আমার পুকুর দেখার অভিজ্ঞতা
বিয়ের আগে আমি আর আমার স্বামী শান্তা একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুত্রে কথা বলার প্রচুর সময় ও সুযোগ পেয়েছি। একসাথে বেশীক্ষণ থাকলে কাজের কথার চেয়ে হয়তো অকাজের কথাই বেশি হয়। আমি যেহেতু শ্রীলঙ্কা দেখিনি কিন্তু সারাজীবন সেখানে থাকব তাই এই দেশ সম্পর্কে জানার প্রচুর আগ্রহ ছিল। দুজনে সময় পেলেই একে অন্যের কাছে দুজনের দেশ সম্বন্ধে জানতে চাইতাম।
একদিন ওকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা তোমাদের বাড়ি পুকুর আছে? ও বলল, হ্যাঁ দুইটা পুকুর আছে। পুকুরে মাছ আছে। আর পুকুরের উপর একটা ব্রিজও আছে। আমি মনে মনে ওদের বাড়ি, বাড়িতে দুই দুইটি পুকুর সম্পর্কে ধারণা করে ফেললাম। বিয়ের আগে ছুটিতে গিয়ে মায়ের সাথে হবুশ্বশুর বাড়ির গল্প করলাম। জান মা, ওদের নাকি দুইটা পুকুর আছে।
আমার মা পুকুরে স্নান করতে ভালবাসতেন। আমাদের বাড়ির পাশের পুকুরটি যতদিন সচল ছিল মা প্রতিদিন পুকুরে নেমে স্নান করতেন। খুব ভাল সাঁতার জানতেন মা। মায়ের আবার আলাদা বিশেষ একটা গুণ ছিল। মা হাত-পা নড়াচড়া না করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে ভেসে থাকতে পারতেন। মা স্নান করতে নামলেই ছোটবড় অনেকে মা-কে অনুরোধ করতেন পানিতে ভেসে দেখানোর জন্য। মা দেখাতেন। আমরা মায়ের মতো ভেসে থাকার কতো যে চেষ্টা করেছি কিন্তু আমরা কেউই পারতাম না।
যাই হোক, আমার গল্প শুনে মা খুশি হলেন। বললেন, ভালই হয়েছে দেশে তো এখন আর পুকুরই নেই স্নান করার জন্য। বিদেশে বিয়াই বাড়ি গিয়ে পুকুরে নেমে স্নান করতে পারব।
বিয়ের পর প্রথম যখন শ্রীলঙ্কায় শ্বশুর বাড়ি পৌঁছালাম তখন রাত দুটো। বাড়ির আশেপাশে দেখার সুযোগ নেই। পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে বাড়ির আশেপাশে ঘুরলাম। খুব সুন্দর পরিপাটি বাগান। চারিদিকে সবুজ ঘাসের লন। কিন্তু পুকুর চোখে পড়ল না। শেষে শান্তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা তোমাদের পুকুরগুলো কই?
ও বলল, কেন বাগানে দেখ নি? বললাম, না তো! ও আমাকে আবার বাগানে নিয়ে গিয়ে পুকুর দেখাল। আমি পুকুর দেখে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিলাম না😲😲।
আমাদের দেশে ছোট ছোট যে ডহা থাকে তাই। তিন/চার ফুট জায়গা একটু খুঁড়ে সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে তার মধ্যে পানি দিয়ে মাছ ছেড়ে রেখেছে। পাশেই একটা মাটির গামলা ভরা পানিতে কিছু পোনা মাছ। গামলায় আবার একটা শাপলা ফুল ফুটে আছে। যা আমি আগেই দেখে এসেছিলাম কিন্তু এগুলোকে যে পুকুর বলে সেটা আমার ধারণাই ছিলনা। আমি ভেবেছিলাম আমাদের দেশের মতো বিশাল পুকুর, যেখানে মাছ চাষ হয় এমন কিছু দেখব।
পুকুর |
ও হ্যাঁ পুকুরের উপর চার/পাঁচ ফুটের একটা ব্রিজও ছিল যেটি আমার স্বামী শান্তার নিজের হাতে বানানো।
মনে মনে ভাবলাম, আমার মা তো আশা করে আছেন, বেয়াই বাড়ি এসে তাদের পুকুরে নেমে স্নান করবেন, পানিতে ভেসে থেকে বেয়াই বাড়ির সবাইকে চমকে দিবেন! কিন্তু যে পুকুর দেখলাম তাতে তো আমার মায়ের পায়ের গোড়ালিও ভিজবে না😆।
শান্তাকে আমার অবাক হওয়ার কথা বললাম। ও বলল, ওর দেখা প্রথম পুকুরের কথা। ও যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন ওর ক্লাসের এক ছেলের বাড়িতে নাকি পুকুর ছিল। ওদের ক্লাসের কয়েকজন বন্ধু ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সেই পুকুর দেখতে গিয়েছিল। গিয়ে দেখে মোটর সাইকেলের টায়ার মাঝখান থেকে কেটে দুইভাগ করে একভাগের ভেতরে পানি দিয়ে পোনা মাছ ছেড়ে রেখেছে। সেই পুকুর দেখে বন্ধুরা নাকি বিস্মিত ও পুলকিত হয়েছিল। সব বন্ধুরা নাকি স্বপ্ন দেখত শুরু করেছিল, আহা আমাদের যদি এমন চমৎকার একটা পুকুর থাকতো! 😜
No comments