালের উপর আম গাছের ডালগুলো নূয়ে পড়েছে। ডাল ভতি© আম।

Òরুপা নামোÓ

Òকোথায় এলাম আমরা

Òতোমার বাড়িÓ

সব সেই আগের মতোই ত লাগছে। শুধু বাড়িটির নাম বদলিয়েছে। আগে ছিল মাইত্রি গেষ্ট হাউজ আর এখন রুপা ভিলা। কি আশ্চর্য। রুপা কিছুই বুঝতে পারছে না। 

Òআচ্ছা এটা তো সেই গেষ্ট হাউজ তাই না

Òনা এটা এখন তোমার বাড়ি। আগে ভেতরে চলো, বলছি।Ó

রুপা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দেখে ম্যানেজার আর পডি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ম্যানেজারের হাতে বরণডালা তাতে মাটির প্রদীপ, পান আর যেন কি সব। রুপা আর সালিন্দা দরজার সামনে এলে ম্যানেজার থালাটা ঘুড়িয়ে তাদের বরণ করে নিলেন। রুপার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সে সালিন্দার সাথে আগের সেই রুমে গিয়ে দেখে বিছানাটা ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। বাসর রাতের বিছানা। সালিন্দা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

 

১৭

সকালে স্নান করে রুপা আজ শাড়ী পড়েছে। ভেজা চুল ছেড়ে দিয়ে বাগানে হাuটতে বেড়িয়েছে সে। সালিন্দা এখনো ঘুমাচ্ছে। সাতদিন ধরে দেখা গেষ্ট হাউজটা তার আজ অন্যরকম ভাল লাগছে। সালিন্দা তাকে একটার পর একটা সারপ্রাইজ দিয়েই যাচ্ছে।

এটিই সালিন্দার আর তার বাড়ি। তাদের বাড়ি। এত সুন্দর! অথচ সে ভেবেছিল সালিন্দার বাড়ি হবে তার দেখা বাংলাদশের জেলেপাড়ার বাড়ির মতো ঘিঞ্চি ঘুপড়ি অন্ধকার। আর সালিন্দাকে সে কতই না ভুল বুঝেছে। সে মনে করেছে সালিন্দা মানব পাচারকারী দলের একজন, ছিt কি করে সে এসব ভাবতে পারলো! সালিন্দা এই গেস্ট হাউজের নাম বদলে রুপা নাম রেখেছে। ভালবাসার উপহার। সে কি দেবে সালিন্দাকে?

তার যে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। রুপা ভাবলো সে সালিন্দাকে অনেক অনেক ভালবাসবে। রুপা তার অফুরন্তা ভালবাসা দিয়ে সালিন্দার জীবনটাকে ভরিয়ে তুলবে।

রুপাকে বাগানে হাটতে দেখে পডি রুপার জন্য চা নিয়ে এলো। রুপা হাসিমুখে পডির হাত থেকে চা টা নিয়ে পডির পেছনে পেছনে রান্না ঘরে গেল। সেখানে ম্যানেজারকে দেখে বললো, Òআমি আজ সবার জন্য চা বানাবোÓ

ম্যানেজার হাসিমুখে পডিকে বললো সব কিছু ম্যাডামকে দেখিয়ে দিতে। রুপা চায়ের পানি বসিয়ে রান্নাঘরের আশেপাশের পরিবেশটা দেখতে লাগলো। লবির বামপাশে তাদের বড় রুম। পেছনে রান্নাঘর আর ডানপাশে দুটি ঘর। রুপা ঘরগুলো সম্পকে© ম্যানেজারকে জিগ্যেস করলো। এর একটিতে ম্যানেজার আর পডি থাকে। অপরটি সালিন্দার ঘর। ঘরটি তালা দেওয়া। রুপা ম্যানেজারকে সালিন্দার ঘরটি খুলে দিতে বলল। ঘর খোলা হলে রুপা ভেতরে ঢুকে অবাক। সেখানে সালিন্দার বিছানা, কাপরের আলমারী, টেবিল-চেয়ার, বইপত্র সবই রয়েছে। দেয়ালে ঝোলানো বাহারী চিত্রকম©। সালিন্দার রুচির প্রশংসা না করে পারলো না রুপা।

ম্যানেজার বললেন, Òছুটিতে এলে সালিন্দা মাল্লি(ভাইয়া) এখানে থাকেÓ

Òতোমরা সবাই মিলে আমাকে বোকা বানিয়েছো তাই না

ম্যানেজার হাসতে লাগলেন। রুপা ঘর থেকে বেড়িয়ে চা বানাতে মনোযোগ দিলো। এরপর ম্যানেজার আর পডিকে চা দিয়ে নিজের আর সালিন্দার জন্য চা নিয়ে ঘরের দিকে রওনা দিলো।

