Header Ads

মেয়েদের বড় হওয়া

 



আজ এমন এক অভিজ্ঞতা সহভাগিতা করব একজন বাংলাদেশি হিসেবে আপনি শুধু অবাকই হবেন না রীতিমতো তাজ্জব বনে যাবেন। 

আমরা যেমন সন্তানের জন্মদিন পালন করি অথবা তাদের যে কোন সাফল্য-অর্জনকে ঘিরে উৎসব পালন করি শ্রীলঙ্কায় মেয়েদের বড় হওয়ার একটা উৎসব পালন করা হয়। একটি মেয়েশিশু যখন প্রথম  ঋতুমতী হয় অর্থাৎ পিরিয়ড হয় তখন সেটা উৎসব আনন্দের মাধ্যমে পালন করা হয়। যাকে বলা হয় big girl উৎসব। 

বাংলাদেশে একজন মেয়ে যখন ঋতুমতী হয় সেটা জানে কেবল মেয়েটির মা। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে বিষয়টি যত লুকানো যায় ততই যেন মঙ্গল কিংবা নিরাপদ ভাবা হয়। কেউ জানলে যেন পাপ হবে এমন করেই মেয়েদের শিক্ষা দেয়া হয়। এতে করে ছোট্ট মেয়েটির মনে ভয়-ভীতি, সংশয়, আতংক কাজ করে। 

কিন্তু শ্রীলঙ্কায় মেয়েরা বড় হলে শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, আত্মীয়-স্বজন, স্কুল, শিক্ষক-শিক্ষিকা, পুরো গ্রাম, এমনকি পুরো এলাকার সবাই জানতে পারে। 

একটি মেয়ে বড় হলে মেয়েটিকে পাঁচ অথবা সাত দিন ঘরে থাকতে হয়। এসময় মেয়েটিকে নিজের ঘরের বাইরে যেতে দেয়া হয় না কিংবা পরিবারের সদস্য ছাড়া কোন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয় না। স্কুলে খবর পাঠান হয়। মা-বাবা, ভাইবোন সবাই মেয়েটিকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে সহযোগিতা করে। মেয়েটিকে যথাসাধ্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে দেওয়া হয়। পাঁচ অথবা সাতদিন পর মেয়েটিকে খুব ভোরে সাদা কাপর দিয়ে ঢেকে বাইরে খোলা স্থানের চারিদিকে শাড়ি অথবা কাপর দিয়ে আড়াল করে স্নানের আয়জন করা হয়। পানিতে সাদা রঙের যে কোন সুবাসিত ফুল মেশান হয় এবং ছোট নতুন মাটির কলসি দিয়ে পানি তুলে স্নান করান হয়। স্নান শেষে পুনরায় সাদা কাপর দিয়ে ঢেকে মেয়েটিকে ঘরে নেয়া হয়। স্নান শেষ হলেই বাবা-ভাইয়েরা খুশিতে আতশবাজি ফোটায়। আর এতেই আশেপাশের মানুষজন অবগত হয় যে অমুক বাড়ির মেয়েটি বড় হয়ে গেছে।   

ঘরে আনার পর মেয়েটিকে বিশেষ উপহার দেয়া হয়। নতুন জামা, জুতো তো পরানো হয়ই সাথে স্বর্ণের কানের দুল, চেইন যার যার সাধ্যমত উপহার দেয়া হয়। তখন সকালের নাস্তার বিশেষ আয়জন থাকে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে। টেবিলে শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পিঠা থাকে। সব ধরনের পিঠা, কেক খাবার থেকে প্রথন অংশ তুলে নিয়ে আর একটা আলাদা প্লেট সাজান হয়। অতিথিরা খাবার আগে সেই প্লেটটি গ্রামে যিনি দুধমা তাকে দেয়া হয়। 

এবার বলি দুধমা কি। গ্রামে যে মা তার সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছেন তেমন একজন মাকে দেয়া হয়। এরপর আশেপাশের পাড়াপ্রতিবেশিদের বাড়ীতে খাবার পাঠান হয়। সবাইকে বিলান হলে বাড়ির সবাই এবং স্নান উৎসবে যাদের নিমন্ত্রণ করা হয় সবাই মিলে সকালের নাস্তা করেন।  

দুপুরে কিংবা রাতে বিশেষ পার্টির আয়জন করা হয়। সাধারন নিম্নবিত্তরা বাড়িতে আয়োজন করলেও অবস্থাসম্পন্নরা পাঁচতাঁরা হোটেলে big girl পার্টির আয়জন করেন। আত্মীয়স্বজনরা এই উৎসব উপলক্ষে মেয়েটিকে উপহার সামগ্রি দেয়। 

এই  উৎসবের মাধ্যমে ছোট্ট মেয়েটি যে বড় হল তাকে বড়দের সমাজে অভ্যর্থনা জানান হয়, স্বাগত জানান হয়। তাকে আশ্বস্ত করা হয় যে মেয়েটির যা হল তা প্রাকৃতিক এবং তার এই পরিবর্তনে সবাই আনন্দিত-খুশি। 

আমাদের মধ্যে কিশোরী বয়সে একটা আতঙ্ক ভীতি কাজ করে। কখন আমাদের পিরিয়ড হবে? আমি তখন কি করব? 

কিন্তু শ্রীলঙ্কায় মেয়েরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত সময় আসবে, তাদের ঘিরে উৎসব-আনন্দ হবে, বাড়িতে বাজি ফুটানো হবে, নতুন জামা-কাপর পাবে, আত্মীয়দের কাছ থেকে নানান সব উপহার পাবে। শ্রীলঙ্কায় মেয়েদের বড় হওয়া একটা বিরাট আনন্দ-উৎসব।

শ্রীলঙ্কার মেয়েরা 

আজ বিশ্ব পানি দিবস

এ আমাদের লজ্জা 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.