Header Ads

আমাদের আলম ভাই

 



 


বাজারের ঠিক মাঝখানে লোকটির সাথে আমার দেখা। পুরো মুখভর্তি হাসি দিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘দিদি কেমন আছেন?’ লোকটির উচ্ছ্বসিত মুখ দেখে আমিও হাসি মুখে উত্তর দিলাম, ‘ভাল আছি।‘ লোকটি আরও কাছে এসে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করল। আমি তো অবাক!

‘কবে দেশে এলেন দিদি?’

প্রথমে ভেবেছিলাম লোকটি হয়ত ভুল করে আমাকে অন্য কেউ ভেবেছেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন শুনে বুঝলাম লোকটি আমাকে ভাল করেই চেনেন। তবে আমি এই লোকটিকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে করতে পারছিলাম না। বললাম, ‘দুইদিন হয়।‘  

‘দিদি শ্রীলঙ্কার অবস্থা তো খুব খারাপ। আবার ফিরে যাবেন নাকি এখানেই থেকে যাবেন?’

‘না না চলে যাব।‘

‘দিদি আজ কিন্তু আপনাকে আমার বাসায় যেতে হবে।‘

‘আজ আমি একটু ব্যস্ত। অন্য আরেকদিন যাব।‘ 

‘না না দিদি। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে আপনাকে আমার বাড়ি নিয়ে যাব। আমার বউ আর মেয়েকে আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। আপনার কথা ওদের অনেক বলেছি।‘

আমি আরও দ্বিধান্বিত হয়ে গেলাম। আমি জীবনে কোন স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করি নি যে, আমার অগণিত ছাত্রছাত্রী থাকবে, কাউকে চিনব আবার কাউকে চিনব না। কে এই লোক? আমি তার জীবনে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যে বউ ছেলেমেয়ের কাছে আমার গল্প বলা হয়েছে। তাদের সাথে আমাকে পরিচয় হতে হবে।  

আমি বললাম, ‘দেখুন আজ আমি সত্যিই ব্যস্ত। আরেকদিন যাব।‘

লোকটি অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দিদি আপনি আমাকে আপনি করে বললেন? আপনি তো আমাকে পর করে দিলেন।‘

আর ভদ্রতা করতে পারলাম না। সরাসরি বলেই বসলাম, ‘আসলে তোমাকে আমি ঠিক চিনতে পারছিনা।‘ লোকটির মুখখানি অন্ধকার হয়ে গেল। বলল, ‘দিদি আমি আলম। প্রাইমারি স্কুলের সেই আলম।‘ আমি আমার প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত সব ছেলেদের চেহারা মনে করতে চেষ্টা করলাম। কারো সাথেই এই লোকের চেহারার বা নামের মিল খুঁজে পেলাম না।  

তবে সেটা আর লোকটিকে বললাম না। অন্যদিকে কেন জানি লোকটির প্রতি আমার কৌতূহলও বেড়ে যাচ্ছিল।

বললাম, ‘তোমার বাড়িটা যেন কোথায়?’

‘এরই মধ্যে ভুলে গেছেন? শিমুলতলা।‘   

‘এখান থেকে তো বেশ দূর।‘ 

‘দূর কোথায় ! চলেন রিক্সায় করে আপনাকে নিয়ে যাব।‘

একজন অপিচিত লোকের সংগে এক রিক্সায় যাব আমার জন্য সেটা কল্পনারও অতীত। বললাম, ‘না না রিক্সা লাগবে না। চল হেঁটেই যাই।‘

লোকটিকে আমার খুব সোজা-সরল মনে হল। কোন রকম দুরভিসন্ধি আছে বলে মনে হল না। তাছাড়া পরিচিতি এলাকার ভেতর দিয়ে হেঁটে পরিচিত এলাকার এক বাড়িতে যাব, তাই ভয়ও করল না। ভাবলাম গিয়ে দেখিই না কি হয়।

এলাকাটার পরিবর্তন চোখে পড়ার মত। প্রায় বিশ বছর আগে এই রাস্তায় আসা হয়েছিল। তখন ছিল মেঠো পথ, এখন শিমুল্তলার অলিগলি সবটাই পিচঢালা। গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িই পাকা। লোকটির বাড়ির কাছে আসতেই লোকটি আবার বলল, ‘আপনাকে দেখে আমার বউ আর মেয়ে যে কি খুশি হবে, দেখলেই বুঝবেন।‘