বিয়ের পর সালিন্দা রুপাকে নিয়ে পুরো শ্রীলংকা ঘুরে বেড়ালো। সবুজ পাহাড়ের হাতছানি আর নীল সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে দুজন দুজনাতে হারিয়ে যেতে লাগলো।

এভাবে কেটে গেল প্রায় মাসখানেক। একদিন সালিন্দা রুপাকে জানালো মি. সামান্তা বাংলাদেশ থেকে তার গামে©ন্ট ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। মি. সামান্তা স্বপরিবারে অষ্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছেন।

রুপা বললো, Òতাহলে তোমার চাকরি

Òআমি আমার চাকরির কথা ভাবছি না। ভাবছি তোমার লেখাপড়ার কথা। আচ্ছা রুপা তোমাকে আমি শ্রীলংকার কোন মেডিকেল কলেজে ভতি© করিয়ে দেই। আমি জানি তুমি পারবে।Ó

রুপা রাজি হলো। রুপা আসার সময় তার সব কাগজপত্রই নিয়ে এসেছিল। তাই সিদ্ধান্ত হলো জুন মাসে রুপা শ্রীলংকাতেই কোন মেডিকেল কলেজে ভতি© হবে।

সালিন্দা বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করতে লাগলো। এক মাসের মধ্যেই সেলান ব্যাঙ্ক মাহ&তারা ব্রাঞ্চ থেকে সালিন্দার চাকরির খবর এলো। বেতন বেশ ভাল। সালিন্দা এপয়েন্টমেন্ট লেটারটি হাতে নিয়ে রুপাকে দেখিয়ে বললো, Òতোমার সৌভাগ্যের কারণে আমার চাকরিটা হয়ে গেল রুপাÓ

Òউহু। আমার ভাগ্য নয়, বলো তোমার যোগ্যতায়Ó

Òতুমি পাশে ছিলে তাই।Ó

Òতাহলে তো তোমাকে আজ আলুর ভতা© বানিয়ে খাওয়াতে হবেÓ

Òশুধু আলুর ভতা© আর কিছু না

Òআপাতত আলুর ভতা© আর ডাল।Ó

সালিন্দার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাuচটা অফিস। ঘর থেকে বের হয় সকাল সাড়ে সাতটায়। সালিন্দার দুপুরের খাবারটাও রুপা সকালে রান্না করে টিফিন ক্যারিয়ারে করে দিয়ে দেয়। সালিন্দা বিকেলে ঘরে ফিরে পুরোটা সময় রুপাকে দেয়। সন্ধ্যায় সালিন্দা রুপাকে নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বেড়াতে যায়। তারপর দুজনে বসে সিনহালা ভাষা শিক্ষার বই নিয়ে। রুপাও কয়েকদিনে বেশ রপ্ত করে নিয়েছে সিনহালা ভাষা।

শনিবার সালিন্দা রুপাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে। আর রবিবার সকালে সালিন্দা রুপাকে নিয়ে গীজা© যায়। সেখান থেকে বের হয়ে শপিংমলে ঘুরে বেড়ায়, সিনেমা দেখে, বাইরে খেয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে। এখানে এসে রুপার জীবনটা একেবারে বদলে যায়। সালিন্দা রুপার জীবনটাকে আনন্দ আর খুশিতে মাতিয়ে রাখে।

 

১৮

 

এভাবে কেটে যায় আরো দুই মাস। এরই মধ্যে রুপা তার ভেতর টের পায় আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব। সালিন্দা অফিস থেকে ফিরলে রুপা তাকে খবরটি দেয়া মাত্র সালিন্দা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। সে রুপাকে কোলে তুলে শুণ্যে নিয়ে ঘোরাতে থাকে।

Òনামাও আমাকে পড়ে যাবো যেÓ

Òআজ তোমাকে আমি নামাবোই নাÓ বলে সালিন্দা আরো কয়েকটি চক্কর দেয়। এরপর রুপাকে বিছানায় নামিয়ে বলে, Òবিকেলে তৈরি থাকবে তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবÓ

