Header Ads

মানবতা এখনো বেঁচে আছে

  

পেট্রোল লাইন


শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিশ্বের সবাই কমবেশি অবগত। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অপ্রতুলতা এখন চরমে। চাল-ডালসহ খাদ্যদ্রব্য অল্প বিস্তর যা- পাওয়া যাচ্ছে সেসবের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। যা সাধারনের সামর্থের বাইরে। সংসার সামলাতে সবাই যেন হিমহিম খাচ্ছেন। এই মুহুর্তে মাত্র এক মাসের খাবার মজুত রয়েছে দেশটিতে। এইসব কিছুর মুলে রয়েছে ডলারের ঘাটতি। ডলার নেই তাই প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করা যাচ্ছে না, যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শ্রীলঙ্কার আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে পর্যটন শিল্প। করোনা মহামারিতে এই শিল্লে ধ্বস নামে। অন্যদিকে চীনের কাছ থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়ে বিলাসবহুল অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাসায়নিক সারের বিকল্পে সরকারের আর্গানিক সারের অদূরদর্শী প্রকল্পের কারণে খাদ্য উৎপাদনে বিরাট ঘাটতি যাতে ধানসহ খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে এক তৃতীয়াংশে। সাথে পরিবারতান্ত্রিক সরকারের দুর্নীতি তো রয়েছেই।

বিদ্যুৎ, গাস, পেট্রোল, ডিসেলসহ সকল প্রকার জ্বালানীর অভাব পৃথিবীর যে কোন দেশের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। গ্যাসের দোকানে লাইন, পেট্রোল পাম্পে লাইন, কেরোসিনের দোকানে লাইন, শুধু লাইন আর লাইন। রাস্তায় মাইলের পর মাইল লাইন। অভুক্ত অবস্থায় / ৪দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে হয়তো মিলছে জ্বালানীর তেল। শুধুমাত্র নিম্ন আয়ের মানুষই নয়, এই অভিজ্ঞরতার মুখমুখি উচ্চবিত্তরাও। অনেকে এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হয়ে পড়ছেন অসুস্থ, পর্যন্ত মৃত্যুও হয়েছে ১০ জনের।   যেন দুর্বিসহ চিত্র। তবুও মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, নয় তো পুরো পরিবারকে উপোষ থাকতে হবে।

অন্যদিকে দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকার কারনে ছোটছোট ব্যাবসা-বাণিজ্যসহ বড়বড় কলকারখানা এবং উৎপাদন সবই বন্ধ থাকছে। গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে ছোটবড় রেস্টুরেন্ট, বেকারি, কনফেকশনারিসহ সব রকম মুখরোচক রাস্তার খাবার। কেবলমাত্র খাবারই নয়, হাসপাতালে ওষুধ নেই, লেখাপড়ার জন্য পর্যাপ্ত কাগজ নেই। জ্বালানী সংকটের কারনে ডাক্তার-রোগী, ছাত্র-শিক্ষক কিংবা সাধারারন জনগণ কেউই নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেনা। ফলে চিকিৎসা শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

জ্বালানী সাশ্রয় করতে জুন মাসের শুরুতে সরকার সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে শনিরবির সাথে শুক্রবারও ছুটি ঘোষণা করেছে। সেই সাথে প্রত্যেক কর্মীকে পালাক্রমে সপ্তাহে মাত্র দিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার আদেশ দিয়েছে। শহরাঞ্চলের স্কুলে চলছে ছুটি এবং গ্রামাঞ্চলে সপ্তাহে স্কুল ৩দিন খোলা। করোনা মহামারির সেই দিনগুলির মতোই চলছে অনলাইন ক্লাস। মানুষজন কাছে পিঠে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে, নয়তো পুরোপুরি ঘরবন্দি।

গত একমাস আগে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হলে গবেষণায় পাওয়া যায় অসুস্থ শিশুদের ১৭ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। সম্প্রতি এক জরিপে প্রকাশ পেয়েছ, দেশের প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৭টি পরিবার তাদের খাদ্যের বাজেট সিমিত করেছে।

সবার ঘরেই অভাব। এই অভাবের মধ্যেও মানবতা এখনো যে বেঁচে আছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। সরকারের বড়বড় মন্ত্রীমিনিস্টাররা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকলেও সাধারান মানুষ কিন্তু একে অপরের কথা ভুলে যাচ্ছে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভুলে মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছে, বাড়িয়ে দিচ্ছে সহযোগিতার হাত। অভুক্ত মানুষ যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে তখন সামর্থবান মানুষ অপেক্ষামান মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছে। বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পের মালিকরাও দিচ্ছেন খাবার। চালের অভাবে ভাত দিতে না পারলেও দিচ্ছেন বিকল্প খাবার।

শ্রীলঙ্কার জনগণ প্রধান খাদ্য হিসেবে শুধুমাত্র ভাতের উপর নির্ভরশীল নয়। মিষ্টি আলু, শিমুল আলু, কাঁঠাল, দেল (এক প্রকার সবজি আছে যা বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা কাঁঠালের মত, এতে ভাতের সমপরিমান শর্করা রয়েছে) সেদ্ধ করে খেয়ে থাকেন। আর এসব কেবলমাত্র বাণিজ্যিক ভাবেই উৎপাদন হয় না, প্রত্যেকটি বাড়ির উঠানেই এসবের ফলন হয়। এসব খাবারের পাশাপাশি চা, সরবত যে যা পারছেন, নিজেদের যা আছে তা দিয়েই রোদে পোড়া, মেঘ-বৃষ্টিতে ভেজা অভুক্ত মানুষগুলোর মুখে তুলে দিচ্ছেন। এই অভাব আর নাই-য়ের দুর্সময়ে যা এক বিরাট এবং বিরল দৃষ্টান্ত। অভাবের এই চরমমুহুর্তে সহভাগিতার এই চিত্র সত্যি অবাক করে। মনে হয় আমার বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন হলে মানবতার এই চিত্র কি ঠিক এমনই হত?

একদিকে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছেই, যদিও সরকারের সেইদিকে কোন ব্রুক্ষেপই নেই। তবে সাধারন মানুষের আশা বিশ্বাস এমন দিন খুব বেশিদিন থাকবে না। খুব শিগ্রই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। আবার সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে দক্ষিন এশিয়ার মুক্তা খ্যাত শ্রীলঙ্কা।

প্রতিবেশীর সকল পাঠকদের প্রতি শ্রীলঙ্কার জন্য বিশেষ প্রার্থনার অনুরোধ রইল।

  

মুরগীর রান- কি আছে এতে, সম্মান নাকি পেটুকটা 

 আপনি কি খ্রিষ্টান?  

 

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.