Header Ads

শ্রীলঙ্কার শিক্ষাব্যবস্থা




দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে উন্নত। স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। দশম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষাকে বলা হয় ও-লেভেল এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষাকে বলা হয় এ-লেভেল। এছাড়া স্কুলে ভর্তির আগে দুই অথবা তিন বছর শিশুদের প্রি-স্কুলে শিক্ষা দেয়া হয়। 

শিশুর বয়স জানুয়ারির ৩১ তারিখের মধ্যে পাঁচ পূর্ণ হলে তাকে প্রথমশ্রেণীতে ভর্তি নেয়া হয়। যদি শিশুর জন্ম ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে হয় তবে শিশুটিকে পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

ধরুন কোন শিশু যদি ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জন্মে তবে শিশুটি ২০১৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হবে।  কিন্তু শিশুটির জন্ম যদি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে বা তারপরে হয় তবে শিশুটিকে ২০১৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হতে হবে।   

এখানকার স্কুলগুলোতে শনিবার ও রবিবার দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটিরদিন। জানুয়ারি থেকে মার্চ তিনমাস স্কুল হওয়ার পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তায় প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পর ছুটি। আবার মে, জুন, জুলাই স্কুল। অগাস্টের প্রথম সপ্তায় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার পর ছুটি। একইভাবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর স্কুল, ডিসেম্বরে ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে ছুটি। স্কুলগুলোতে একদিনে দুইটা করে পরীক্ষা হয়। এতে করে সপ্তাহের পাঁচদিনেই পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। মাসের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা শেষ হয়ে বাকি তিন সপ্তাহ করে ছুটি থাকে। আবার প্রতিটি পূর্ণিমাই ছুটিরদিন। ফলে শিশুরা প্রচুর ছুটি পায়।  

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের জন্য বিশেষ কিছু বাধ্যতামূলক বিষয় থাকে। খেলাধুলা, গানবাজনা, শারীরিক শিক্ষা ইত্যাদি। প্রথমশ্রেণী থেকে এ-লেভেল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দাবা, কারাতে, সাঁতার, নাচ, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, ক্রিকেট, এল্লে, হ্যান্ডবল, বাস্কেট বল ইত্যাদি শেখার সুযোগ রয়েছে। 

যারা প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় কিছুটা দুর্বল তারা এসব  বিষয়ের উপর ক্যারিয়ার গড়তে পারে। কেননা এ-লেভেলের পরও এসব বিষয়ের উপর উচ্চশিক্ষা গ্রহনের দারুন সুযোগ রয়েছে। 

এখানকার শিশুরা আনন্দের সংগে লেখাপড়া শেখে। প্রচুর ছুটি থাকায় এবং পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি খেলাধুলা, সংগীত ও বিনোদনের ব্যাবস্থা থাকায় শিশুরা একঘেয়েমিতে ভুগে না। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যাবস্থা থাকায় শিশুদের মধ্যে বাড়তি উৎসাহ-আগ্রহ কাজ করে।   

শিশুদের জন্য পঞ্চমশ্রেণীতে বিশেষ সরকারি বৃত্তি পরীক্ষা রয়েছে। তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চমশ্রেণী এই তিন বছরে শিশুরা যা শিখেছে তার উপর ২০০ নম্বরে পরীক্ষা হয়। সেখান থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাছাই করে তাদের এ-লেভেল পর্যন্ত বিনা খরচে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হয়। 

বিশেষ একটা ব্যাপার হল, কোন স্কুলে যদি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক বা শিক্ষিকা না থাকেন তবে সেই স্কুলে ওই বিষয় পড়ান হয় না। বিষয়টি আর খোলাসা করে বললে, শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশ। এখানে বেশির ভাগ বৌদ্ধ, এরপর খ্রিষ্টান, তারপর মুসলমান এবং সবচেয়ে কম হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাই দেখা যায়, বেশিরভাগ স্কুলগুলোতে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের জন্য শিক্ষক/শিক্ষিকা নেই। যদি কোন স্কুলে হিন্দু অথবা মুসলিম শিক্ষক/শিক্ষিকা না থাকে সেই স্কুলে হিন্দু-মুসলিম শিক্ষার্থী থাকলে তাকে অন্য যে কোন ধর্ম পড়তে হয়। একইভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও একই ব্যাবস্থা। 

এ ব্যাপারে আমার এক অভিজ্ঞতা বলছি। আমাদের পাশের বাড়ির এক খ্রিষ্টান ভাই কোন এক স্কুলের বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষক। শিক্ষকের বাবা ছিলেন রেল কর্মকর্তা। চাকরির সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে বাস করতেন এমন এক এলাকায় যেখানে কোন খ্রিষ্টান বসতি ছিল না।  সেখানকার স্কুলে ছিল না কোন খ্রিষ্টান শিক্ষক/শিক্ষিকা কিংবা শিক্ষার্থী। তাই ছোটকাল থেকেই তিনি বৌদ্ধধর্ম পড়েছেন শিখেছেন। শেষে তিনি বৌদ্ধধর্মের উপর মাষ্টার ডিগ্রি গ্রহন করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে পেশা জীবন বেছে নেন। বৌদ্ধ ধর্মের উপর শিক্ষা গ্রহন করলেও তিনি মনেপ্রাণে খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারি। 

 এখানকার শিক্ষা কার্যক্রমে মানসিক চাপ কিংবা মুখস্তের কোন কারবার নেই। পুরোটাই মননশীল এবং সৃজনশীল। 


মৈত্রী prefect নির্বাচিত হল

বড়দিনের কীর্তনে প্রথমস্থান

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.