Òআজই যাবেÓ

Òহ্যাu আজই যাবোÓ

বিকেলে রুপা আর সালিন্দা ডাক্তার দেখাতে যায়। মাহ&তারা সরকারী হাসপাতাল। মনোরম পরিবেশ। দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে এটি কোন সরকারী হাসপাতাল। সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার কারণ হচ্ছে শ্রীলঙ্কায় যে কোন নারী গর্ভবতী হলে সরকারি হাসপাতালে রেজিস্ট্রি করতে হয়। সরকারের কাছে সঠিক তথ্য রাখার জন্য। এদের সেবায় তো রুপা বেজায় খুশি। ডাক্তার সব পরীক্ষা করে জানালেন সালিন্দা আর রুপার কোল জুড়ে সন্তান আসছে। প্রয়োজন মতো সব ওষুধও হাসপাতাল থেকে দেয়া হলো। হাসপাতাল থেকে আসার সময় রুপা লক্ষ্য করলো তার প্রতি সালিন্দার কেয়ার যেন আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

বাড়ি ফিরে সালিন্দা বললো, Òরুপা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিÓ

Òকি

Òচাকরিটা আমি ছেড়ে দিবÓ

Òকি বললে? কেন

Òআমি চাকরি করলে তোমাকে দেখবে কে

Òকি বলছো তুমি? চাকরি ছাড়তে হবে না। আমি ম্যানেজ করতে পারবোÓ

Òনা আমি তোমাকে এই অবস্থায় একা রেখে কাজে যেতে পারবোই নাÓ

Òসেকি কথা! শ্রীলংকা স্ত্রীরা গভ©বতী হলে স্বামীরা চাকরি ছেড়ে ঘরে বসে থাকে নাকি

Òশ্রীলংকার সব স্ত্রীরা তো আর বাংলাদেশের মেয়ে না। আমি কালই রেজিগনেশন লেটার পাঠিয়ে দিবÓ

Òশোন প্লিজ এমন করো নাÓ

Òতুমি কিচ্ছু ভেবো না তোÓ

Òআচ্ছা এখন তো আমাদের খরচ আস্তে আস্তে বাড়বে। চাকরি ছাড়লে আমাদের চলবে কি করে

Òআমি অন্য কাজের ব্যবস্থা করবোÓ

Òতাহলে আমরা বরং তোমার রুমে গিয়ে থাকি আর এই রুমটা আমরা আগের মতো ভাড়া দিয়ে দেই। দেখ প্রতিদিন পঞ্চাশ ডলার করে পাওয়া যাবে।Ó

Òএই ঘর শুধু তোমার। এখানে আর কাউকে থাকতে দেওয়া হবে নাÓ

Òতাহলে আমাদের চলবে কি করে

Òআমি কাজ শুরু করবো, ট্যুরিষ্ট গাইডÓ

Òমানে

Òএই যে এখানে বিদেশীরা আসে, তাদের নিয়ে বিকেলে নৌকা ভ্রমনে যাবো। কোথায় কি আছে ঘুরে দেখাবো, ব্যাখ্যা করবো। কোন বিদেশি মেয়ে পানিতে পড়ে গেলে তাকে পানি থেকে কোলে করে তুলবো।Ó

Òসত্যি এসব করবে নাকি

Òহ্যাu আমার বাবাও ট্যুরিষ্ট গাইড ছিলেন।Ó

Òতুমি যে বলেছিলে তুমি জেলের ছেলে

Òআরে আমি জেলের বংশধর। আমার বাবাও কোন দিন মাছ ধরতে যান নি। তিনি ট্যুরিষ্ট গাইড ছিলেন।Ó

Òআচ্ছা মেয়েরা পানিতে পড়ে গেলে তুমি সত্যি কোলে করে তুলবে

Òপড়ে গেলে তো তুলতেই হবেÓ

Òকিন্তু তুমি কোলে করে তুলবে

Òনা না কেউ পড়বে না। আর পড়ে গেলেও আমি হাতে গ্লভ্স পড়ে তুলবো। এবার হলো তো

রুপা সালিন্দার কথা শুনে হাসতে লাগলো। Òআচ্ছা আমাদের তো একটা ঘর খালিই পড়ে আছে। সেখানে কি এমন করে সাজানো যায় না

Òনা সেখানে ট্যুরিষ্টদের থাকতে দিলে তোমার প্রাইভেসির সমস্যা হবে। আমি আছি তো তুমি এসব নিয়ে একদম ভেবো না। আমি সারাদিন তোমার সঙ্গে থাকবো আর বিকেলে শুধুমাত্র দুই ঘন্টার জন্য নৌকা ভ্রমনে যাব।Ó