আধাপাকা চৌচালা ঘর। সিঁড়িতে দুই জোড়া স্যান্ডেল দেখে আমি স্যান্ডেল খোলার চেষ্টা করতেই আলম অপরাধির মত আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি করছেন দিদি? স্যান্ডেল খুলতে হবে না।‘ আমি ঘরে প্রবেশ করতেই আলম নিজে স্যান্ডেল খুলে ঘরে ঢুকল।  

প্রধান দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেই বারান্দা, ভেতরে দুটি কামরা দেখা যাচ্ছে। আলম ভেতরে চলে গেল। বারান্দায় বেশ কতগুলো ছবি বড় করে বাঁধানো। হঠাৎ একটা ছবিতে আমার চোখ আটকে গেল।  চারজন শিশু নাচের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে দুজন মেয়ে আর পেছনে দুজন ছেলে। ছবিটা দেখে ২৫ বছর আগেকার হৃদয়গ্রাহী কিছু স্মৃতি এক নিমিষে আমার কল্পনায় এসে হাজির হল। কার বাড়িতে আমি দাঁড়িয়ে আছি সেটা বুঝতে আর বাকি রইল না। পাশের আরেকটা ছবিতে ছোট্ট আলমের পাশে আমি দাঁড়িয়ে। এরই মধ্যে আলম তার বউ আর মেয়েকে নিয়ে আমার সামনে হাজির। আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে কেমন করে এই বাড়িতে আমি খালি হাতে এলাম। আলমের বউ আমার পা ছুঁয়ে সালাম করল। এরপর মেয়ে। আমি তড়িৎ ভেবে ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে আলমের মেয়ের হাতে গুঁজে দিলাম। টাকা দেয়াতে আলমের সেই কি অভিযোগ। হ্যাঁ আলমের চরিত্র বা ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী তার এভাবে অনুযোগ করাটাই স্বাভাবিক। কেন যে আলম এখনো কাঁদেনি এটাই আমার জন্য অবাক হওয়ার ছিল।  

আলমের বউয়ের নাম সুমি। মেয়ে নাবিলা ক্লাশ সিক্স-এ পড়ে। বেশ চটপটে। আলমের মেয়ের সাথে আমার আলাপ জমে গেল। আলম বউকে খাবারের ব্যবস্থা করতে বলল। আমি না করলাম না। কারণ না করে কোন উপায় নেই। চা আমাকে খেতেই হবে। কারন আমি যে আলম ভাইয়ের বাড়িতে এসেছি।

আলম ভাই বলছি বলে অবাক হচ্ছেন? আলম আমাকে দিদি বলে পা ছুঁয়ে সালাম করার পরও কেন আমি তাকে ভাই বলছি?  

আমি তখন সবেমাত্র এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে হোস্টেল থেকে গ্রামে ফিরেছি। লেখাপড়া নেই, প্রচুর অবসর। ঠিক তখনই আমাদের গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের জুবিলী অনুষ্ঠান। আমাকে দেয়া হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখভালের দায়িত্ব। দেখভাল বলতে স্কুলের শিশুদের নাচ-গান-আবৃত্তি শেখাতে হবে, প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, অতিথিদের বক্তব্যের মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সাজাতে হবে একই সাথে পুরো অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতে হবে।

স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী আমি। খুব উৎসাহ এবং আগ্রহের সাথে দায়িত্ব নিলাম। অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াত পরম শ্রদ্ধেয় আর্চ বিশপ মাইকেল রোজারিওসহ কয়েকজন বিশপ, ফাদার, সিস্টার, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান যথেষ্ট সুন্দর, গোছালো ও অর্থপূর্ণ হওয়া চাই। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আমার উপর ভরসা করে আছেন যে আমি একটা রুচিশীল উপভোগ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারব।

আমার সাথে সহযোগিতায় ছিলেন আমার এক সহপাঠী ও বন্ধু শেলি। অনুষ্ঠানের এক মাস আগে দুজন মিলে আয়জন শুরু করে দিলাম। স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর দুইজন ছেলে আর দুইজন মেয়ে নিয়ে একটা নাচের সিদ্ধান্ত নিলাম।

