বিয়ের দাওয়াত
শ্রীলঙ্কায় এসে আমার প্রথম যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা হচ্ছে বিয়ের দাওয়াত সংক্রান্ত। ফিলিপাইনে থেকে স্থায়ীভাবে শ্রীলঙ্কায় চলে আসার সপ্তাহ খানেক পর বিয়ের এক কার্ড পেলাম। আমি তো মহাখুশি। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশের বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান, খাবার-সংস্কৃতি দেখার সুযোগ পাব। আমি যেহেতু বাংলাদেশি তাই বিয়েতে কি পরবো? শাড়ি তো অবশ্যই পরবো তবে সাথে নয় মাসের ছোট শিশু থাকায় খাবার সময় যাতে ঝামেলা না হয় তেমন একটা শাড়ি বাছাই করতে হবে এসব নিয়ে বিস্তর ভাবছিলাম।
স্বামীর
কাছ থেকে একটু পরামর্শ চাইলাম। আচ্ছা কোন শাড়িটা পরবো বল তো? ও একটা বেনারসি শাড়ি দেখাল।
আমি বললাম, এই শাড়িটা একটু ভারী। মেয়েকে সামলিয়ে খাবার খেতে সমস্যা হবে মনে হচ্ছে।
আমার স্বামী আমার দিকে তাকিয়ে হাচ্ছেন। বললাম হাসছো কেন?
ও
আমাকে নিমন্ত্রণের কার্ডটা হাতে দিয়ে বলল, পড়ে দেখ।
পড়ার
কি আছে?
আরে
দেখই না।
আমি
ভাবলাম, মনে হয় কি ধরনের পোশাক পরে যেতে হবে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
আমি
পড়তে লাগলাম। যা লেখা বাংলায় এর সংক্ষিপ্ত অর্থ দাঁড়ায় -
মিস্টার
এন্ড মিসেস পাতিরানা,
আগামি
১২ই অক্টোবর আমাদের মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। কিরিমেটিয়াগারে গির্জায় সকাল
৯ টায় বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। আপনারা গির্জায় উপস্থিত থেকে নবদম্পতির জন্য প্রার্থনা
ও আশীর্বাদ করবেন।
এটুকুই।
মানে গির্জায় যখন বিয়ে পরানো হবে আমাদের শুধুমাত্র সেই অনুষ্ঠানেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে।
বিয়ে পরানো হলে আমরা বাড়ি ফিরে আসব। এখানে খাওয়াদাওয়ার কোন কারবার নেই।
একজন
বাংলাদেশি হিসেবে আমার জন্য এই ধরনের নিমন্ত্রণ শুধুমাত্র আশ্চর্য নয় হতভম্ব ও মর্মাহত
হওয়ার সামিল। আমি আমার স্বামীকে বললাম এমন নিমন্ত্রণ দেয়ার দরকার কি?
ও
যা বলল শুনে আমি লজ্জায় মরে যাই।
সবাইকে
খাওয়ানোর সামর্থ্য সবার থাকে না। কিন্তু সবাই চায় তার ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে কাছের দুরের
সব আত্মীয়রা যোগদান করুক। নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাক, আশীর্বাদ করুক। খাওয়াটা তো বড়
কিছু নয়। আমরা যে কোন সময় বাড়িতে ভাল কিছু রান্না করে খেতে পারি। কিন্তু যারা বিয়ে
করতে যাচ্ছে এটা তাদের জন্য বিশাল একটা আনন্দঘন
স্মরণীয় দিন। এই দিনে নবদম্পতির শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবাই অংশ নিবে, তাদের মঙ্গল কামনা করবে,
তাদের নতুন জীবনের সাক্ষী হবে, এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমি
অনেক লজ্জা পেয়েছিলাম সেইদিন। বুঝতে শিখেছিলাম বিয়ের প্রকৃত অনুষ্ঠান আসলে কি?
আমরা
বাংলাদেশিরা তো বিয়ে পরানোর সময় উপস্থিত না থাকলেও খাবার সময় ঠিক উপস্থিত থাকি। তাই
লজ্জা আমার তো পাওনাই ছিল।
এখন
প্রতি বছরই আমরা চার/পাঁচটি বিয়ের দাওয়াত পাই। যার প্রায় শতভাগই শুধুমাত্র গির্জায়
অংশগ্রহণ করার। এখন আমি এসব বিয়ের অনুষ্ঠানে খুব আনন্দ নিয়েই যাই। নবদম্পতির জন্য প্রার্থনা
করতে, নবদম্পতিকে শুভকামনা জানাতে।
No comments