সালিন্দা রুপাকে একেবারে পুতুলের মতো করে আগলে রাখে। সময় মতো খাওয়া, বিশ্রাম, ঘুম সব কিছুর খেয়াল রাখে। ভারি কোন কাজ করতে দেয় না। রান্নার কাজটাও সালিন্দা করতে চেয়েছিল তবে একদিন রান্না খেয়েই রুপা বলেছে রান্নার কাজটা রুপা নিজেই করতে চায়। সালিন্দা এতে রাজি হয়েছে কারণ সালিন্দা নিজেই নিজের রান্না খেতে পারে নি। এদিকে আশেপাশের পাড়াপ্রতিবেশীদের সাথেও রুপার একটু একটু করে সম্পক© গড়ে উঠছে। সবাই রুপাকে সহযোগিতা করে। রুপা গভ©বতী জেনে পাড়া প্রতিবেশীরা ভাল কিছু রান্না করলে রুপাকে দিয়ে যায়। প্রতিদিনই প্রায় রুপার ঘরে প্রতিবেশীদের পাঠানো খাবার আসে। এটাই শ্রীলংকার নিয়ম। পডি এখনো রুপাদের সাথেই থাকে। ফুট ফরমাস খাটে। তবে ম্যানেজার বাবু বিদায় নিয়েছেন।

সালিন্দার নতুন ইঞ্চিনের নৌকা হয়েছে। সে বিকেল চারটায় যায় আর ফিরে সন্ধ্যা ছয়টা কি সাড়ে ছয়টায়।

 

১৯

 

রুপা এখন আট মাসের গভ©বতী। ডাক্তার রুপাকে সন্তান জন্মের সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছেন 2005 সালের ১০ই জানুয়ারি। রুপা আর সালিন্দা দিন গুনতে থাকে। এরই মধ্যে পাuচমাসে একবার এবং গত সপ্তাহেও একবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়েছে। সন্তান সুস্থ এবং নিরাপদ আছে। রুপা এবং সালিন্দা কেউই জানতে চায় নি তাদের অনাগত সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে। তারা সন্তান জন্মের দিনই প্রথম জানবে আর দেখবে তাদের ভালবাসার প্রথম ফসল। সালিন্দা আর রুপার সংসারে যেন শুধুই সুখের বন্যা।

এদিকে বড়দিন চলে আসে। সালিন্দা বৌদ্ধ ধমে© হলেও রুপার জন্য সে বড়দিনের সব আয়োজন করেছে। শ্রীলংকায় বড়দিন মানে সবধমে© মানুষেরই আনন্দ-উৎসবের দিন। চারিদিকে ছুটির আমেজ। ট্যুরিষ্ট পাড়ায়ও প্রচন্ড ভীড়। তবে সালিন্দা এই বড়দিনে কয়েকদিন কাজে গেল না। রুপার বড়দিন বলে একুশ থেকে ছাব্বিশ তারিখ পযন্ত© ছুটি করবে বলে সিন্ধান্ত নিল।

২০০৪ সালের uচিশে ডিসেম্বর শনিবার। রুপা গভ©বতী© থাকায় সালিন্দা বোন মেনুকা আগের দিন অথা© ২৪ তারিখে রুপার সাথে বড়দিন পালন করবে বলে পরিবার নিয়ে ভাইয়ের বাড়ি এসেছেন। কাছাকাছি পূর্ণিমারর সময় বলে সালিন্দা রুপাকে ২৪ তারিখ রাতে গীজা© যেতে দিল না। তাই ২৫ তারিখ ভোরে সালিন্দা তার বোন, জামাই, তাদের দুই ছেলেমেয়ে এবং রুপাকে নিয়ে গীজা© গেল। গীজা© থেকে ফিরে এসে দেখে মেনুকা রান্নার তোড়জোর শুরু করেছে। রুপাকে সারাদিনে কোন কাজই করতে দিল না। রুপা ননদের দুই ছেলেমেয়ের সাথে সারাদিন আনন্দ ফুতি© করে কাটালো। আনন্দে কেটে গেল তাদের বড়দিন।

বিকেলে মেনুকা তার পরিবার নিয়ে বিদায় নিলেন। নতুন বছরে সালিন্দা এবং রুপাকে তাদের বাড়ীতে দাওয়াত করে গেলেন। পরের দিন রবিবার। রাতে বিছানায় গিয়ে রুপা সালিন্দাকে বললো,

Òকাল সকালে আমাকে গীজা© নিয়ে যাবে

Òকয়টার সময় যাবে

Òগীজা© অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল সাড়ে ছয়টায়। আমরা ছয়টার দিকে না হয় যাবোÓ