মেয়ে দুইটি খ্রিস্টান, তাদের মোটামুটি নাচ সম্পর্কে ধারণা আছে। কিন্তু ছেলে দুইটিকে নিয়ে হল মুশকিল। দুজনের একজন হিন্দু নাম রিপন আরেকজন মুসলিম আর সেই ছেলেটিই আজকের এই আলম ভাই। এই আলম ভাই স্কুলের সব চেয়ে সিনিয়র। পঞ্চম শ্রেণীতে তিনবার ফেল করে পুরো স্কুলে ভাই বনে গেছে। সবাই তাকে এক নামে ডাকে আলম ভাই বলে। কোন কোন শিক্ষক-শিক্ষিকাও দুষ্টামি করে তাকে আলম ভাই ডাকতেন। তাই আমি আর শেলিও তাকে আলম ভাই বলেই ডাকা শুরু করলাম।  

আলমভাই সোজা-সরল এবং অতি উৎসাহি। আবার কিছুটা আবেগপ্রবণও। একটুতেই সে রাগ করে আবার তার চোখে জল চলে আসে।   

যাই হোক, এই দুই ছেলেকে নাচাতে গিয়ে পড়লাম মহা ঝামেলায়। এদের হাত নড়ে তো পা নড়ে না আবার পা নড়ে তো হাত নড়ে না। এদিকে অনুষ্ঠানের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী। মেয়ে দুজনের নাচ চমৎকার হচ্ছে কিন্তু ছেলে দুজনের নাচ কি আর বলব!

অনুষ্ঠানের দুইদিন বাকি। ছেলে দু’জনকে বলা হল আজ নাচতে না পারলে তোমাদের নাচ বাদ। কেননা মেয়ে দুটি আবার আরেকটা নাচে অংশ নিবে তাই তারাও দুই ছেলের সাথে নাচতে খুব বেশি আগ্রহী না। না, তাদের নাচের কোন অগ্রগতি নেই। আমার মনে হল এই নাচটা অনুষ্ঠানে রাখলে পুরো অনুষ্ঠানের সৌন্দর্যটাই মাটি হয়ে যাবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে বলার পর তিনিও নাচটিকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিলেন।  

আগামিকাল অনুষ্ঠান। সকালে আলম ভাইয়ের মা প্রধান শিক্ষিকার সাথে দেখা করতে স্কুলে গেলেন। পুরো স্কুল মাঠে কাজ চলছে। প্যান্ডেল সাজান হচ্ছে, মাইক লাগান হচ্ছে, ডেকোরেটরের চেয়ার সাজান হচ্ছে। প্রধান শিক্ষিকা নানান কাজে ব্যাস্ত। আলমের মা সারা সকাল বসে থেকে দুপুরে প্রধান শিক্ষিকার সাথে কথা বলার সুযোগ পেলেন। প্রধান শিক্ষিকা আমার সাথে কথা বলার জন্য আলমের মাকে পরামর্শ দিলেন। এদিকে আমি আর শেলি গেছি মার্কেটে কেনাকাটা করার জন্য। দুপুর থেকে আলমের মা আমাদের বাড়িতে বসে থেকে সন্ধ্যার একটু আগে বাড়ি চলে গেলেন। আলমের মা চলে যাওয়ার পরই আমরা বাড়ি  ফিরলাম। ফিরে মায়ের কাছে শুনলাম আলমের মা এসেছিলেন যেন আলমদের নাচটা কালকের অনুষ্ঠানে রাখা হয় সেই অনুরোধ করতে।   

আমার একটু মায়া হলেও পরের দিনের প্রস্তুতি, স্ক্রিপ্ট লেখা নিয়ে আমিও ব্যস্ত হয়ে পরলাম। রাতে খাবার পর সাড়ে নয়টার দিকে আমাদের ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। সাত আটজন ছেলে হারিকেন, টর্চ হাতে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে। এত রাতে আমার কাছে আসার কারণ হচ্ছে-  

