শ্রীলঙ্কার মেয়েরা
শ্রীলঙ্কা অনেকটা মাতৃতান্ত্রিক দেশ। ছেলেরা বিয়ের পর বৌ নিয়ে বাবা-মায়ের থেকে আলাদা সংসার পাতেন। বেশিরভাগ সময়ই মেয়ের বাড়ি থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বাড়িতে থাকেন। কেননা ৭০ ভাগ মেয়েই বিয়ের সময় বাবা-মায়ের কাছ থেকে বাড়ি উপহার পান।
যতদিন সামর্থ্য থাকে বাবা-মা দুজন নিজেদের মত আলাদা থাকেন। তারা ছেলেমেয়েদের সংসারে নাক গলান না। তবে সাপ্তাহিক ছুটিরদিনে ছেলেমেয়েরা বাবা-মার সাথে সময় কাটান। বাবা-মায়েরাও এই রবিবার দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
বাবা-মা যে বাড়িতে থাকেন সে বাড়িকে বলা হয় 'মাহাগে', মাহা অর্থাৎ মহা বা বড় আর গে অর্থ বাড়ি। পরিবারের যে কোন ধরনের বড় অনুষ্ঠান উৎসব থাকলে তা পালন করা হয় মাহাগেতে। মানে বাবা-মা যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িতে। বিশেষ দিনগুলিতে যেমন বড়দিন, পূর্ণিমা বা পরিবারের কারো জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী থাকলে সেসব উৎসব এই মাহাগেতে পালন করা হয় ।
বাবা-মায়েরা যখন অচল হয়ে পড়েন তখন তাদের দেখার দায়িত্ব মেয়েদের। তবে কারো যদি মেয়ে না থাকে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়।
আবার সম্পত্তি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে কোন আইন বা নিয়ম-কানুন নেই। বাবা-মা যাকে যতটুকু খুশি দিতে পারেন। যদি দুই সন্তান থাকে তবে দুই সন্তানকে সমান সম্পত্তি দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। বাবা-মা ইচ্ছে করলে এক ছেলেকে বা মেয়েকেই সব সম্পত্তি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন সন্তান কোন ধরনের অভিযোগ করতে পারবেন না।
তবে বাবা-মা জীবিত অবস্থায় সম্পত্তির ব্যবস্থা না করে গেলে তাদের মৃত্যুর পর সম্পত্তি ছেলেমেয়েদের মধ্যে সমান ভাগ হবে।
শ্রীলঙ্কার মেয়েরা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেই কর্মজীবন শুরু করে। পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যায়। বিয়ের পর মেয়েরা তাদের পেশা ছাড়েন না। যেহেতু বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকেন তাই মেয়েদের পেশাজীবনে কোন প্রভাব পরে না।
সন্তান বাবার পিতৃপরিচয়েই বড় হয়। এখানে ছেলে অথবা মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় না। মেয়েরা ছেলেদের মতই সমান অধিকার নিয়ে বড় হয়। মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়, ক্যারাতে শিখে, ক্রিকেট খেলে, কারো কোন ধরনের বাঁকা চোখে তাকানোর সময় বা সুযোগ নেই। কেননা এখানকার মানুষের অন্যে কে কি করল তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।
শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ সংখাগরিষ্ঠ দেশ। এখানে বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে মিশ্র বিবাহ প্রচুর লক্ষ্য করা যায়। আমাদের দেশে মিশ্র বিবাহের প্রচলন খুব একটা না থাকলেও এখানে মিশ্র বিবাহ সাধারন ব্যপার। আবার কেউ যদি ধর্মান্তরিত হয় সেক্ষেত্রে বেশিরভাগই ছেলেটি ধর্মান্তরিত হয়ে মেয়ের ধর্ম পালন করে।
পরিবারের যে কোন সিদ্ধান্তে মেয়েদের মতামতকে অধিক প্রাধান্য দেয়া হয়।
No comments