Òঠিক আছে। আমি তাহলে ঘড়িতে এলাম দিয়ে রাখি।Ó

সালিন্দা ঘড়িতে পাচuটার এলাম দিয়ে রাখে। সারাদিনের কম©ব্যাস্ততা আর বড়দিনের অনুষ্ঠানের পর ক্লান্ত থাকায় দুজনেই ঘুমিয়ে পরে।

২০০৪ সালের ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ। সেইদিন ছিল ভরা পূণি©মা। সারা শ্রীলংকায় চলছে বড়দিন উপলক্ষে সরকারী ছুটি। সাথে পূনিমা© ছুটি বৌদ্ধদের ধমী©য় অনুষ্ঠানও যোগ হলো। সারা শ্রীলঙ্কা উৎসবের আমেজে আনন্দে ভাসছে। সালিন্দা সকাল ছটার দিকে সিএনজিতে করে রুপাকে নিয়ে রওনা দিল মাহ&তারা গির্জায়। গির্জায় যাওয়ার পথেই রুপার হঠাৎ প্রসব বেদনা শুরু হলো। রুপা ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে সালিন্দাকে বললো তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। রুপার যন্ত্রনা দেখে সালিন্দা ঘাবড়িয়ে গেল। সে রুপাকে সোজা মাহ&তারা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেল।

এমাজে©নসিতে নিয়ে ভতি© করালে হাসপাতাল থেকে রুপার প্রেগন্যান্সির রিপোট© পাসপোট© জরুরী ভিক্তিতে চাওয়া হলো। সালিন্দা কিংকত্যব্যবিমূর অবস্থায় পড়ে যায়। সে কি করে রুপাকে একা রেখে আবার বাড়ি যাবে। কিন্তু রুপার রিপোট© আর পাসপোট© না হলে হাসপাতালেও সমস্যা হবে।

এমাজে©ন্সিতে কত©ব্যরত ডাক্তার জানালেন, Òআপনার স্ত্রীর আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর জানা যাবে সন্তান কি অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া আগেকার রিপোট©গুলোও দেখতে হবে। রোগী যেহেতু আমাদের অব্জারভেশনে আছে আপনি ভয় পাবেন না। আপনি বরং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসুন। কোন চিন্তা করবেন না।Ó

সালিন্দা বললো, Òআমি কি আল্ট্রাসনোগ্রাম করা পযন্ত থাকতে পারি

ডাক্তার এতে রাজী হলেন। অল্ট্রা করার পর নাস© জানালেন, Òআপনার স্ত্রীর সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমরা আপনার স্ত্রীকে এখনই ডেলিভারি রুমে নিয়ে যাব। ততক্ষণে আপনি আপনার স্ত্রীর রিপোট© আর পাসপোট© নিয়ে আসেন।Ó

সালিন্দা রুপার হাত ধরে বললো, Òরুপা খুব শিগগিরই আমাদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। তুমি মা হবে। তুমি কিচ্ছু ভেবো না। আমি তোমার পাশে আছি।Ó

Òতোমাকে যে আমার রিপোট© আর পাসপোট© আনতে বললো

Òহ্যাu আমি এক্ষুনি ফিরে আসবো। তুমি টেনশন করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি ডেলিভারি রুম থেকে বেড়িয়ে দেখবে আমি বাইরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিÓ

বলতে বলতেই নার্স এসে রুপাকে ডেলিভারি রুমে নিয়ে গেল। সালিন্দা একটি সিএনজিতে করে বাড়ির পথে রওনা দিল রুপার পাসপোট© আর প্রেগন্যেন্সির রিপোট©গুলো আনার উদ্দেশ্যে।

সকাল ৭টায় রুপার একটি ফুটফুটে মেয়ে জন্ম নেয়। আটটা সাতটা নাগাদ রুপাকে ওয়াডে© নেওয়ার সময় রুপা চারিদিকে শুধু হায় হুতাশ আর হাহাকার শুনতে পায়। আজ রুপার একটা সন্তান জন্ম নিয়েছে। চারিদিকে আনন্দের বন্যা বইয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু এই নিম© সকালে কিসের এত হাহাকার রুপা বুঝে উঠতে পারে না। সে চারিদিকে তাকিয়ে সালিন্দাকে খুuজতে থাকে। কিন্তু কোথাও সে সালিন্দাকে দেখতে পায় না। সালিন্দা তাকে কথা দিয়েছেল ডেলিভারি রুম থেকে বেরিয়েই রুপা সালিন্দাকে দেখতে পাবে। কিন্তু কোথায় সালিন্দা? চারিদিকে কিসের এত হাহাকার!