আলম ভাই সকালে তার মাকে পাঠিয়েছিল তার নাচটা রাখার অনুরোধ জানাতে। আমাদের কারো সাথে মায়ের কথা না হওয়ায় বিকেল থেকে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে ওড়না নিয়ে বসে আছে আগামিকাল তাকে অনুষ্ঠানে নাচতে দেয়া না হলে সে ফাঁস নেবে। কেননা আলমের নাচ দেখতে ঢাকায় থাকা তার বড় দুইভাই ছুটি নিয়ে গ্রামে আসবেন। ছোটভাই নাচবে বলে আলমের ভাইয়েরা তাদের কয়েকজন কলিগকে সাথে করে নিয়ে আসবেন এবং ছবি তোলার জন্য ঢাকা থেকে ক্যামেরা ভাড়া করে আনবেন। এখন যদি আলমের নাচ না হয় তবে সে লজ্জায় অপমানে কাউকেই আর মুখ দেখাতে পারবে না। তাই সে ফাঁস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলমের ভাইয়েরা কিছুক্ষণ আগে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরেছেন। এসে ছোট ভাইয়ের কাণ্ড দেখে আমার কাছে ছুটে এসেছেন।

আমি তো পুরো ঘটনা শুনে ‘থ’!   

আলমের ভাইয়েরা এসেছেন আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে। আমার মুখে যদি আলম শুনে যে কাল সে নাচতে পারবে তবেই সে তার সিদ্ধান্ত বদলাবে। পরিস্থিতি এমন ছিল যে জানুয়ারি মাসের ওই শীতের রাতে আলমদের বাড়ি যেতে বাধ্য হয়েছিলাম।  

আমি, শেলি আর আমাদের দুজনের মা রাত সাড়ে দশটায় একদল ছেলের সাথে আলমদের বাড়ি রওনা হলাম। আলমের মা দরজার সামনে বসে কাঁদছেন। আমি গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিলাম, আলমকে ডাকলাম। কিন্তু আমি তাকে পরের দিন নাচার প্রতিশ্রুতি না দিলে সে দরজা খুলবে না।

আমি আলমকে প্রতিশ্রুতি দিলাম, ‘আলম ভাই কাল তুমি নাচবে।‘  

আলম দরজা খুলে বেরিয়ে এল। আলমের ভাইদের সে কি আনন্দ উল্লাস। সারাদিন না খাওয়া, ক্লান্ত আলমকে তারা কোলে তুলে শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে আবার ধরে হৈ হৈ করতে লাগল।   

পরের দিন আলম ভাইয়ের নাচ দেখার জন্য ওদের এলাকার প্রায় শ’পাঁচেক মানুষ স্কুল প্রাঙ্গনে হাজির। নাচটা অনুষ্ঠানের একেবারে শেষে রাখলাম। আমি ওদের নাচের ঘোষণা দিলাম তবে সন্দেহ ছিল নাচটা কি যে হবে!

কিন্তু অবাক ঘটনা হচ্ছে, নাচটা শুরু হতেই আলমের এলাকার ছেলেদের শিস আর হাততালিতে পরিবেশ পুরোটাই মুখরিত হয়ে উঠল। নাচ কি হল সেটা কেউই গুরুত্ব দিল না কিন্তু একটা নাচ হচ্ছে আর মানুষ সেটাকে আনন্দ, উৎসাহ, আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করছে সেটাই মুখ্য হয়ে গেল। ওদের নাচ দেখে উল্লাস করে নি এমন একটা দর্শক ছিল না। দর্শকদের মাতামাতি দেখে আলমসহ বাকি তিনজনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নাচটা করে গেল। দেখা গেল, জুবিলীর পুরো অনুষ্ঠানে আলম ভাইদের নাচটাই ছিল দর্শকদের কাছে চরম উপভোগ্য ও বিনোদনে ভরপুর।  

সেই থেকে আলম ভাই আর তার পরিবার আমার প্রতি আন্তরিক। তাদের ধারণা আমার জন্যই আলম স্টেজে নাচার বিশাল একটা সুযোগ পেয়েছে, এলাকায় তার নাম হয়েছে, সবার ভালবাসা পেয়েছে। আলমের জীবনে সেই নাচটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ যা নিয়ে সে এখনও গর্ব করে।  

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.