রুপাকে ওয়াডে© রেখে যাওয়া হল। এরপরই রুপার ফুটফুটে মেয়েটিকে রুপার কোলে দেওয়া হলো। বলা হলো মেয়েকে বুকের দুধ খাওয়াতে। রুপা মেয়ের মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে। একেবারে সালিন্দার চেহারা। সালিন্দার মতো গায়ের রং। আনন্দে রুপার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। তবে সালিন্দকে সে দেখতে পাচ্ছে না কেন! আর কোথাও যেন কি হয়েছে বলে তার মনে হলো। হঠাৎ কোন এক নাস© এসে ওয়াডের টিভি অন করে দিয়ে গেলেন। রুপার টিভির প্রতি কোন আগ্রহ নেই। সে তাদের ভালবাসার ফসল আদরের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে যেন সালিন্দাকে দেখতে লাগলো। ভাবলো হয় তো রাস্তায় সালিন্দার দেরি হচ্ছে।

 

২০

 

হঠাৎ টিভির দিকে তাকিয়ে রুপা বুঝতে পারে কোথাও বিরাট কিছু একটা ঘটে গেছে। টিভিতে দেখাচ্ছে শুধু জলোচ্ছাস, পানি, ঢেউ, চারিদিকে কান্না আর আহাজারি। কিন্তু শ্রীলংকা ভাষা সে কিছুই যেন বুঝতে পারছে না। রুপা টিভির নীচে ইংরেজী সাবটাইটেল দেখার চেষ্টার করলো। শ্রীলংকার স্থানীয় সময় সকাল :৪৫ মিনিটে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রলয়ংকারী সুনামীটি আঘাত হেনেছে শ্রীলংকার উপকূলীয় অঞ্চলে। রুপার বুকের ভেতরটা হঠাৎ ভেঙ্গে খানখান হয়ে যেতে চাইছে। এখন তার আর বুঝতে বাকী থাকে না প্রলয়ঙ্কারী সুনামীর তান্ডবের কথা। রুপা চারপাশে সালিন্দাকে খুuজে কিন্তু কোথাও খুuজে পায় না। সালিন্দা নাকী তার পাসপোট© নিয়ে হাসপাতালে আর ফিরে আসেনি। এদিকে অনেক স্বজনহারা মানুষের চিrকারে মাহতারা জেনারেল হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। এসময় রুপা একজন নাস©কে সালিন্দার কথা জিগ্যেস করে। নাস© জানায়, Òসুনামীর কারণে রাস্তাঘাটবন্ধ, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন আছে। আপনার স্বামীর হয় তো আসতে দেরী হবে।Ó নাস©দের কথায় রুপা আরো ভেঙ্গে পড়ে। এত দেরি হচ্ছে কেন? সালিন্দার কোন বিপদ হলো না তো!

বেলা এগারটার দিকে উপকূল এলাকা থেকে আহত মানুষদের হাসপাতালে নিয়ে আসা শুরু হল। সদ্য মা হওয়া রুপা মেয়েকে হাসপাতালের বিছানায় শুইয়ে রেখে সারা হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে সালিন্দাকে খুuজে। কোথাও তাকে খুuজে পায় না। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে কিন্তু সালিন্দা ফিরে আসে না। এই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মাহতারা জেনারেল হাসপাতাল যেন মৃত্যুপুরীতে রুপ নিয়েছে। আহতদের চিৎকার, মরানাপন্নদের যন্ত্রণা, মৃত্যুব্যাক্তির স্বজনদের আহাজারি সব মিলিয়ে রুপার মনে হচ্ছে যেন বিভিসিকাময় পরিস্থিতি।

ডাক্তার নার্সরা সুনামি কবলিতদের নিয়ে ব্যস্ত। হাসপাতালে তিল পরিমান ঠাই নেই। তাই রুপার কাগজ পত্রের আর কোন খোজ করে না। রুপা শারীরিকভাবে সুস্থ। তাই পরের দিন সকালে রুপাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু রুপার স্বামীর নিখোu হওয়া এবং সাথে শিশু সন্তানের জন্য কোন কাপড় নেই দেখে কয়েকজন নাস©© মিলে রুপাকে কিছু টাকা ও প্রয়োজনীয় জিনিস দেয়। কারণ নার্সদের বুঝতে বাকি থাকে না যে রুপার স্বামী আর ফিরে আসবে না। কিন্তু কোথায় যাবে রুপা? সালিন্দা যে রুপাকে নিতে আসে নি। এদিকে সুনামীর তান্ডবে হতাহতদের জায়গা দিতেই হাসপাতাল কতৃ©পক্ষ হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। রুপাকে এখানে রাখা সম্ভব নয়। আর হাসপাতালের পরিবেশ এমন দূবি©সহ হয়ে উঠছে যে রুপা তার শিশু সন্তান নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে পারলেই যেন বাuচে।

হাসপালের কমীরাই রুপাকে একটা সিএনজি যোগার করে দিলো কিন্তু সিএনজি রুপার বাড়ী পয©ন্ত যাবে না বলে জানালো। তবুও যতটুকু যাওয়া যায় রুপা ততটুকু যাওয়ার জন্যই সিএনসিওয়ালাকে রাজি করালো। কিছুদূর যাওয়ার পর নিজের চোখে সুনামীর তান্ডবের চিহ্ন দেখে রুপা হতবিহব্বল। সিএনজি চালক রুপাকে নামিয়ে দেয়। রুপা ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে সামনে এগুতে থাকে। কিন্তু মাটি কাদায় মাখামাখি রাস্তায় হাuটাও যায় না। চারিদিকে কেবল মানুষের চিrকার হাহাকার। সদ্য প্রসবিনী রুপা হাuটতে হাuটতে দূব© হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে অঝোরে কাuদতে থাকে।

উদ্ধারকমী©রা রুপাকে নিয়ে যায় মাহ&তারা প্রদেশের রাহুলা কলেজে স্থাপিত প্রথম আশ্রয়কেন্দ্রে। রুপা অনেক আশা নিয়ে ছুটে যায় ক্যাম্পে। ভাবে হয় তো সেখানে সালিন্দার কোন খোu সে পাবে। না আশ্রয়কেন্দ্রে সালিন্দাকে খুuজে পাওয়া পায় না। সেখানে মা হারা শিশু, সন্তান হারা মা, স্বামী হারা স্ত্রীর আর স্ত্রী হারা স্বামীর আত©নাতে আকাশ বাতাস সব ভারী।

 

২১

 

সুনামী মাহ&তারা প্রদেশকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে। প্রদেশের তিনটি স্কুল একেবারে বালুতে মিশে গেছে যার কোন আর অস্থিত্বই নেই। রুপা যে গির্জায় যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিল প্রাথ©না চলাকালীন সময়ে সুনামী আঘাত হানলে গীজা© ভেতরে থাকা একজন সিষ্টারসহ নয় জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ সুনামীতে মৃত্যুরবণ করেছে। নয় লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। কলোম্বোর গল রোডে সতের’শ যাত্রী নিয়ে এটি ট্রেন সুনামীর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। রুপার বুকটা কেuপে উঠে সালিন্দা সেই ট্রেনে ছিল না তো!

আবার ভাবে, হতেও তো পারে সালিন্দা বেuচে আছে কোন হাসপাতালে, নয় তো কোন আশ্রয়কেন্দ্রে? রাহুলা কলেজে রুপার মতো আরো আড়াই হাজার গৃহহীন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ছোট শিশুটিকে নিয়ে বিশুদ্ধ পানির অভাব, পযা©প্ত খাবারের অভাব, অপযা©প্ত পয়tনিস্কাশন ব্যবস্থা সব মিলিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে রুপা যেন জীবনমৃত্যুর সাথে পাঞ্চা লড়তে থাকে।

এভাবে কেটে গেল সাতদিন। পরের দিন থেকে রুপা পাতানো এক মাসীর কাছে ছোট মেয়েটিকে রেখে এক বুক আশা নিয়ে প্রতিদিন অন্যান্য আশ্রয় কেন্দ্র এবং বিভিন্ন হাসপাতালে সালিন্দার খোu করতে থাকে। কিন্তু মিলেনা সালিন্দার কোন সন্ধান। এদিকে জানুয়ারীর ২৩ তারিখে রাহুলা কলেজের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রটিও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হলো।

আশ্রয়কেন্দ্রে যেসব অনাথ শিশুরা রয়েছে তাদের পাঠানো হবে Ôহ্যাপি ডিজিট শিশুপল্লীÕ নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি এতিমখানায়। এবার রুপা কোথায় যাবে? রুপা শ্রীলংকার ভাষা খুব একটা জানে না। রুপা অঝোরে কাuদতে লাগলো।

রুপার বত©মান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে হ্যাপি ডিজিটের পরিচালক রুপাকেও শিশুপল্লীতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে শত© থাকবে রুপা সেখানে সব শিশুদের সেবায় কাজ করবে। শুধুমাত্র নিজের শিশুই নয় রুপাকে হবে সব শিশুদের মা। রুপা রাজী হলো।

রাজধানী কলোম্বো থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ওয়াদ্দুয়া গ্রামে জার্মানি অর্থায়নে Ôহ্যাপি ডিজিট শিশুপল্লীÕ নামে একটি অনাথ আশ্রম খোলা হলো। একমাসের শিশুকে নিয়ে রুপা চলে গেল শিশুপল্লীতে যেখানে সুনামী আক্রান্ত পিতামাতাহীন বিভিন্ন বয়সের পাu হাজার তিন’শ শিশু আশ্রয় নিয়েছিল। শিশুপল্লীর পরিচালক রুপাকে খুব স্নেহ করতেন। আশ্রয়কেন্দ্র শুরুর দুইমাস পর অনুষ্ঠান করে তিনি রুপার মেয়ের নাম রাখলেন। রুপা সালিন্দার ভালবাসার প্রতিদানস্বরুপ মেয়েকে বৌদ্ধধমে© দীক্ষিত করলো। সালিন্দা বলেছিল ছেলে হলে নাম রাখবে সাম্য আর মেয়ে হলে মৈত্রী। তাই রুপা মেয়ের নাম রাখলো মৈত্রী। সারাদিন নিজের মেয়েসহ সব শিশুদের আদর-যত্নের পাশাপাশি যাকে পায় তাকে দিয়েই সালিন্দার খোu খবর করতে থাকে। শিশুপল্লীর পরিচালকও বিভিন্ন জায়গায় সালিন্দা এবং সালিন্দার বোনের পরিবারের খোu করলেন। কিন্তু কোথাও তাদের খোu মিলেনি।

কয়েক মাস পর হ্যাপি ডিজিট শিশুপল্লী থেকে ঘোষনা দেওয়া হলো সুনামীতে এতিম শিশুদের দত্তক দেওয়া হবে। সারা শ্রীলংকা থেকে অনেক সন্তানহীন দম্পতিরা শিশুপল্লী থেকে এতিম শিশুদের নিয়ে তাদের ঘর আলোকিত করতে এগিয়ে আসতে লাগলো। রুপার মেয়ের বয়স তখন ছয় মাস। দেখা গেল যারা সন্তান দত্তক নিতে আসেন তারা এক নজর দেখেই রুপার মেয়েটিকে পছন্দ করে ফেলেন। তারা রুপার মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। একদিন ম্যানেজিং কমেটির একজন বলেই ফেললেন, Òআপনি আপনার মেয়েটিকে কোন এক দম্পতির কাছে দত্তক দিয়ে জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করুন।Ó

রুপা সেদিন মেয়েকে বুকে নিয়ে অঝোড়ে কেuদেছিল। এরপর কোন দম্পতি আসলেই রুপা মেয়েকে নিয়ে লুকিয়ে থাকতো যেন তার মেয়েটি কারো নজরে না পড়ে। চার বছর পর Ôহ্যাপি ডিজিট শিশুপল্লীÕটি অর্থাভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে রুপা শ্রীলংকার ভাষাটাকে খুব ভাল করে আয়ত্ব করে ফেলে। রুপার মেয়ে মৈত্রীও বড় হতে থাকে। এসময় কেন্দ্রের পরিচালক রুপাকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু রুপা সালিন্দাকে ফিরে না পাওয়া পয©ন্ত বাংলাদেশে ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

শিশুপল্লীর পরিচালক অনুরাধাপুরা প্রদেশের একটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চাকরি পেতে রুপাকে সহযোগিতা করেন। সেই থেকে রুপা ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অনুরাধাপুরা শাখায় ইংরেজী শিক্ষিকিা হিসেবে নিযুক্ত আছে। বিকেলে কয়েকজন মেয়েকে ইংরেজি প্রাইভেট পড়ায়।

রুপার মেয়ে মৈত্রী এবছর সেই স্কুল থেকেই ও লেভেল অথা© এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর রুপা প্রতি রবিবার আর পূর্ণিমার দিনসহ ছুটির দিনগুলোতে চলে যায় মাহ&তারার উপকুল ঘেষা সেই গ্রামে। সেই গ্রাম, সেই গেষ্ট হাউজগুলো আর নেই। সমুদ্রপাড়ের সেই গ্রামটি, সেই বাড়ীগুলি সুনামী গিলে খেয়েছে। এখন সেখানে শুধু বালু আর বালু।

তারপরও রুপা প্রতিটি ছুটির দিনে ছুটে যায় সমুদ্রপাড়ে। সারাদিন অপেক্ষায় থাকে সালিন্দা ফিরে আসবে কারণ সালিন্দা রুপাকে কথা দিয়েছিল সে ফিরে আসবে।


উপন্যাস সুন্দরী 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.